অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ব্যাংকের ভল্ট থেকে স্বর্ণ গায়েবের পর এবার খনিজ সম্পদ কয়লা গায়েবের ঘটনা ঘটেছে। বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালের প্রথমে সরকার গঠনের পর থেকেই দেশে অদৃশ্য ও গায়েব হওয়ার সংস্কৃতি চালু হয়।
নিজেদের শাসন দীর্ঘস্থায়ী করার লক্ষ্যে সরকার প্রথমেই বিরোধীদলকে নির্মূলের টার্গেট নেয়। এ লক্ষ্যে সারাদেশে বিরোধী দলের জনপ্রিয় নেতাকর্মীদের বেছে বেছে রাতের আধারে বাসা বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গায়েব করে দিয়েছে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এখন পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের কয়েক হাজার নেতাকর্মী নিখোঁজ রয়েছে। পুলিশ পরিচয়ে একবার যাকে তুলে নিয়ে গেছে সেই গায়েব হয়ে গেছে।
বিশেষ করে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী, ঢাকার কাউন্সিলর চৌধুরী আলম, জামায়াতের সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযমের ছেলে সাবেক সেনা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আমান আযমী ও মীর কাশেম আলীর ছেলে ব্যারিস্টার আরমান এখন পর্যন্ত অদৃশ্য আছে। ডিবি পরিচয়ে তাদেরকে তুলে নিলেও সরকার তাদের পরিবারকে কোনো সন্ধান দিচ্ছে না। এই ভাবেই বিরোধীদলের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে সরকার গায়েব করেছে।
বিরোধীদলের হাজার হাজার নেতাকর্মীদেরকে গায়েব করার পর শেখ হাসিনা হাত দিয়েছে দেশের অর্থনৈতিক সেক্টরে। প্রথমেই দেশের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সেক্টর পুজিবাজার থেকে গায়েব করেছে লাখো কোটি টাকা। এই বিশাল অংকের টাকা গায়েবের ফলে নি:শ্ব হয়ে গেছে কয়েক হাজার বিনিয়োগকারী। সহায় সম্বল হারিয়ে কয়েকজন আত্মহত্যাও করেছেন।
এরপর শেখ হাসিনা গায়েব করেছে বিদ্যুৎ খাত থেকে কয়েক’শ কোটি টাকা। এর পেছনে মূল ভুমিকা পালন করেছিল শেখ হাসিনার ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয়। মাছরাঙা ও এটিএন বাংলার রিপোর্টার সাগর-রুনির কাছে এ সংক্রান্ত তথ্য থাকায় তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে। আর শেখ হাসিনার ছেলে জয়ের অর্থ গায়েবের তথ্য থাকায় মাহমুদুর রহমান ও শফিক রেহমানকে আটক করা হয়েছিল।
বিদ্যুতের পর শেখ হাসিনা হাত দিয়েছে ব্যাংকে। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি গেছে মোটা অংকের টাকা। এই টাকা সরাসরি শেখ হাসিনার নির্দেশে ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমানের সহযোগিতায় চুরি করেছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে বেরিয়ে এসেছে যে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের লোকজন এ চুরির সঙ্গে জড়িত।
এরপর গত সপ্তাহে গায়েব হয়ে গেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রাখা সোনা। সোনা গায়েবের ঘটনায় সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়ে গেছে। শোনা যাচ্ছে এ ঘটনা ধামা চাপা দিতে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নিজে কলকাঠি নাড়ছেন। পরিস্থিতি খারাপ দেখে গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী ব্যাংকের গভর্নর এনবিআরের মহাপরিচালককে গণভবনে ডেকে নিয়ে বৈঠক করেছেন।
সোনা গায়েবের ঘটনার রেশ এখনো কাটেনি। কিন্তু এরই মধ্যে আবার দিনাজপুরে কয়লা গায়েবের ঘটনা ঘটেছে।
জানা গেছে, দিনাজপুর বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে যে যার মতো কয়লা বিক্রি’র টাকা আত্মসাৎ আর দুর্নীতির মহোৎসব চালিয়ে যাচ্ছে। খনি থেকে উত্তোলনকৃত ১ লাখ ৪২ হাজার টন কয়লা ইতোমধ্যে গায়েব হয়ে গেছে। ২২৭ কোটি টাকার বর্তমান বাজার দরের কয়লা হজম করে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির (বিসিএমসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও একজন মহাব্যবস্থাপককে প্রত্যাহার করা হয়েছে। সেই সাথে আরও একজন মহাব্যবস্থাপক ও উপ-মহাব্যবস্থাপককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে কয়লা খনি কোম্পানির নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলা কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে বেশ তোলপাড়ও চলছে।
রাজনীতিক বিশ্লেষকসহ সচেতন মানুষ মনে করছেন, একে একে সবই গায়েব হয়ে যাচ্ছে। এখন শুধু দেশটা গায়েব হওয়ার বাকী আছে। দেশের সার্বভৌমত্বও যেকোনো সময় গায়েব হয়ে যেতে পারে।