অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
চলতি বছরের ১ জানুয়ারী থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৫৯২ টি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ধর্ষণের এমন নজিরবিহীন রেকর্ড আর কখনো দেখা যায়নি। দেশের প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার ও বিরোধী দলীয় নেতার আসন মহিলারা অলংকৃত করেছেন এটা দাবী করে সরকার নারীর অগ্রগতি ও ক্ষমতায়নের ফাঁকা বুলি আওড়ালেও বাস্তবতা হলো, বর্তমান সময়ের মত এতটা সম্ভ্রম ঝুঁকিতে দেশের সাধারন নারীরা ইতোপূর্বে আর কখনোই থাকেননি।
এই ৫৯২ জন হতভাগ্য নারীর মধ্যে ৯৮ জন প্রাপ্ত বয়স্ক নারী ও শিশু রয়েছেন যারা কিনা গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ২৯ জনকে ধর্ষণ করার পর বর্বরভাবে হত্যা করা হয়েছে। আর ৬১টি ধর্ষণের ঘটনা আছে যেখানে নারীরা কোনমতে পালিয়ে গিয়ে নিজেদের জীবন বাঁচিয়েছেন।
এর পাশাপাশি ৬৫ জন নারী ও শিশুকে নানাভাবে যৌন হয়রানি করা হয়েছে। চাঞ্চল্যকর এসব তথ্যই উঠে এসেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের একটি প্রতিবেদনে- যা প্রকাশিত হয়েছে গতকাল সোমবার। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ হলো মহিলাদের অধিকার রক্ষায় কাজ করে আসছে এমন একটি সংগঠন। গত জানুয়ারী থেকে বিভিন্ন পত্রিকার থেকে প্রাপ্ত খবর ও তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এই প্রতিবেদনটি তৈরী করেছে। তবে সংস্থাটি নিজেরাও বলছে, এই তথ্যই পুর্নাংগ নয়। আরো অনেক ধর্ষনের ঘটনা শহরে বা গ্রামের বিভিন্ন স্থানে ঘটছে যেগুলো পত্রিকাতেও তুলে আনা সম্ভব হয়নি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী এই ৬ মাসের মধ্যে ২ হাজার ৬৩ জন নারী ও শিশু নানা ধরনের যৌন সহিংসতা বিশেষ করে ধর্ষণ, ইভটিজিং এবং যৌতুকের দাবীতে শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এসিড নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে ২০টিরও বেশী। যার মধ্যে ২ জন পরবর্তীতে মারাও গেছেন। আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়েছে ৪৫ জন নারীর শরীরে। যার মধ্যে ১০ জন পরবর্তীতে মারা গেছেন। এই সময়ের মধ্যে ৭৭টি অপহরনের ঘটনা ঘটেছে। ১৩ জন নারীকে পাচার করা হয়েছে যাদেরকে পরবর্তীতে বিভিন্ন বেশ্যালয়ে খুঁজে পাওয়া গেছে।
নানা কারনে হত্যা করা হয়েছে ২৬৮ জন নারী ও শিশুকে। হত্যা করার চেষ্টা হওয়ার কোনমতে বেঁচে ফিরে এসেছে ২৭ জন। গৃহস্থালী কাজ করে এমন ১৩ জন শিশু কন্যা ও মহিলা শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে ৩ জনকে হত্যা করা হয়েছে আর অপমান সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন দুজন। যৌতুকের জন্য নির্যাতন করা হয়েছে ১১৩ জন নারীকে যার মধ্যে ৫১ জনকে অত্যাচার করে হত্যাও করা হয়েছে।
ইভটিজিং এর শিকার হয়েছেন ৯০ জন নারী যার মধ্যে ১১ জন পরবর্তীতে আত্মহত্যা করেছেন। এছাড়া আরো ভিন্ন ভিন্ন কারনে আত্মহত্যা করেছেন ১৫৪ জন নারী। ৯ জন আত্মহত্যা করার উদ্যেগ নিয়েছেন আর ১৫ জনকে আত্মহত্যা করার জন্য নানাভাবে প্রনোদনা দেয়া হয়েছে।
বাল্য বিবাহের শিকার হয়েছে ৮৪ জন আর অজ্ঞাত কারনে মারা গেছে আরো ১৮৮ জন নারী ও শিশু। ১৭১ জন নারী ও শিশুকে শারীরিকভাবে হয়রানি করা হয়েছে। পুলিশের হাতে নির্যাতিত হয়েছে ৩ জন নারী আর ২০ জন নারীকে জোরপূর্বক বিয়ে দেয়া হয়েছে।