জুনায়েদ আব্বাসী
ছাত্রলীগ বাংলাদেশে সবসময়ই এক আতঙ্কের নাম। বর্তমান সময়ে সেটা নতুন করে এবং নতুন উদ্দমে সামনে এসেছে। কোটা আন্দোলনকারীদের উপর একাধারে হামলা চালিয়ে তারা আহত করেছে বেশ কয়েকজনকে। এরমধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তরিকুল ইসলাম তারেককে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে পায়ের দুটি হাড় ভেঙে দিয়েছে ছাত্রলীগ। তারেক এখন হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।
কোটা আন্দোলনকারীদের উপর ছাত্রলীগের অব্যাহত এই হামলায় যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ ইন্ধর রয়েছে সেটাও মোটামুটি পরিস্কার। কোটা সংস্কার আন্দোলন দমাতেই ছাত্রলীগকে ব্যবহার করছেন শেখ হাসিনা।
কোটা আন্দোলন দমাতে কয়েকদিন যাবত ছাত্রলীগ যা করছে তা যেন শেখ মুজিবের আমলের সেই বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। গুম, খুন, হত্যা, অপহরণের মাধ্যমে শেখ মুজিব তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপরীতে যুবলীগ-ছাত্রলীগ, রক্ষীবাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনী গঠন করেছিলেন। বলা যায়, বাংলাদেশে এখন শেখ মুজিবের স্বপ্ন পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন হয়েছে।
শেখ মুজিবের আমলে মাঝে মধ্যে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা খুন-হত্যা থেকে বিরত থাকলেও তার কন্যা শেখ হাসিনার আমলে তারা কোনো প্রকার বিরতি দেয়নি।
১৯৭২-৭৫ সালে ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড কেমন ছিল তা তৎকালীন একটি ছোট্ট ঘটনা থেকে সহজেই বোঝা যায়। একদিন সকালে পত্রিকা দেখে অবাক হয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ফোন করে বলেন, কী ব্যাপার! গতকাল সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি হঠাৎ করে এত ভালো হলো কীভাবে? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তখন তাকে জানালেন, গতকাল ঢাকায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের জাতীয় সম্মেলন ছিল।
বিষয়টি পরিষ্কার যে, একদিন তারা ব্যস্ত থাকায় সেদিন সারাদেশে কোনো অপরাধ কর্মকাণ্ড ঘটেনি। অর্থাৎ তারা ঢাকায় জাতীয় সম্মেলনে ব্যস্ত থাকায় একদিনের জন্য হলেও জনগণ ছাত্রলীগের অত্যাচার, নির্যাতন আর সন্ত্রাস থেকে মুক্তি পেয়েছিল।
তবে লক্ষণীয় বিষয় হলো, এখন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজে ব্যস্ত থাকলেও তাদের খুন, হত্যা, ধর্ষণ, চুরি ডাকাতি, ছিনতাই বন্ধ হয়নি।
অপকর্মের নেশা ছাত্রলীগকে এমনভাবেই পেয়েছে যে, হাজারো সমালোচনাও তাদেরকে দমাতে পারেনি। কোটা সংস্কারের মত একটি যৌক্তিক আন্দোলনে ছাত্রলীগ যেভাবে নৃশংস হামলা চালিয়েছে এবং সরকার যেভাবে তাদেরকে ইন্ধন যুগিয়েছে, তাতে এ কথা স্পষ্ট যে রাষ্ট্র একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। আর জনগণ মনে করছে, এই ছাত্রলীগই একদিন শেখ হাসিনার জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়াবে।