কক্সবাজার জেলার চারটি আসনকে বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছেন ২০ দলীয় জোট প্রধান খালেদা জিয়া। কক্সবাজার জেলার চার আসনের মধ্যে বিএনপিকে তিনটি ও জামায়াতকে একটি আসন বণ্টন করে দিয়েছেন তিনি। গত ৩০ অক্টোবর কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের সময় স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিজের মনোভাবের কথা জানিয়ে দেন খালেদা জিয়া। এই জেলার বিএনপির দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলে বিএনপি চেয়ারপারসনের এই সিদ্ধান্তের কথা জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘খালেদা জিয়া কক্সবাজারে থাকুন বা না থাকুন, জাতীয় নির্বাচন নিয়ে তো মানুষের মধ্যে আলোচনা আছেই। বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী দল। ফলে দলের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা থাকবে, পর্যালোচনা হবে; এটাই স্বাভাবিক। নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্রের বাহন। এখানে রিউমার ছড়ানোর সুযোগ নেই।’
বিএনপির চেয়ারপারসনের একটি সূত্র জানায়, কক্সবাজারে সফরের সময় খালেদা জিয়া সেসব স্থানে বিশ্রাম নিয়েছেন, সে এলাকাগুলোয় নির্বাচনের প্রার্থীর বিষয়ে এক ধরনের বার্তা তিনি দিয়েছেন। যেসব প্রার্থী স্থানীয়ভাবে অব্স্থান পোক্ত করেছেন, তাদের প্রতি ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছেন।
বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, সারা দেশের নির্বাচনি আসনে কারা যোগ্য, এ নিয়ে চেয়ারপারসনের স্পষ্ট ধারণা রয়েছে। সেক্ষেত্রে খালেদা জিয়া আগ্রহীদের মধ্যে কাউকে-কাউকে ইঙ্গিতও দিয়েছেন, সেটি একেবারেই ব্যক্তিগত-পর্যায়ে। ওই নেতা আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়া কক্সবাজার সফরের সময় চট্টগ্রাম, ফেনী ও কক্সবাজার জেলার নির্বাচনি আসনগুলোয় অনেক নেতাকেই প্রস্তুতি নেওয়ার পাশাপাশি অন্য আসনগুলো নজরদারিতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
কক্সবাজার জেলার একটি আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘৩০ অক্টোবর ত্রাণ দিয়ে শহরের সার্কিট হাউজে আগ্রহী প্রার্থীদের সঙ্গে ব্যক্তিগত পর্যায়ে কথা বলেন। ওইসময় খালেদা জিয়া জেলার তিনটিতে বিএনপি ও একটিতে জামায়াতকে নির্বাচনে লড়াই করতে বলেছেন।’
এই জেলার নির্বাচনি আসনের মধ্যে কক্সবাজার-১ আসনে (চকরিয়া-পেকুয়া) বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ বা তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ। সালাহ উদ্দিন আহমেদ ২০১৫ সাল থেকে ‘অনুপ্রবেশে’র দায়ে ভারতের শিলংয়ে কারাবন্দি আছেন। নির্বাচনের আগে তার দেশে ফেরা নিশ্চিত না হলে তার স্থলে স্ত্রী হাসিনা আহমেদকেই মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়টি এগিয়ে রাখা হচ্ছে।
বাংলা ট্রিবিউনকে হাসিনা আহমেদ বলেন, ‘এখনও নির্বাচন নিয়ে সেভাবে কোনও পরিকল্পনা করা হয়নি। এখন সালাহ উদ্দিন আহমেদের দেশে ফেরা, তার মামলা মোকাবিলা নিয়েই বেশি ব্যস্ততা যাচ্ছে।’
একইসঙ্গে হাসিনা আহমেদ মনে করেন, ‘সালাহ উদ্দিন আহমেদ নিজের জীবনের চেয়ে নিজ এলাকাকে প্রাধান্য দিয়েছেন। মানুষের ভালোবাসা তার প্রতি অনেক।’
কক্সবাজার-২ (মহেশখালী ও কুতুবদিয়া) আসনটি জোটসঙ্গী জামায়াতকে ছেড়ে দিয়েছেন খালেদা জিয়া। স্থানীয় সূত্রটি জানায়, এই আসনে বিএনপির কাউকে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়নি। জেলার সাগরদ্বীপের এই আসনটিতে জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য হামিদুর রহমান আযাদ রয়েছেন সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে। মামলা সংক্রান্ত ঝামেলা ছাড়া দল থেকেও তার প্রার্থিতা অনেকটাই নিশ্চিত বলে জানায় নির্বাচনি কাজে যুক্ত জামায়াতের একাধিক সূত্র। এর আগে ২০০৮ সালে এই আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন হামিদুর রহমান আযাদ। ওই বছর সংসদে জামায়াতের দুই জন প্রতিনিধিত্ব করেন। অন্যজন চট্টগ্রাম ১৪ আসন থেকে মাওলানা মুহাম্মদ শামসুল ইসলাম।
কক্সবাজার-৩ (সদর উপজেলা ও রামু উপজেলা) আসনে বিএনপির প্রার্থী প্রায় চূড়ান্ত। এই আসনে দলের মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা সাধারণ সম্পাদক লুৎফুর রহমান কাজল। গত মাসে উখিয়া সফরে খালেদা জিয়া তাকে গ্রিন সিগন্যাল দিয়েছেন বলেও জেলা বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়। বিএনপি প্রধানের কক্সবাজার সফরে যাদের উদ্যোগ নিতে বলা হয়, কাজল তাদের অন্যতম। ত্রাণ দিতে সফরের পুরো কার্যক্রমে তার ভূমিকা চেয়ারপারসনের নির্দেশেই বাস্তবায়িত হয়।
বাংলা ট্রিবিউনকে লুৎফুর রহমান কাজল বলেন, ‘কক্সবাজারে বিএনপি এখন আগের চেয়ে বেশি শক্তিশালী। নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ। চেয়ারপারসনের সফরের পর পুরো জেলায়ই মানুষের মধ্যে ইতিবাচক সাড়া পড়েছে। আমি বিগত সময়ে এই আসন থেকে নির্বাচন করেছি। দল চাইলে আগামীতে নির্বাচন করার আশা রাখি।’
কক্সবাজার-চার আসনে (উখিয়া-টেকনাফ) অনেকটাই নিশ্চিত জেলা বিএনপি সভাপতি ও সাবেক হুইপ শাহজাহান চৌধুরী। কক্সবাজার সফরে খালেদা জিয়া তাকে ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে বিএনপির সূত্রগুলো জানিয়েছে। এই আসনে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রাসেলের নাম শোনা গেলেও তার সম্ভাবনা প্রায় নেই বলেই মনে করেন জেলা বিএনপির একাধিক নেতা। শাজাহান চৌধুরী বিগত ৭৯, ৯১, ৯৬ (তিনমাস) ও ২০০১ সালে নির্বাচিত হয়েছেন এই আসন থেকে। আর ৯৬-এর পরের নির্বাচন ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে হেরে যান তিনি।
নিজের এলাকার বিষয়ে শাজাহান চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মনোনয়ন নিয়ে আমি আশাবাদী। এই সরকারের সময়ে তো কোনও কাজ হয়নি। ১০ বছরে কক্সবাজারে কী হয়েছে, মানুষ জানে। আমাদের সাংগঠনিক প্রস্তুতি ভালো। এখন সুষ্ঠু নির্বাচন হলেই হয়।’
এদিকে, বিএনপির কক্সবাজার জেলার একজন দায়িত্বশীল নেতা জানান, মহেশখালী-কুতুবখালী জামায়াতকে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে, তবে এটা চূড়ান্ত নয়। সালাহ উদ্দিন আহমেদ দেশে ফিরতে পারলে তিনি চকরিয়া-পেকুয়া আসনে নির্বাচন করবেন। আর তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ মহেশখালীতে নির্বাচন করবেন। তবে জোটগত কোনও সিদ্ধান্ত হলে সেটি নাও হতে পারে।’ তবে এই আসন নিয়ে ওই নেতার ভাষ্য, চূড়ান্ত কিছু হয়নি। আমাদেরও সেখানে কাজ করতে বলা হয়েছে।’
তবে ‘আসন ভাগ করে দেওয়ার বিষয়ে কোনও কিছু জানা নেই’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম। তিনি বলেন, ‘কাউকে দলীয় প্রধান প্রস্তুতি নিতে বলেছেন কিনা, এমন তথ্য নেই আমার কাছে।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘নির্বাচনকে সামনে রেখেই কাজ করে বিএনপি। বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। আর আসনভিত্তিক সমঝোতা বা নির্ধারণ করবেন দলের চেয়ারপারসন। এখন এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে কিছু বলতে পারব না।’
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন
Discussion about this post