অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট (আইসিসি) সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে, সম্প্রতি এমন খবর প্রকাশিত হয় বাংলাদেশের প্রায় সকল মিডিয়ায়। সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদ মাধ্যমগুলো এমন খবর প্রকাশ করে।
কিন্তু এই খবরটি আদৌ সত্য নয়। বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ বিচার নিয়ে কোনো প্রকার সন্তুষ্টি প্রকাশ করেনি বলে জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট (আইসিসি)। বাংলাদেশের মিডিয়াতে আইসিসির প্রেসিডেন্ট ও ডেপুটি প্রসিকিউটরের বরাত দিয়ে এমন বিভ্রান্ত খবরের প্রতিবাদ জানানো হয়েছে আইসিসির পক্ষ থেকে।
গত ২৮ জুন বাংলাদেশের মিডিয়াগুলোতে প্রকাশিত সেই খবরে বলা হয়, আইসিসির প্রেসিডেন্ট সিলভিয়া ফার্নান্দেজ ডিগার্মেন্ডি ও ডেপুটি প্রসিকিউটর জেমস স্টুয়ার্ট সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের হেগে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের চলমান বিচার ও রোম সনদ বাস্তবায়নে বাংলাদেশের অঙ্গীকারের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
খবরটিতে আরও উল্লেখ করা হয়, গত ১৭ থেকে ২২ জুন পর্যন্ত প্রধান বিচারপতি নেদারল্যান্ডস সফর করেন। সফরকালে প্রধান বিচারপতি একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের চলমান বিচারের বিষয়ে আইসিসিকে অবহিত করেন। আইসিসি প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের অভিজ্ঞতাকে গুরুত্বপূর্ণ অভিহিত করে বলেন, এটি বিভিন্ন জাতীয় বিচার ব্যবস্থার উন্নতিতে ভূমিকা রাখবে।
কিন্তু ২ জুলাই অনলাইন পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের একটি সংবাদের মাধ্যমে জানা যায়, যুদ্ধাপরাধ বিচারে আইসিসির সন্তুষ্টি বিষয়ক খবরটি আদৌ সত্য নয়। আইসিসির পক্ষ থেকে এই মিথ্যা সংবাদের প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। আইসিসির ভাষ্য, গত জুনে সুপ্রিম কোর্টের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির ওপর ভিত্তি করে ওই বিভ্রান্ত খবর প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে।
আইসিসির প্রতিবাদের কারণে সরকার বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, ‘দি কোর্ট (ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট) একটি নোট ভারবাল (আনুষ্ঠানিক পত্র) দিয়েছে, অত্যন্ত অপমানজনক আমাদের জন্য।’
আইনমন্ত্রী আরও বলেন— ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট (আইসিসি) ওই আনুষ্ঠানিক পত্রে (নোট ভারবাল) সরকারকে জানায়, ‘মাননীয় প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আইসিসি প্রেসিডেন্ট ও ডেপুটি প্রসিকিউটরের বৈঠকের ওপর বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদপত্রে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে প্রকাশিত রিপোর্টের বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করছে আইসিসি।’
নোট ভারবালে আরও বলা হয়, এই রিপোর্টগুলোতে বিভ্রান্তিকরভাবে আইসিসির প্রেসিডেন্ট এবং ডেপুটি প্রসিকিউটরকে উদ্ধৃত করা হয়েছে। তাদের উদ্ধৃত করে বাংলাদেশে চলমান বা আগে হওয়া আন্তর্জাতিক অপরাধ বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশংসা করেছে বা সন্তুষ্টি প্রকাশের খবর ছাপা হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, নোট ভারবালে আরও বলা হয়— ‘বিভিন্ন সংবাদপত্র তাদের এই বিভ্রান্তিকর রিপোর্টের সূত্র হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিকে উল্লেখ করেছে।’
আইনমন্ত্রী আরও জানান— আইসিসি বাংলাদেশের জড়িত কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছে, এ বিষয়ের ওপর প্রেস রিলিজটি যাচাই করে দেখার জন্য। আনিসুল হক বলেন, ‘এটা নিশ্চয়ই বিব্রতকর।’
এদিকে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইট http://www.supremecourt.gov.bd/ এ গেলে দেখা যায় নিউজ স্ক্রোলে সর্বপ্রথম নিউজটিই এ সম্পর্কিত। সেখানে প্রধান শিরোনামে যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রশংসার কথা না থাকলেও বিস্তারিত খবরে বলা হয়েছে, ‘নেদারল্যান্ডস এর হেগ এ অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট রোম সনদ বাস্তবায়নে বাংলাদেশের অঙ্গীকার এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধ এর বিচারহীনতার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানের প্রশংসা করেছে। আইসিসির প্রেসিডেন্ট সিলভিয়া ফার্নান্দেজ ডিগার্মেন্ডি এবং ডেপুটি প্রসিকিউটর জেমস স্টুয়ার্ট সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির সাথে হেগ এ এক আলোচনায় এ প্রশংসা করে।’
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল দেশটির ৪০ বছর আগের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ইসলামপন্থি দল জামায়াতে ইসলামীর ৫ নেতা ও জাতীয়তাবাদি দল বিএনপির ১ জন নেতার ফাঁসি কার্যকর করেছে। ট্রাইব্যুনালটির নামের সাথে আন্তর্জাতিক শব্দ যুক্ত থাকলেও এটি আদৌ আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ছিলো না এবং কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা একে স্বীকৃতিও দেয়নি। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেষ্টি ইন্টারন্যাশনাল ও জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থাসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোও এই ট্রাইব্যুনালকে গুরুতর ত্রুটিপূর্ণ বলে অভিহিত করেছে।
Discussion about this post