বর্তমানে রাজধানীর সবচেয়ে বড় জনস্বাস্থ্য সমস্যা চিকুনগুনিয়া নিয়ে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) এক সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত দুজন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, যে আকারে রোগটি ছড়িয়ে পড়েছে, যত মানুষ এতে আক্রান্ত হচ্ছে, তাতে এটাকে অবশ্যই মহামারি বলতে হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ডিএনসিসির মেয়র আনিসুল হক বলেছেন, চিকুনগুনিয়া মহামারি হোক আর যাই হোক, এর জন্য কোনোভাবেই সিটি করপোরেশন দায়ী নয়। আর বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে মশা মারা তাদের পক্ষে সম্ভব না।
আজ শুক্রবার সকালে গুলশানের ডিএনসিসি কার্যালয়ে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ তথা চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধে ডিএনসিসির নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ সম্পর্কে জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে মেয়র ও ডিএনসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছাড়াও বিশেষজ্ঞ হিসেবে একজন রোগতত্ত্ববিদ ও দুজন কীটতত্ত্ববিদ উপস্থিত ছিলেন।
চিকুনগুনিয়া যেভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, তাতে এটা মহামারি কি না, তা নিয়ে বিতর্ক চলছে। গত বছরের ডিসেম্বর থেকেই ঢাকায় এই ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেওয়ার পর থেকে প্রতি মাসেই আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংখ্যা বাড়ছে। রাজধানীর মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও সাধারণ চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগীর ভিড় বাড়তে থাকে এ বছরের এপ্রিল থেকেই। ভিড় বাড়তে থাকে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও। আক্রান্তদের বড় অংশ শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা। কিন্তু তারপরও সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ, মন্ত্রী কিংবা প্রতিমন্ত্রী—কেউই এটাকে মহামারি বলতে রাজি নন। বরং চিকুনগুনিয়া ছড়িয়ে পড়ার জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ও স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক দুজনই মশা নিধনে সিটি করপোরেশনের ‘ব্যর্থতাকেই’ দায়ী করেন।
আজকের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত বিশেষজ্ঞদের কাছে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্ন ছিল, চিকুনগুনিয়া মহামারি কি না? উত্তরে রোগতত্ত্ববিদ অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান বলেন, চিকুনগুনিয়া যেভাবে ছড়িয়ে পড়েছে, একটি নির্দিষ্ট এলাকার যে পরিমাণ মানুষ এতে আক্রান্ত হচ্ছে, তাতে এটা অবশ্যই মহামারি। তাঁর সঙ্গে সহমত পোষণ করেন কীটতত্ত্ববিদ তৌহিদ উদ্দীন আহমেদ। তবে আরেক বিশেষজ্ঞ কীটতত্ত্ববিদ মুনজুর এ চৌধুরী এ বিষয়ে কোনো মতামত প্রদানে অস্বীকৃতি জানান।
এর পরিপ্রেক্ষিতে মেয়র আনিসুল হক বলেন, ‘মহামারি হোক আর যাই হোক, এর জন্য কোনোভাবেই সিটি করপোরেশন দায়ী না।’ এর আগে এ বক্তব্যের পক্ষে নিজের যুক্তি তুলে ধরে মেয়র বলেন, যে এডিস মশার মাধ্যমে চিকুনগুনিয়া ছড়ায়, তা ড্রেন, ময়লা-আবর্জনা কিংবা জলাশয়ে বংশবিস্তার করে না। এডিস মশা মূলত বাসা-বাড়ির ফ্রিজ ও এসির ট্রে, ফুলের টব, ছাদে জমে থাকা পরিষ্কার পানিতে জন্মায়। এ ছাড়া পড়ে থাকা ভাঙা হাঁড়ি, ক্যান, পরিত্যক্ত টায়ার ও বিশেষ করে নির্মাণাধীন ভবনে ব্যবহৃত চৌবাচ্চা এই মশার বংশবিস্তারের অন্যতম কারণ।
একপর্যায়ে মেয়র বলেন, চিকুনগুনিয়া ছড়িয়ে পড়ার জন্য যেভাবে সিটি করপোরেশনকে দায়ী করা হচ্ছে, সেটার কোনো ভিত্তি নেই। কারণ, মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে মশা মারা সিটি করপোরেশনের পক্ষে সম্ভব নয়। এ ছাড়া ঢাকার এমন অনেকে এলাকা রয়েছে, যেখানে গিয়ে সিটি করপোরেশন মশার ওষুধ ছিটাতে পারে না। চিকুনগুনিয়া নিয়ন্ত্রণে জনগণের সম্পৃক্ততাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তবে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রতি দুঃখ প্রকাশ ও সমবেদনা জানান তিনি।
সূত্র: প্রথম আলো
Discussion about this post