বাংলাদেশের খ্যাতিমান লেখক ও কলামিস্ট ফরহাদ মজহারকে গতকাল পুলিশ উদ্ধার করলেও কারা তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল, সেই রহস্য এখনো উদঘাটন করা যায়নি।
এই ঘটনার তদন্তের ভার দেয়া হয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখাকে।
এদিকে উদ্ধার পাওয়ার পর মি. মজহার এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন । উদ্ধারেরর পর ফরহাদ মজহার আদালতে একটি জবানবন্দী দিলেও এখনো এ ঘটনা নিয়ে মুখ খোলেননি, তার পরিবারের তরফ থেকেও নতুন কিছুই বলা হচ্ছে না।
কিন্তু ফরহাদ মাজহারের মতো একজন ব্যক্তিকে কারা লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতে পারে?
পুলিশ বলছে, ফরহাদ মজহার নিখোঁজ হওয়ার মামলাটি গোয়েন্দা শাখা বা ডিবিকে তদন্ত করবার জন্য গতকালই নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ঢাকায় পুলিশের মুখপাত্র মাসুদুর রহমান বলেছেন , আজ এ সংক্রান্ত ফাইলপত্র ঢাকার আদাবর থানা থেকে ডিবির কার্যালয়ে পাঠিয়েও দেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছেন গোয়েন্দারা।
কিন্তু যে প্রশ্নটি এখন সবার মনে, কে তুলে নিয়ে গেলো মি. মজহারকে? কেনইবা এত পথ পাড়ি দিয়ে তাকে খুলনা নিয়ে গেল? আর সেখানে নিয়ে তাকে ছেড়েই বা দিল কেন?
এ নিয়ে মি. মজহার পুলিশ ও আদালতকে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা থেকে এখন পর্যন্ত যা জানা যাচ্ছে, তিনি কাউকে চিহ্নিত করতে পারেননি।
মি. মজহারের স্ত্রী ফরিদা আক্তার বিবিসিকে যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতেও এর বেশী কিছু জানা যাচ্ছে না।
এ ঘটনায় ফরহাদ মজহারের কোনো দায় এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বক্তব্যের বরাত দিয়ে সেই তথ্যও এরই মধ্যে গণমাধ্যমে এসেছে।
কিন্তু মি. মজহারের মতো একজন ব্যক্তিত্বকে কারা লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতে পারে এ নিয়ে তাঁর ঘনিষ্ঠজনেরা কী ভাবছেন?
ফরহাদ মাজহারের অত্যন্ত ঘণিষ্ঠ একজন সহচর, লেখক, কবি ও ব্লগার মুস্তাইন জহির বলছিলেন, “অবশ্যই তাকে অপহরণ করা হয়েছে। তাঁর এমন কোনো ব্যক্তিগত সমস্যা কারো সঙ্গে নেই যে এমন কাজ করবেন।আমাদের জানা নেই, পরিবারও সেটা মনে করে না। আরেকটা হচ্ছে প্রধানত রাজনৈতিক, তিনি লেখালেখি করেন, তার অবস্থান পরিস্কার। ”
“তিনি সোচ্চার আছেন কোন কোন বিষয়ে, জাতীয় ও আঞ্চলিক রাজনীতিতে কোন জায়গাগুলো নিয়ে তিনি কী কথা বলেন এবং কাদের জন্য তিনি মাথাব্যথার কারণ এটা আমরা সবাই জানি, সবাই বুঝি”।
এরই মধ্যে ফরহাদ মাজহারের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা নিয়ে নানারকম ষড়যন্ত্র তত্ত্ব শোনা যাচ্ছে।
বিরোধী দল বিএনপি শিবির থেকে আজও অভিযোগ হয়েছে যে সংবিধান সংশোধনীর ইস্যু থেকে মানুষের নজর ফেরাতে রাষ্ট্র এই ঘটনা ঘটিয়েছে।
আবার সরকারী দল যারা সমর্থন করেন, যারা ফরহাদ মাজহারকে সরকারবিরোধী তকমা দিতে চান, তারা বলছেন, মিস্টার মাজহার নিজেই এটা করেছেন আলোচনায় থাকার জন্য।
কেউ কেউ মনে করে বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেসব গুমের ঘটনা ঘটায়, এটা সেরকমই একটা ঘটনা।
আরো একটা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব রয়েছে, যেটাতে বলা হচ্ছে, ফরহাদ মাজহার নিখোঁজ হওয়ার আগের দিন একটি সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন, যেখানে ভারতে গোরক্ষার নাম করে মুসলিমদের হত্যার প্রতিবাদ জানানো হয়।
সেই সংবাদ সম্মেলনের জের ধরে ফরহাদ মাজহার নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটিকে একটি আন্তর্জাতিক চক্রান্ত বলে মনে করছেন কেউ কেউ, যে তত্বের একজন সমর্থক মুস্তাইন জহির স্বয়ং।
কিন্তু পুলিশ বলছে, তারা তদন্তের একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এ নিয়ে কথা বলার সময় এখনো আসেনি।
এদিকে ফরহাদ মজহার এখনো ঢাকার বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
তাঁর ঘনিষ্ঠজনেরা জানাচ্ছেন, ডাক্তার মি. মজহারকে একেবারেই কথাবার্তা বলতে বারণ করেছেন। তাই তিনি সাক্ষাৎ করতে যাওয়া ঘনিষ্ঠজনদের সাথেও তেমন কথাবার্তা বলছেন না। তাঁর আতঙ্ক এখনো কাটেনি বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন মুস্তাইন জহির।
এখন মি. মজহারের সাথে আসলে কি ঘটেছিল সেটা জানার উপায় হচ্ছে সুস্থ হয়ে মি. মাজহার যদি গণমাধ্যমের সাথে কথা বলে ঘটনাপ্রবাহের বিবরণ প্রকাশ করেন।
নয়তো এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে পুলিশের তদন্ত শেষ হওয়া পর্যন্ত।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
Discussion about this post