এবার নিখোঁজ হলেন কবি, কলামিস্ট ও বুদ্ধিজীবি ফরহাদ মজহার।
আজ সোমবার ভোর ৫টার কয়েক মিনিট পরে তিনি বাসা থেকে বের হন। এরপর তার কোনো হদিস নেই।
বাসা থেকে বের হওয়ার পরে দু’বার অন্য নম্বর দিয়ে তিনি তার স্ত্রীর সাথে কথা বলেছেন।
তিনি বলেছেন, তাকে ধরে নেয়া হচ্ছে। যারা ধরে নিয়েছে তারা তার মুক্তি বাবদ ৩৫ লাখ টাকা দাবি করেছে বলেও উল্লেখ করেছেন।
এদিকে ঘটনার ব্যাপারে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি হয়েছে। সর্বশেষ খুলনায় ফরহাদ মজহারের অবস্থান সম্পর্কে জানতে পেরেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
ভারতে মুসলিম নিধনের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করার মাত্র ১৬ ঘণ্টা পরে নিখোঁজ হলেন ফরহাদ মজহার।
ফরহাদ মজহারের বাসা হলো শ্যামলী রিং রোডের হক গার্ডেনের চতুর্থ তলায়।
ফরহাদ মজহারের পারিবারিক সূত্র জানায়, ভোর ৫টার কয়েক মিনিট পরে বাসা থেকে বের হয়ে যান ফরহাদ মজহার।
তার স্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে একটি সূত্র বলেছে, সাধারণত ভোর ৪টার দিকেই ফরহাদ মজহার ঘুম থেকে জাগেন। এরপর তিনি লেখালেখি করেন। প্রতি ভোরের ন্যায় আজও তিনি ঘুম থেকে উঠে টেবিলে বসেন। কিছুক্ষণ পরে স্ত্রী ফরিদা আক্তার বেডে শুয়েই দেখতে পান ফরহাদ মজহার টেবিলে বসা। প্রায় আধাঘণ্টা পড়ে তাকে টেবিলে না দেখে ফরিদা আক্তার ধরে নিয়েছিলেন হয়তো তিনি বাথরুমে গেছেন। ভোর ৫টা ২৯ মিনিটে যখন তার কাছে ফরহাদ মজহারের প্রথম ফোন আসে তখন তিনি জানতে পারেন ফরহাদ মজহার বাসায় নেই। তাকে তুলে নেয়া হয়েছে। ৫টা ২৯ মিনিটে একটি অজ্ঞাত নম্বর থেকে ফরিদা আকতারের কাছে ফোন আসে। ফোনে ফরহাদ মজহার নিজেই কথা বলেন।
তিনি তখন ফরিদা আকতারকে বলেন, ‘ওরা আমাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। তখন তিনি বলেন, ‘ওরা আমার কাছে ৩৫ লাখ টাকা চাচ্ছে। এর বেশি কিছু বলতে পারেননি ফরহাদ মজহার।’
এদিকে, ফরহাদ মজহারকে তুলে নেয়া হয়েছে এখবর জানতে পেরে স্ত্রী ফরিদা আকতার নিচে চলে যান। তিনি দারোয়ানদের জিজ্ঞাস করলে দারোয়ান মোহাম্মদ আলী তাকে জানান, ফরহাদ মজহার ভোরে একা বাসা থেকে বের হয়ে গেছেন। ভবনের সিসি ফুটেজে দেখা যায় ফরহাদ মজহার ভোর ৫টা ৬ মিনিটে গেট থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন। পরবর্তীতে ফরিদা আকতার বিষয়টি ফরহাদ মজহারের বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করেন। বিষয়টি দুপুরের দিকে ব্যাপকভাবে জানাজানি হলে মিডিয়া কর্মীরা ওই বাসায় গিয়ে ভীড় জমায়।
বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে ফরহাদ মজহার আবারো অজ্ঞাত নম্বর দিয়ে ফরিদা আকতারের মোবাইলে ফোন করেন। এসময় তিনি বলেন, তাকে ঢাকার বাইরে নেয়া হচ্ছে। কে বা কারা তাকে তুলে নিয়ে সে সম্পর্কে কিছুই জানতে পারেননি। ওই নম্বরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও ফোন দিয়ে কোনো তথ্য জানতে পারেনি। ফোন বন্ধ রয়েছে।
এদিকে, আজ দুপুরের ওই হক গার্ডেনে গেলে দারোয়ান মোহাম্মদ আলী জানান, ফরহাদ মজহারের বাসায় কোনো লোক নেই।
আলী বলেন, ‘ভোরে যখন ফরহাদ মজহার বাসা থেকে বের হচ্ছিলেন তখন তিনিই দায়িত্বে ছিলেন। তখন তিনি ফরহাদ মজহারকে সালাম দিলে তিনি ক্ষীণ কণ্ঠে সালামের উত্তর দেন।’
আলী বলেন, ‘প্রতিদিন স্যারকে সালাম দিলে তিনি উচ্চস্বরে জবাব দিতেন। কিন্তু আজ তাকে মলিন দেখা গেছে। তার মন খারাপ ছিলো।’
বাড়ির গেটের বাইরে কেউ ছিলো কি-না তা বলতে পারেননি দারোয়ান আলী।
তিনি বলেন, বাইরের দিকে তিনি খেয়াল করেননি।
বাড়ির গেটের বাইরেই হাতের বাঁ দিকে একটি চায়ের দোকান। ওই দোকানের মালিক বলেন, রাত দিন তার দোকান খোলা থাকে। গত ভোরেও তার দোকান খোলা ছিলো। তিনি ফরহাদ মজহারকে চেনেন না। চিনলে হয়তো স্মরণে আসতো বা খেয়াল করতেন তিনি কোনদিকে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, ওই সময় তার দোকানের সামনে একটি সিএনজি অটোরিকশা এবং কয়েকটি রিকশা ছিলো। তার বাইরে কোন গাড়ি সেখানে তিনি দেখেননি।
সূত্র: নয়াদিগন্ত
Discussion about this post