বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেছেন, ২০১৮ সাল হবে জনগণের বছর। ইনশাল্লাহ আমরা বিশ্বাস করি, ২০১৮ সাল দেশের মানুষের বছর হবে এবং দেশ থেকে সকল অত্যাচার ও অত্যাচারি বিদায় নেবে। আমরা পবিত্র রমজান মাস এই দোয়া করি। মঙ্গলবার রাজধানীর ইস্কাটনে লেডিস ক্লাব মিলনায়তনে এক ইফতার মাহফিল ও দোয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব বলেন তিনি। এসময় দেশে প্রতিনিয়ত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
২০ দলীয় জোটের শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) এই ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে। মূলমঞ্চে এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল অলি আহমদ, মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জোট নেতাদের নিয়ে ইফতার করেন খালেদা জিয়া।
প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে তিনি বলেন, এই যে বাজেট দিয়েছে, তারা মানুষের পকেটে হাত দিয়েছে। এখন ব্যাংকে যদি ১ লাখ টাকা থাকে, তা থেকে ৮ শ’ টাকা কেটে নেবে তারা। তাহলে থাকবে কী? তারপরও অর্থমন্ত্রী বলেন, অনেক টাকা থাকবে, যার এক লাখ টাকা আছে সে নাকি অনেক বড় লোক। অন্যদিকে তাদের যে ব্যাংকে হাজার হাজার কোটি টাকা আছে, সেটা কিছু না। এই হচ্ছে দেশের অবস্থা।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে খালেদা জিয়া বলেন, আজকে প্রত্যেকটা জিনিসপত্রের দাম বেশি। তারপরে গ্যাসের দাম প্রতিনিয়ত বাড়িয়ে চলেছে, বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে, পানির দাম বাড়িয়েছে।
বিদ্যুতের লোড শেডিং প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার বিদ্যুৎ দেবে বলে বাংলাদেশ নাকী ঝলমল করবে। এখন ঢাকা শহরেই লোডশেডিং বেড়ে গেছে। এখন সারাদেশ ঝলমল নয়, সারা দেশ অন্ধকারে ডুবে গেছে। এই হচ্ছে আওয়ামী লীগের উন্নয়নের নমুনা। আর একেকটা উন্নয়ন করে, কিছু ওভার ব্রিজ-ট্রিজ যা করে তার ব্যয় কত যে বাড়ে, ৩/৪ গুণ বেশি ব্যয়ে দেখিয়ে তারা এক একটা প্রকল্প করছে।
দেশের বিচার বিভাগের ওপর নির্বাহী বিভাগের হস্তক্ষেপের কথা তুলে ধরে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে দেশে আইনের শাসন বলে কিছু নাই। মানুষ কোনো ন্যায় বিচার পায় না। কারণ বিচার বিভাগ নিয়ন্ত্রণ করে আজকে সরকার, এই আওয়ামী লীগ। এদের হাত এতো লম্বা যে তারা কোথাও হাত দিতে কুন্ঠাবোধ করে না।
ব্যাংকিং খাতের চরম অরাজক পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, ২০১৬ সাল ছিলো আওয়ামী লীগের ব্যাংক চুরির বছর। ব্যাংকের টাকা প্রতিনিয়ত চুরি করেছে, চুরি করতে করতে বাংলাদেশ ব্যাংকে চুরি করেছে, ব্যাংকের টাকা চুরি করে তারা পাচার করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্থ লুন্ঠন ঘটনার তদন্তে প্রতিবেদন না দেয়াকে রহস্যজনক বলে মন্তব্য করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
নারী নির্যাতন, গুম-খুনসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক অবস্থা মন্তব্য তুলে ধরে তিনি বলেন, আজকে মহিলারা দেশের ঘরে বাইরে কোথাও নিরাপদ না। এমনকি শিশুরাও নিরাপদ না।
বেগম জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ নিজেদেরকে দেশের মালিক এবং রাজা মনে করেছে। তারা কাউকে সম্মান করতে জানেনা। অফিসারদের গায়ে হাত তোলে। শিক্ষক, পুলিশ কেউই বাদ যায় না তাদের নির্যাতন থেকে। সুতরাং তাদের কাছে ভালো কিছু আশা করা যায় না।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, নির্বাচন আসলে আওয়ামী লীগ অনেক সুন্দর সুন্দর কথা বলে। মিথ্যা কথা বলে। আসুন আমরা আওয়ামী লীগের অত্যাচার নিপীড়ন থেকে মুক্তির জন্য পবিত্র রমজান মাসে আল্লাহর কাছে দোয়া করি যেন মানুষ শান্তিতে দু’বেলা পেট ভরে খেতে পারে। মানুষ শান্তিতে ঘুমাতে পারে এবং শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থান হয়।
ইফতারে জোট নেতাদের মধ্যে ছিলেন কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, জামায়াতে ইসলামীর অধ্যাপক মজিবুর রহমান, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা এম এ রকীব, খেলাফত মজলিশের মাওলানা সৈয়দ মজিবুর রহমান, জাগপার রেহানা প্রধান, খোন্দকার লুৎফর রহমান, এনপিপির ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, এনডিপির খন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা, মঞ্জুর হোসেন ঈসা, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ন্যাপের জেবেল রহমান গানি, গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, বিজেপির আবদুল মতিন সউদ, মুসলিম লীগের এএইচএম কামরুজ্জামান খান, শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, ন্যাপ ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা মহিউদ্দিন ইকরাম, ডিএল’র সাইফুদ্দিন মনি, ইসলামিক পার্টির আবুল কাশেম প্রমুখ ইফতারে ছিলেন।
এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, আবু ইউসুফ খলিলুর রহমান, আবদুল গনিসহ নেতৃবৃন্দ ইফতারে ইফতারে ছিলেন।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, রুহুল আলম চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, ড. এনামুল হক চৌধুরী, সঞ্জীব চৌধুরী, তৈমুর আলম খন্দকার, কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব উন নবী খান সোহেল, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রোভিসি অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, বিএনপি চেয়পারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান, ইয়ুথ ফোরামের সভাপতি সাইদুর রহমান প্রমুখ ইফতারে অংশ নেন।
সূত্র: নয়াদিগন্ত
Discussion about this post