সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে অপসারণকৃত থেমিস দেবীর মূর্তির নির্মাতা ভাস্কর মৃণাল হক। বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি তার ভাস্কর্য সম্পর্কে যেসব আপত্তি তোলা হয়েছে তার জবাবে বলেন, “যারা আপত্তি করতে চায়, তারা একটা ছবি নিয়েও আপত্তি করে। একটা পাখির ছবি নিয়েও আপত্তি করে। অনেক কিছু নিয়েই আপত্তি করে। সারা পৃথিবীতে ভাস্কর্য হচ্ছে। সেখানে কেউ এসব নিয়ে কথা বলে না, আপত্তি করে না। বাংলাদেশে যেহেতু চারটি দেয়ালের মধ্যে আটকে রেখে মাদ্রাসাগুলোতে শিক্ষা দেয়া হয়, সেখানে যারা শিক্ষা গ্রহণ করে এবং যারা পড়ায়, তাদের সীমারেখাও ঐ ছোট্ট ঘরের মধ্যেই।”
মৃণাল হক বলেন, এর আগে তাঁর তৈরি লালন ভাস্কর্যটি নিয়েও সমস্যা হয়েছিল, যেটি বিমানবন্দরের সামনে থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছিল।
এ ঘটনার পর বাংলাদেশে একজন শিল্পীর সৃজনশীলতা এবং স্বাধীনতা কতটা ক্ষুন্ন হলো, জানতে চাইলে মৃণাল হক বলেন, “যারা আমাদের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে, সংস্কৃতির বিরুদ্ধে, ধর্মনিরপেক্ষতার বিরুদ্ধে, আমরা কি তাদের কাছে হার মানবো? আমাদের এই সরকার আছে বলেই আজকে দেশে ভাস্কর্য বানানো যাচ্ছে বা হচ্ছে।”
কিন্তু প্রতিবাদের মুখে তো আবার সরকারকে এই ভাস্কর্য তো সরিয়েও নিতে হচ্ছে?
এর উত্তরে মৃণাল হক বলেন, “এটা করতে হচ্ছে, কারণ অনেক প্লাস-মাইনাস, হিসেব-নিকেশের ব্যাপার আছে।
তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গন থেকে যখন ভাস্কর্যটি সরিয়ে নেয়া হচ্ছিল, তখন তিনি কান্না থামাতে পারেননি।
‘গতরাতে আমাকে প্রথম কাঁদতে হয়েছে। আমার মা মারা যাওয়ার পরও এত কান্না আমি কাঁদিনি। আমার মনে হয়েছিল, আমাদের সবকিছু বোধহয় শেষ হওয়ার সূত্রপাত হলো।”
উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্টের সামনে তথাকথিক ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে গ্রিক দেবী থেমিসের একটি মূর্তি স্থাপন করা হয়। মুসলিম প্রধান একটি দেশের সর্বোচ্চ আদালতের সামনে বিধর্মীদের তথাকথিত এই মূর্তি নির্মানকে মেনে নিতে পারেনি ইসলামপ্রিয় জনতা। তারা এই মূর্তি নির্মানের তীব্র বিরোধীতা করে। এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এই মূর্তি অপসারনের পক্ষে মত দেন। তারই প্রেক্ষিতে ২৬ মে ভোররাতে মূর্তিটি অপসারণ করা হয়।
বিবিসি বাংলার নিউজ লিংক : গ্রীক দেবীর ভাস্কর্য সরানোর ঘটনা সম্পর্কে যা বললেন মৃণাল হক
Discussion about this post