জুনায়েদ আব্বাসী
এমবিবিএস পরীক্ষায় ফেল করা ছাত্রলীগ নেতাদের অনৈতিক দাবির কাছে এবার নতিস্বীকার করলো শিক্ষামন্ত্রণালয়। কিছু দিন আগে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক রোগীর স্বজনকে মারধরের ঘটনায় যে কয়জনের শাস্তি হয়েছিল তারা সবাই ছিল ছাত্রলীগ নেতা। তাদের শাস্তি প্রত্যাহারের দাবিতে সারাদেশে হাসপাতালে ধর্মঘটের ডাক দিয়ে সাধারণ মানুষকে চরম ভোগান্তিতে ফেলেছিল। পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ইন্ধনেই বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা এ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল।
এমনকি তাদের শাস্তি প্রত্যাহার নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী যে বৈঠকটি করেছিলেন সেখানে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগও উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকের ছবিও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। জানা গেছে, ছাত্রলীগের চাপের মুখে বগুড়া মেডিকেলের চার ছাত্রলীগ নেতার শাস্তি প্রত্যাহার করতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিম বাধ্য হন।
এখন আবার রংপুর মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস পরীক্ষায় ফেল করা ছাত্রলীগ নেতাদের অনৈতিক দাবির মুখে পরীক্ষার ফলাফল স্থগিত করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
জানা গেছে, রংপুর মেডিকেল কলেজ থেকে ৪১ তম ব্যাচে এমবিবিএস পরীক্ষায় মোট ২১২ জন পরীক্ষা দিয়েছিল। তার মধ্যে ১৫৪ জন পাশ করেছে। আর ফেল করেছে ৫৮ জন। ফলাফলে কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি-সেক্রেটারিসহ সবাই ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী। তারা সবাই ফেল করেছেন। কিন্তু নাম ভুলের অজুহাত দেখিয়ে ছাত্রলীগ ওই ফলাফল বাতিল চেয়ে মঙ্গলবার সকাল থেকে কলেজ অধ্যক্ষের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘট করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। তাদের পাশ করিয়ে না দিলে আত্মাহুতিরও হুমকি দেয় তারা। এরই প্রেক্ষিতে ওই ফলাফল স্থগিত ঘোষণা করলো কর্তৃপক্ষ।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ছাত্রলীগের দাবিকে এখন সাধারণ শিক্ষার্থীরা মামা বাড়ির আবদার বলেই মনে করছেন। তারা যখন যা আবদার করছে সরকার ও কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি/অধ্যক্ষরা তাই পূরণ করছে।
সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো নিয়ম-নীতি ছাড়াই শুধু ছাত্রলীগ করার কারণে প্রশাসনের বিভিন্ন পদে তিন ডজন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে চাকরি দিয়েছেন ভিসি ড. মিজানুর রহমান। এত বড় অনিয়ম করেও তিনি আবার গর্বের সঙ্গে বলেছেন, ছাত্রলীগ করে এটাই তাদের বিশেষ যোগ্যতা। এর মধ্যে রংপুর মেডিকেলের এ ঘটনা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদেরকে ভাবিয়ে তুলেছে। কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী মনে করছেন, ছাত্রলীগের অনৈতিক দাবির মুখে ফলাফল স্থগিত করে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাটাকেই প্রশ্নের মুখোমুখি করা হয়েছে। এখন থেকে এই রেওয়াজ প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ফলাফলে পড়বে। আবার অনেকেই বলছেন, শেখ হাসিনার সোনার ছেলে বলে কথা। তাদের জন্য সব গুনাহই মাফ।
Discussion about this post