এ.কে.এম. ওয়াহিদুজ্জামান
আকষ্মিক বন্যায় বাঁধ ভেঙে পানি ঢোকার কারণে হাওর অঞ্চলের ৬টি জেলার প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষ তাদের ফসল, মৎসসম্পদ, হাঁস-মুরগী এবং গবাদীপশু হারিয়েছে। সরকারী হিসেবেই দুই লাখ হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়েছে যা থেকে ৬ লাখ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যেত। এছাড়াও এক হাজার ২৭৬ মেট্রিক টন মাছ নষ্ট হয়েছে এবং তিন হাজার ৮৪৪টি হাঁস মারা গেছে। বলাবাহুল্য, সরকার সব সময় ক্ষয়-ক্ষতির পরিমান কমিয়েই বলে। এমনকি এই কমিয়ে বলার পরও হাওরে ক্ষতির পরিমান প্রচারে শেখ হাসিনা ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে যেসব নির্মান সামগ্রী দিয়ে অবকাঠামো নির্মান করতে দেখা যায় এবং তাতে যে ধরণের দুর্নীতি হয় তা আমলে নিলে এটি অবশ্যই বোঝা যায় যে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মান, মেরামত এবং রক্ষনাবেক্ষণে ত্রুটি ছিল; যে কারণে বাঁধ ভেঙেছে। কাজেই দুর্নীতির কারণে এই বাঁধ ভাঙার মাধ্যমে হাওর অঞ্চলের ৪০ লক্ষ মানুষ নিস্বঃ হয়ে যাবার দায় এককভাবে সরকারের।
হাওর অঞ্চলে বাঁধ ভেঙে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের পক্ষে যখন দেশের সচেতন মানুষ এবং রাজনীতিবিদরা দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেন, তখন শেখ হাসিনা এবং তার দলের নেতাদের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হলো- ‘হাওরের বন্যা নিয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে’! বটে! দুর্নীতি করে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নষ্ট করলেন আপনারা, সেই কারণে বাঁধ ভেঙে ৪০ লক্ষ মানুষ যখন সহায় সম্বলহীন হয়ে গেল, তখন তাদের পাশে দাঁড়ানোর কারণে সেটা পাপ হয়ে গেল! রাজনীতিবিদদের কাজই তো হচ্ছে জনগণের পাশে তাদের আপদ বিপদে দাঁড়ানো। এভাবে জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে জনগণের আস্থা অর্জন করাই তো আদর্শ রাজনীতবিদের আচরণ।
এখন আবার প্রশাসনকে দিয়ে আদেশ দেয়ানো হয়েছে আগামী ৩০ এপ্রিল তারিখ পর্যন্ত হাওর অঞ্চলে বেসরকারী কোন ব্যক্তি বা সংগঠনের পক্ষ থেকে ত্রাণকার্য পরিচালনা করা যাবে না। অর্থাৎ, এই সময়ে কেবলমাত্র সরকারী দলের লোকজনই ত্রাণকার্য পরিচালনা করবেন। নিজেই সর্প হয়ে দংশন করেছিলেন, নিজেই ওঝা হয়ে ঝাঁড়বেন!
মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ঘোষণা দিয়েছেন, হাওরের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৬ জেলার ৩ লাখ ৩০ হাজার পরিবারকে আগামী ১০০ দিন পর্যন্ত মাসে ৩০ কেজি করে বিনামূল্যে চাল ও ৫০০ টাকা অর্থসহায়তা সহায়তা দেওয়া হবে।
ক্ষতিগ্রস্থ হলো ৪০ লক্ষ মানুষ, আর উনারা সহায়তা দেবেন তার এক চতুর্থাংশকে, বাকীরা কোথায় যাবে? কী খাবে? সবচেয়ে বড় কথা- ৩০ কেজি চালে একটি পরিবারের তো ১০/১৫ দিনের বেশি চলবে না। মাসের বাকী দিনগুলো কী তারা না খেয়ে থাকবেন? ৫০০ টাকা দিয়ে একটি পরিবারের ৫ দিনের খরচও তো মেটানো সম্ভব না।
সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় সরকারের পক্ষ থেকে যে অর্থ এবং ত্রাণ সাহায্য দেয়া হয়েছে বলা হচ্ছে- তার বেশিরভাগই এখনো অনেক এলাকায় পৌছেনি। যেটুকু পৌছেছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এমনকি খোলা বাজারে বা ওএমএসএ যে চাল বিক্রি করা হচ্ছে তাও সবাই পাচ্ছেন না।
শেখ হাসিনা সরকারের দুর্নীতির কারণে বন্যা প্রতিরোধ বাঁধ ভেঙে ফসল নষ্ট হলো, মাছ-হাঁস-গবাদীপশু হারিয়ে হাওরের মানুষ নিস্বঃ হয়ে গেল। অথচ উনারা ক্ষতিগ্রস্থদের পাশে নিজেরাও দাঁড়াচ্ছেন না, অন্যদেরও দাঁড়াতে দিচ্ছেন না। এমনকি মিডিয়া সেন্সরশিপের মাধ্যমে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের প্রকৃত তথ্যও প্রকাশ করতে দিচ্ছেন না।
নিজেদের দুর্নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের দুর্ভোগ আরো বাড়িয়ে দেবার মাধ্যমে হাসিনা সরকার যা করছেন, এটাকে রাজনীতি না বলে অপরাজনীতি বললেই ভাল হয়।
A K M Wahiduzzaman এর ব্লগ থেকে
Discussion about this post