বাংলা ভাষায় একশোরও বেশি বই বেরিয়েছে তাঁর, বলা হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখকদের একজন তিনি।
কিন্তু মূলধারার বাংলা সাহিত্যের চর্চা যারা করেন, খোঁজ-খবর রাখেন, তাদের অনেকে নাকি এই লেখকের নামই শোনেননি।
কাসেম বিন আবুবাকার তাঁর মূলত গ্রামীণ পটভূমির উপন্যাসে ইসলামী আদর্শ প্রচার করেন। কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, পাঠক আকর্ষণের একই সঙ্গে জন্য তাঁর লেখায় এক ধরণের যৌনতারও সংমিশ্রণ ঘটানো হয়।
একটি আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থাকে এক সাক্ষাৎকার দেওয়ার পর তার লেখা নিয়ে গত কদিন ধরে বাংলাদেশে সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল বিতর্ক চলছে।
কিন্তু শতাধিক বইয়ের জনপ্রিয় লেখক হওয়ার পরও তাকে নিয়ে তেমন আলোচনা কেন আগে শোনা যায়নি?
বিবিসিকে এর জবাবে কাসেম বিন আবুবাকার বলছিলেন, “নাম-যশ-অর্থ কোনও দিনই আমার লক্ষ্য ছিল না। আমি শুধু চেয়েছিলাম মানুষের চরিত্র গঠন করতে, আর তাই কোরান-হাদিসের আলোকে চিরকাল মানুষকে মানুষের মতো করে তোলার উদ্দেশ্য নিয়েই লিখে গেছি।”
তিনি আরও দাবি করছেন, “আমি আসলে এমন সব আদর্শ চরিত্রের কথা লিখি, যা পড়লে একজন বাবা মনে করবে আমার ঠিক এই রকম বাবাই হওয়া উচিত। একজন ছেলে ভাববে ছেলে হলে এরকমই হতে হবে।”
ইসলামী ভাবধারায় এই মূল্যবোধ-নির্ভর সাহিত্যই তার পাঠকপ্রিয়তার আসল রহস্য বলে মনে করেন কাসেম বিন আবুবাকার। তবে সেই সঙ্গে এটাও স্বীকার করেন, তার পাঠকদের ৮০ শতাংশই গ্রামের, বাকিরা শহরের।
কিন্তু তার অজস্র লেখায় তো যৌনতাপূর্ণ অনেক ইঙ্গিতও আছে। তার সঙ্গে কি ইসলামী ভাবধারার কোনও বিরোধ নেই?
এর জবাবে প্রথমে তিনি বলেন, “কই, যৌনতা নিয়ে আমি কখনও কিছু লিখেছি বলে তো মনে পড়ে না।”
পরে অবশ্য তার একাধিক বই থেকে এরকম বেশ কয়েকটি লাইন পড়ে শোনানোর পর তিনি স্বীকার করেন, “আসলে আমি তো বাস্তব জীবনের ওপর নির্ভর করেই লিখি। মনগড়া লিখলে তো হবে না। তাই হয়তো কোথাও কোথাও ওরকম দু-একটা বইতে দুচার লাইন এসে গেছে
একটা উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, একজন মহিলা গৃহশিক্ষকের কাছ থেকে শোনা তার জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি একটি বই লিখেছিলেন।
সেখানে হয়তো ওরকম কিছু লাইন এসে গেছে, কিন্তু এর মাধ্যমেও একটা শিক্ষাই তিনি দিতে চেয়েছেন, আর তা হল বাড়িতে তরুণ ছাত্র থাকলে কেন মহিলা গৃহশিক্ষক রাখতে নেই – দাবি করছেন কাসেম বিন আবুবাকার।
পাঠক নন্দিত এই লেখক আরও বলছেন, “অনেক সময় নাম দেখেও লোকে বিভ্রান্ত হয়। আমার বাসর রাত বলে একটা বই আছে, সেটা কিন্তু খুব উচ্চাঙ্গের বই। ওখানে বাসর রাতের ব্যাপারে আসলে কিছুই নেই।”
কাসেম বিন আবুবাকার বিবিসিকে আরও বলছিলেন বহু পাঠক তাকে জানিয়েছেন তার লেখা পড়ে তাদের জীবনের ধারাই পাল্টে গেছে। কেউ মদ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে, কেউ আর তাড়ি ছুঁয়েও দেখে না।
“চট্টগ্রামে একজন ফুড ইন্সপেক্টর এসে একবার আমার পা জড়িয়ে ধরেছিলেন। তিনি বলছিলেন, আমার লেখা পড়েই তিন ঘুষ নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। এখন আর তিনি মদও স্পর্শ করেন না।”
লেখক হিসেবে এগুলোই তার সবচেয়ে বড় পাওয়া, বলছেন কাসেম বিন আবুবাকার। তবে পাঠকদের জীবন বদলে দেওয়ার তৃপ্তির পাশাপাশি তার বইগুলো যে বাণিজ্যিক সফলতা পেয়েছে, তার পরিমাণও বিপুল।
“একটা সময় তো প্রকাশকরা এক লক্ষ টাকা অ্যাডভান্স দিয়ে আমার বইয়ের জন্য অপেক্ষা করত। এক বছরের আগে আমি তাদের বই পর্যন্ত দিতে পারতাম না, এত লেখালেখির চাপ ছিল!”, বলছিলেন তিনি।
তবে গত বছর দুয়েক ধরে তার লেখালেখি একেবারেই বন্ধ, কারণ অসুস্থতার জন্য এখন আর কলম ধরতেই পারেন না বাংলাদেশের এই বিস্ময় লেখক কাসেম বিন আবুবাকার।।”
সূত্র: বিবিসি বাংলা
Discussion about this post