২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আগমনকে কেন্দ্র করে সারা বাংলাদেশ জুড়ে বিক্ষোভ আন্দোলন শুরু হয়। এটিই বাংলাদেশে মোদিবিরোধী আন্দোলন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। গুজরাটের মুসলিম গণহত্যা, বাবরি মসজিদ ইস্যু, পাশাপাশি ভারতের সংখ্যালঘু মুসলমানদের উপর ক্রমাগত নির্যাতন, মুসলিমদের নাগরিকত্ব বাতিলের ষড়যন্ত্র ইত্যাদি অপরাধকে সামনে রেখে বাংলাদেশের মানুষ মোদিকে অতিথি হিসেবে দেখতে চায়নি। এছাড়াও বাংলাদেশ থেকে সকল কাঙ্ক্ষিত সুবিধা নিলেও মোদি সরকার বাংলাদেশকে প্রাপ্য অধিকার দিতে রাজি নয়।
এদিকে বাংলাদেশের সরকার জনগণের সরকার নয়। তারা হিন্দুত্ববাদের দয়ায় টিকে রয়েছে। তাই তাদের বাংলাদেশের কোনো অধিকার নিয়েই চিন্তা ছিল না। বাংলাদেশের জন্য কোনো অধিকারই তাদের দরকার নেই। তারা শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকলেই হলো।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, ‘মোদি আসছেন এতেই আমরা খুশি, তিস্তা নিয়ে আলোচনা এবার না’। আরো বলেছেন, ‘আমরা যেটা চাই সেটা হচ্ছে, এই যে একটি আনন্দ উৎসব, আমাদের এই বড় উৎসবে সবাই এসেছে, আমরা তাতেই আনন্দিত। এটাই তো আমাদের বড় পাওয়া, আর কী চান আপনি? আপনাকে কে কাপড় দিল, ভাত দিল ওইটা নিয়ে বেশি চিন্তিত, ওইগুলা আমরা ম্যানেজ করব। তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়ন হয়নি তাদের সমস্যা আছে। আমরা বুঝি, আমরা বোকা নই।’ ডিএমপির ভারপ্রাপ্ত কমিশনার (পুলিশের বিশেষ শাখার প্রধান) মো. মনিরুল ইসলাম হুশিয়ার করেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে আগমনকে সামনে রেখে যারা মোদিবিরোধী মিছিল-মিটিং করছে কিংবা করবে তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ শক্তভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে’। তিনি রাষ্ট্রের ‘সম্মান’ বাচানোর জন্য জনগণকে ‘স্যাক্রিফাইস’ করার আহ্বান জানান।
মুসলিম গণহত্যা ও নির্যাতন এবং হিন্দুত্ববাদী দৃষ্টিভঙ্গির জন্য মোদীকে অভিযুক্ত করে নরেন্দ্র মোদীর বাংলাদেশ সফরের বিরোধীতা করে আসছিল হেফাজতে ইসলাম ও এর সমর্থক গোষ্ঠীরা। শুক্রবার ২৬ মার্চ, ২০২১ তারিখে বাংলাদেশের ৫১তম স্বাধীনতা দিবস অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকায় পৌছান ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার ঢাকায় আগমন উপলক্ষ্যে সেদিন জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ ও সহিংসতা দেখা দেয় যা পরে সারা দেশে ছড়িয়ে পরে।
আওয়ামী লীগের সমর্থকরা বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা করেছিল তখনই মূল সংঘাতটি শুরু হয়। এর ফলে উভয় পক্ষের মধ্যেই সহিংস সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়। এই ঘটনার পর দেশের বেশ কিছু জেলায় সহিংসতা ছড়িয়ে পরে। হেফাজতে ইসলাম যখন ২৬ মার্চ ২০২১ তারিখে বাইতুল মোকাররম মসজিদে বিক্ষোভ করছিল তখন পুলিশ ও আওয়ামীলীগ বাইতুল মোকাররমে হামলা চালিয়েছে। মসজিদের সমস্ত গেইট অবরুদ্ধ করে গুলি, টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। আওয়ামী লীগ ও পুলিশ মসজিদে ঢুকে মুসল্লি ও বিক্ষোভকারীদের পিটিয়ে রক্তাক্ত করে। প্রায় ৪৫০+ মানুষ আহত হয়।
পুরো মসজিদ রক্তে ভেসে যায়। বেশি খারাপ অবস্থা হয় বাইতুল মোকাররমে দক্ষিণ গেইটে থাকা মুসল্লিদের। ২০২১ সালের ২৬ মার্চ আওয়ামী লীগ মুসলিমদের পিটিয়ে নিশ্চিত করে এই স্বাধীনতা মুশরিকদের স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতায় ইসলামপন্থীদের কোনো অংশ নেই।
বাইতুল মোকাররমে নৃশংশ হামলার প্রতিবাদে সারাদেশে ধর্মপ্রাণ মুসল্লি ২৬ তারিখ বিকেলেই বিক্ষোভ মিছিল করে। সারাদেশের প্রায় সকল স্থানেই পুলিশ আওয়ামী লীগের সাথে মুসলিমদের সংঘর্ষ হয়। তবে বেশি খারাপ অবস্থা হয় চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মনবাড়িয়ায়। চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে ছাত্ররা বায়তুল মোকাররমের এই সহিংসতার প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে ভূমি অফিসের সামনে সমাবেশ করে। এ সময় পুলিশ সমাবেশে হামলা চালায় ও গুলি করে। পুলিশ নির্বিচার গুলি ছুঁড়লে অর্ধ শতাধিক মুসলিম গুলিবিদ্ধ হন ও ৪ জন শাহদাতবরণ করেন। ব্রাহ্মনবাড়িয়াতে মুসলিমদের বিক্ষোভে পুলিশ গুলি করে একজনকে হত্যা করে।
পুলিশ ও আওয়ামী লীগ মিলে সারাদেশে ৫ জনকে খুন ও সহস্রাধিক মানুষকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করার প্রতিবাদে ২৭ মার্চ হরতালের ডাক দেয় হেফাজতে ইসলাম। সারাদেশে মুসলিমরা মুশরিকদের নেতা মোদি ও আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে। এই অব্যাহত বিক্ষোভের মধ্যেও খুনী ও হিংস্র মোদিকে নিয়ে এদেশের শাপলা গণহত্যাসহ বহু গণহত্যার মূল হোতা শেখ হাসিনা অনুষ্ঠান করছিল।
২৭ তারিখ হরতালের সমর্থনে সারাদেশের সব জেলায় বিক্ষোভ করে মুসলিমরা। কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এমপি উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর নির্দেশে পুলিশ ও ছাত্রলীগ মুসলিমদের ওপর তান্ডব চালায়। দফায় দফায় হামলা চালায় ‘জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুসিয়া’ মাদ্রসায়। এই দিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আরো ৮ জন শাহদাতবরণ করেন। ঢাকায়, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে ব্যাপক সংঘর্ষ হয় মুসলিম ও আওয়ামী লীগের মাঝে।
সরকার সারাদেশে বিজিবি মোতায়েন করে। সংঘর্ষের মধ্যে মোদি ঢাকা ত্যাগ করে। হেফাজতে ইসলাম ২৮ তারিখও হরতাল ঘোষণা করে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৯ জনকে শহীদ করার প্রতিক্রিয়ায় মুসলিমরা আওয়ামী অফিস ও শেখ মুজিবের মূর্তি ভেঙ্গে দেয়। ২৮ তারিখও পুলিশ মুসলিমদের হত্যা করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। ২৮ মার্চ আরো ৫ জন মুসলিমকে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ। হাজার হাজার পুলিশ পুরো ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরকে অবরুদ্ধ করে ফেলে। অঘোষিত কারফিউ জারি করে মুশরিক প্রশাসন। আহতদের মধ্যে থেকে ২৯ মার্চ ১ জন ও ৩০ মার্চ ১ জন শাহদাতবরণ করেন।
মোদিবিরোধী আন্দোলনে মোট ২০ জন মুসলিম শাহদাতবরণ করেন। আহত হন দুই সহস্রাধিক। সারাদেশে পুলিশ গ্রেপ্তার করে ২০ হাজারেরও বেশি মুসলিমকে। এই আন্দোলনে চট্টগ্রামে ৪ জন ও বাকী ১৬ জন শহীদ হন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। এজন্য তৌহীদি জনতা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাম পরিবর্তন করে শহীদবাড়িয়া করার প্রস্তাব করেন। এমপি মোকতাদির এই গণহত্যায় মূখ্য ভূমিকা পালন করে।
২০২৪ সালে পাতানো ডামি নির্বাচন করে পুনরায় মুশরিকবন্ধু শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসীন হয়। মুসলিমদের হত্যা করার পুরস্কার হিসেবে উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীকে বাংলাদেশের গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী করা হয়।
যারা শাহদাতবরণ করেন
১. শহীদ রবিউল ইসলাম
২৬ মার্চ, ‘২১ || চট্টগ্রাম
২. শহিদ মেরাজুল ইসলাম
২৬ মার্চ, ‘২১ || চট্টগ্রাম
৩. শহীদ নাসরুল্লাহ
২৬ মার্চ, ‘২১ || চট্টগ্রাম
৪. শহিদ ওহিদুল ইসলাম
২৬ মার্চ, ‘২১ || চট্টগ্রাম
৫. শহিদ মোঃ আশিক মিয়া
২৬ মার্চ, ‘২১ || শহীদবাড়িয়া
৬. শহীদ মাও. হোসাইন আহমদ
২৭ মার্চ, ‘২১ || শহীদবাড়িয়া
৭. শহীদ মুহাম্মদ কাউসার
২৭ মার্চ, ‘২১ || শহীদবাড়িয়া
৮. শহীদ বাদল মিয়া
২৭ মার্চ, ‘২১ || শহীদবাড়িয়া
৯. শহীদ হাফেজ জুবায়ের আহমদ
২৭ মার্চ, ‘২১ || শহীদবাড়িয়া
১০. শহীদ মুশাহিদ মিয়া
২৭ মার্চ, ‘২১ || শহীদবাড়িয়া
১১. শহিদ হাফেজ কাউসার
২৭ মার্চ, ‘২১ || শহীদবাড়িয়া
১২. শহীদ মুহাম্মদ ফয়সল
২৭ মার্চ, ‘২১ || শহীদবাড়িয়া
১৩. শহীদ জহিরুল ইসলাম
২৭ মার্চ, ‘২১ || শহীদবাড়িয়া
১৪. শহীদ মোহাম্মদ আশিক
২৮ মার্চ, ‘২১ || শহীদবাড়িয়া
১৫. শহীদ মুহাম্মদ আল আমিন
২৮ মার্চ, ‘২১ || শহীদবাড়িয়া
১৬. শহীদ হাদিস মিয়া কালন
২৮ মার্চ, ‘২১ || শহীদবাড়িয়া
১৭. শহীদ ফয়সাল
২৮ মার্চ, ‘২১ || শহীদবাড়িয়া
১৮. শহীদ লিটন মিয়া
২৮ মার্চ, ‘২১ || শহীদবাড়িয়া
১৯. শহীদ কামাল উদ্দিন
২৯ মার্চ, ‘২১ || শহীদবাড়িয়া
২০. শহীদ মু. রাফিন মিয়া
৩০ মার্চ, ‘২১ || শহীদবাড়িয়া
Discussion about this post