আমেরিকায় পিএইচডি গবেষণায় থাকা ছেলের ফেইসবুক স্ট্যাটাসের কারণে খুলনায় গ্রেপ্তার হওয়া আনিছা সিদ্দিকাকে (৫৮) মুক্তি দিতে আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। বৃহস্পতিবার (২৪শে আগস্ট) সংস্থার ওয়েবসাইটে দেওয়া এক বিবৃতির মাধ্যমে এ আহ্বান জানানো হয়।
অ্যামনেস্টির ক্যাম্পেইনস ফর সাউথ এশিয়ার ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি আঞ্চলিক পরিচালক বাবু রাম পান্ত এ বিবৃতির মাধ্যমে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে বিতর্কিত উল্লেখ বলে উল্লেখ করে সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, ছেলের ফেসবুক পোস্টের কারণে আনিছা সিদ্দিকা নামে একজন ৫৮ বছর বয়সী বাংলাদেশি নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ অনলাইন এবং অফলাইন উভয় জায়গায় বিরোধী মতামত প্রকাশকারীদের প্রতি অসহিষ্ণুতার একটি উদ্বেগজনক প্রবণতা দেখাচ্ছে। সরকারের সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেলের পর অবিলম্বে একজন মাকে গ্রেপ্তার করা হাস্যকর। বাংলাদেশে আগামী বছর অনুষ্ঠিতব্য সাধারণ নির্বাচনের আগে বিরোধী রাজনীতিবিদ ও কর্মীদের নির্বিচারে আটকের অব্যাহত প্রতিবেদন ভয় ও অবিশ্বাসের পরিবেশ তৈরি করেছে।
বাবু রাম পান্ত আরও বলেন, বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই অবিলম্বে আনিছা সিদ্দিকাকে মুক্তি দিতে হবে অথবা দ্রুতই আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী তাকে একটি স্বীকৃত অপরাধের জন্য অভিযুক্ত করতে হবে। দেশটির সরকারকে ভিন্নমতের দৃষ্টিভঙ্গির জন্য নির্বিচারে লোকদের আটক করার অনুশীলন বন্ধ করতে হবে। ভিন্ন রাজনৈতিক মতামত রাখা ও প্রকাশ করা কোনো অপরাধ নয়।
সমালোচনামূলক কণ্ঠকে লক্ষ্যবস্তু করার পরিবর্তে কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে, জনগণ প্রতিশোধ বা বৈষম্যের ভয় ছাড়াই মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সমিতি এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারসহ নির্বাচনের সময়, আগে-পরে তাদের মানবাধিকার প্রয়োগ করতে সক্ষম হবে।
উল্লেখ্য, গ্রেপ্তার আনিছা যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির পিএইচডি গবেষক তানজিলুর রহমানের মা। তানজিলুর ও তার ভাই নিজেদের প্রতিবাদী বলে দাবি করেন এবং বিভিন্ন সময় দেশের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে লেখালিখি করেন।
অ্যামনেস্টি যে বিবৃতি দিয়েছে, সেটিতে মামলার প্রথম তথ্য প্রতিবেদনের তথ্যও তুলে ধরা হয়। বলা হয়েছে, গত ২০শে আগস্ট সিদ্দিকাকে ১৯৭৪ সালের কঠোর বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৫(৩) (নাশকতা) ও ২৫ (ডি) (নাশকতা চেষ্টার জন্য শাস্তি) ধারায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে- তদন্তে দেখা গেছে, আনিছা অন্য আসামিদের সঙ্গে ‘সরকারের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃত নাশকতা ঘটাতে বিভিন্ন ক্ষতিকারক কাজ’ করতে চেয়েছিলেন। এমনকি তিনি বিরোধী রাজনৈতিক দল জামায়াতের নেতাদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন।
গত ২৩শে আগস্ট খুলনা মহানগর হাকিম আদালত আনিছার জামিন নামঞ্জুর করেন।
Discussion about this post