জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তৈরির কাজটি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পরিবর্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় মন্ত্রিসভার বৈঠক। পরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে সভার সিদ্ধান্ত তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। সোমবার মন্ত্রিসভায় ‘জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন-২০২২’–এর খসড়া মন্ত্রিসভায় নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বিরোধীদলগুলো সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দাবি জানিয়ে যাচ্ছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি বহু ত্যাগ করে নতুনভাবে আন্দোলন চাঙ্গা করছে। এর মধ্যে শেখ হাসিনা সরকার নির্বাচনকে আরো বেশি সরকারের করায়ত্বে নিয়ে এসেছে।
প্রতিষ্ঠাকাল বাংলাদেশে ভোটার তালিকা প্রস্তুত ও ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব ছিল নির্বাচন কমিশনের কাছে। ভোটার তালিকা থেকে জাতীয় পরিচয় পত্রের ধারণা হয় এবং এটি নিয়ন্ত্রণ করতো নির্বাচন কমিশন। বাস্তবে স্বাধীন না হলেও নথিপত্রে নির্বাচন কমিশন স্বাধীন।
গত সোমবার হাসিনা সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জাতীয় পরিচয় পত্রের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশন থেকে নিয়ে নিয়েছে। এর মাধ্যমে তারা ভোটার তালিকাও নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে। পাসপোর্টের মতো করে তারা এখন জনগণের এনআইডি কার্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা/ আটকে রাখা ইত্যাদি অপকৌশলের মাধ্যমে বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের হয়রানি করবে।
বেশ কয়েকমাস ধরে এনআইডি সেবা দেওয়ার কাজটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে আনার বিষয়ে আলোচনা চলছে। এ বিষয়ে আগেও জানানো হয়েছিল, এ কাজ করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ। কিন্তু একদিকে ইসির ‘আপত্তি’ অন্যদিকে আইন না হওয়ায় এই কাজ সুরক্ষা সেবা বিভাগ করতে পারছিল না। সে জন্যই নতুন আইনের খসড়া আজ মন্ত্রিসভায় তোলা হয়েছিল।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, এনআইডির কাজটি ইসির চেয়ে সরকারের সরাসরি তত্ত্বাবধানে থাকা বেশি প্রয়োজন। সে জন্য এটি সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাসপোর্টের কাজটিও হয় সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে। তবে আইনের যে খসড়াটি সুরক্ষা সেবা বিভাগ এনেছে, মন্ত্রিসভা মনে করে এটির আরও পর্যালোচনা হওয়া দরকার। কারণ, বিদ্যমান আইনে ৩২টি ধারা ছিল। সেখান থেকে কমিয়ে ১৫টি ধারা করা হয়েছে। আবার অনেক কিছু বাদ দেওয়া হয়েছে। তাই মন্ত্রিসভা এটি গ্রহণ করেনি। যেমন বিদ্যমান আইনে ৬-৭টি অপরাধের জন্য আলাদা আলাদা দণ্ড ছিল, কিন্তু আইনের খসড়ায় এই সবগুলোকে এক করে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এগুলোকে আলাদা করেই রাখতে হবে। এ জন্য মন্ত্রিসভা বলেছে, আগের যে ৩২টি ধারা ছিল সে অনুযায়ী করতে। আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলে আগের ৩২টি ধারার অনুরূপ করে আইনের খসড়া করবে।
শেখ হাসিনা সরকার স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়ার অধিকার অনেক আগেই কেড়ে নিয়েছে। এখন স্বাধীনভাবে ভোটার হওয়ার অধিকারও আর থাকবে না।
লেখক : সোশ্যাল মিডিয়া এক্টিভিস্ট
Discussion about this post