অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বাংলাদেশে গণমাধ্যম কিংবা এর কর্মীরা কতটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে সেটা নিয়ে আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক বেশ পুরনো। গণমাধ্যমের সার্বিক অবস্থা যদি এক কথায় প্রকাশ করা হয়-তাহলে দেশের গণমাধ্যম এখন শেখ হাসিনার শিকলে বাধা। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই শেখ হাসিনা গণমাধ্যমে বন্দি করা শুরু করেন। আর যখনই সরকারের গঠন মূলক সমালোচনা করা হয়েছে ঠিক তখনই সেই সব গণমাধ্যম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
অ্যনালাইসিস বিডি শুরু থেকে সরকারের গঠন মূলক সমালোচনা করায় বহুবার ডোমেইন ব্লক করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া এক সময়েরে জনপ্রিয় দিগন্ত টেলিভিশন, ইসলামিক টেলিভিশন, সিএসবি টিভি ও জনপ্রিয় পত্রিকা আমার দেশ শেখ হাসিনা বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়া শেখ হাসিনার দুর্নীতিবাজ এমপি-মন্ত্রীদের অপরাধ অপকর্মের বিরুদ্ধে লেখায় দেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল শীর্ষনিউজকে বন্ধ করে দেয়া হয়।
এছাড়া যারা হাসিনার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে, কিন্তু শেখ হাসিনা এগুলোকে বন্ধও করতে পারছে না, সেইগুলোর সুযোগ সুবিধা বন্ধ করে দিয়েছে। এই তালিকায় প্রথমে আছে প্রথম আলো ও দ্যা ডেইলি স্টার পত্রিকা। অন্যসব গণমাধ্যম হাসিনার কঠন সেন্সর শিপে তালাবদ্ধ। অন্যদিকে ডিজিটাল নিরাপত্যা আইন দিয়ে গণমাধ্যমকে কোনঠাসা করে রাখা হয়েছে। এসব মিডিয়াকে বিভিন্নভাবে অনৈতিক সুবিধা দিয়ে গোলামের মতো ব্যবহার করছে সরকার দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। তাদের কাজ হল এখন শুধু হাসিনার কথিত উন্নয়নের প্রচার করা।
প্রতিটা মিডিয়ার মালিকদের মাথার ওপর হাসিনা বন্দুক তাক করে রেখেছে। কোন প্রকার সমালোচনা হলেই নিবন্ধন বাতিল, সম্প্রচার বন্ধ। বন্ধ করে দেয়ার ভয়ে এখন আর কেউ হাসিনার অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে না। এই হল বাংলাদেশের মিডিয়ার সত্যিকারের স্বাধীনতা।
কিন্তু লক্ষণীয় বিষয় হল-মিডিয়াগুলো উন্নয়নের এত প্রচার করার পরও শেখ হাসিনা সন্তোষ্ট নয়। আরো বেশি বেশি প্রচার করতে হবে। এমনকি ধারাবাহিকভাবে উন্নয়নের প্রচার করতে হবে। এই জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে লিখিত আকারে নোটিশ দেয়া হয়েছে। নোটিশে বলা হয়েছে-পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে প্রতিদিন নিউজ করার জন্য।
একটি গণমাধ্যমের খবরে দেখা গেছে, পদ্মা সেতুর শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন মাধ্যমে প্রায় আড়াই কোটি খবর প্রকাশ হয়েছে। দেশের কোনো একটি স্থাপনা নিয়ে এত প্রতিবেদন করার ঘটনা পৃথিবীর আর কোনো দেশে ঘটেনি। এটা একটা নজিরবিহীন ঘটনা।
এখন প্রশ্ন হল-সরকারের পক্ষ থেকে এভাবে সিরিজ প্রচারের নির্দেশনা কতটা যৌক্তিক?
দেখা গেছ, এর আগে ‘বাংলাদেশ বর্তমানে শতভাগ বিদ্যুতায়নের দেশ’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। তবে এই বিষয়টি প্রচার করতে গিয়ে “দক্ষিন এশিয়ায় প্রথম ১০০% বিদ্যুতের দেশ বাংলাদেশ” শীর্ষক একটি তথ্য দেশীয় সব গণমাধ্যমে ঢালাও ভাবে প্রকাশ করা হয়। তবে সেটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়। রিউমার স্ক্যানারের অনুসন্ধ্যানে দেখা যায় দক্ষিন এশিয়ায় বাংলাদেশ প্রথম শতভাগ বিদ্যুৎ এর দেশ শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা। বরং বাংলাদেশের পূর্বে দক্ষিন এশিয়ায় ভুটান, মালদ্বীপ এবং শ্রীলঙ্কা শতভাগ বিদ্যুতায়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে।
গেল বছরে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ব্যাপকহারে দমন-পীড়নসহ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন এমন ৩৭ জন রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধানের একটি তালিকা প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক সংগঠন “রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স” বা আরএসএফ। সেখানে উঠে আসে বাংলাদেশের কথিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের এই নোটিশ পুরোপুরি স্বাধীন ও মুক্ত গণমাধ্যম আইনের পরিপন্থী। এই নোটিই প্রমাণ করে সরকার দেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করেছে।
এদিকে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের চলমান প্রক্রিয়ায় ১৭৯টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল বন্ধ করতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আরো কয়েকটি বন্ধের লক্ষ্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে বলে জানিয়েছেন ফ্যাসিবাদী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই শুরু হয় গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করা। আওয়ামী পন্থি সম্পাদক ও ব্যবসায়ীদের প্রতিষ্ঠিত পত্রিকা এবং টেলিভিশন চ্যানেল ছাড়া ভিন্নমতের সব গণমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে শেখ হাসিনার ক্ষমতার আসার প্রথম ৪ বছরের মধ্যেই। এরপর ধারাবাহিকভাবে বন্ধ করা হচ্ছে অনলাইন নিউজ পোর্টাল। এমন কি ফেইসবুকে কেউ সরকারের অগণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ড ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কথা বললে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হচ্ছে।
Discussion about this post