ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের মনোনীত নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান বলেছেন-“ইভিএমের মধ্যে চ্যালেঞ্জ একটাই, আর কোনো চ্যালেঞ্জ আমি দেখি না। আর তা হচ্ছে গোপন কক্ষে একজন করে ডাকাত, সন্ত্রাসী দাঁড়িয়ে থাকে। ‘আপনার ভোট হয়ে গেছে চলে যান’। দিস ইজ দ্য চ্যালেঞ্জ।”
এর মাধ্যমে তিনি স্বীকার করে নিলেন, শেখ হাসিনার শাসনে ভোটের সময় একজন করে সরকার দলীয় ডাকাত-সন্ত্রাসী দাড়িয়ে থাকেন এবং ভোট নিয়ন্ত্রণ করেন। ভোটারদের বলেন, আপনার ভোট হয়ে গেছে চলে যান।
সোমবার (২০ মে) রাজধানীর নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আহসান হাবিব এ মন্তব্য করেন।
ভোটের আগের রাতেই ব্যালটে সীল মেরে বাক্স ভর্তি করে রাখা এবং ভোটারকে ভোট হয়ে গেছে বলে কেন্দ্র থেকে ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনা সবারই জানা। বিশেষ করে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনের পর এই বিষয়টি বিশেষভাবেই সমালোচিত। নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব এটাকে অফিসিয়ালি স্বীকার করে নিলেন তাঁর বক্তব্যের মাধ্যমে। তবে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেছেন, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এটি হবে না।
তিনি বলেন, কেন্দ্রগুলোতে ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা থাকবে। সাংবাদিকদের ভোটকেন্দ্রে যেতে দেওয়া হবে। তাঁরা ভেতরে গিয়ে এমন কিছু পেয়ে ছবি দিলে সঙ্গে সঙ্গে ভোট বন্ধ করে দেওয়া হবে। দায়ী প্রিজাইডিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রতিনিধিদের ইভিএমের কাস্টমাইজেশন (কেন্দ্রভিত্তিক ভোটার ও প্রার্থীদের তথ্য ইনপুট দেওয়া) প্রক্রিয়া দেখানো হয়।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, , কাস্টমাইজেশন দেখতে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের ২১ জন প্রতিনিধি নির্বাচন ভবনে এসেছিলেন। এর মধ্যে দুজন ছিলেন বিএনপি’র বহিষ্কৃত নেতা মনিরুল হকের (সাক্কু) প্রতিনিধি। কাস্টমাইজেশন প্রক্রিয়ার পাশাপাশি ইভিএম কীভাবে কাজ করে, সেটিও প্রতিনিধিদের দেখানো হয়।
কাস্টমাইজেশন দেখার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি মনিরুল হকের প্রতিনিধিরা।
তবে, অন্য কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রতিনিধিদের কেউ কেউ বলেছেন, তাঁরা ইভিএমের সোর্স কোড জানতে চেয়েছিলেন। নিরাপত্তার স্বার্থে তা প্রকাশ করা হবে না বলে তাঁদের জানানো হয়েছে। কেউ কেউ ভোট দেওয়ার পর যে ডেটা স্টোরেজ থাকে, সেটা দেখতে চেয়েছিলেন। তবে তা দেখানো হয়নি।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী কাজী মাহবুবুর রহমানের প্রতিনিধি কাজী মশিউর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, তিনি ইভিএমের কারিগরি দিকগুলো নিয়ে জানতে চেয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ইভিএমের সফটওয়্যারের সোর্স কোড যেন তাঁদের দেখানো হয়। এটি দেখলে বুঝা যাবে, এর ভেতরে কিছু করার সুযোগ আছে কি না। যেমন ১০ ভোট এক প্রতীকে পড়বে, এর পরের ভোট আরেক প্রতীকে পড়বে এ ধরনের কিছু করা সম্ভব কি না। ইসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সোর্স কোড প্রকাশ করা হবে না। সব মেশিনে একই সোর্স কোড ব্যবহার করা হবে।
এ বিষয়ে ইভিএম প্রকল্পের পরিচালক সৈয়দ রাকিবুল হাসান বলেন, সোর্স কোড নিরাপত্তার বিষয়। এটি কখনো কাউকে দেওয়া হবে না। কারণ, এর সঙ্গে নিরাপত্তার বিষয় জড়িত। তবে মেশিন ঠিকভাবে কাজ করছে কি না, সেটা যাচাইয়ের সুযোগ থাকছে। ভোটের ফলাফল থেকে বোঝা যায়, এটা ঠিকভাবে কাজ করছে কি না।
সূত্র: আমারদেশ
Discussion about this post