অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময় সভাসমাবেশে ছাত্রলীগকে কলম তুলে দিয়েছেন বলে দাবি করেন। কিন্তু বাস্তবে ছাত্রলীগের হাতে দেখা মেলে চা-পাতি, রাম দা থেকে শুরু করে বিভিন্ন শটগান যা নিয়ে ছাত্রলীগ হয়ে উঠেছে এক আতঙ্কের নাম। বিভিন্ন ক্যাম্পাস থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণ, খুন, লুন্ঠনসহ অপকর্মে ছাত্রলীগের জুড়ি নেই। এবার ক্যাম্পাস রাজনীতিতে বিরোধী দলের ওপর আবারও বেপরওয়া হয়ে উঠেছে ছাত্রলীগ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের ওপর চাপাতি, দেশীয় অস্ত্র, রড, লাঠি ও হকিস্টিক দিয়ে ভয়াবহ তাণ্ডব চালিয়েছে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের তাণ্ডব থেকে রেহাই পায়নি ছাত্রীরাও। ছাত্রলীগের তাণ্ডবে ছাত্রদলের সদ্য সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেনের দুই হাত ভেঙে গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মানসুরা আলমসহ অন্তত ৩০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।
এই হামলা ও তাণ্ডবের মাধ্যমে ছাত্রলীগের জঙ্গি সন্ত্রাসী চরিত্রই বারবার প্রকাশ করছে জাতির সামনে।
মঙ্গলবার (২৪ মে) ছাত্রদলের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি ছিল। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে সামনে সমবেত হয়ে মধুর ক্যান্টিনে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির দিকে রওয়ানা দেওয়ার পরই হামলা চালায় ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে ছাত্রদলের ওপর এই হামলা চালায়।
সশস্ত্র তাণ্ডবের পর ছাত্রলীগ বলছে, এই হামলা ‘প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ’।
ছাত্রদলের ক্যাম্পাসে আসার খবর পেয়ে সকাল থেকেই ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা কর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, মধুর ক্যান্টিন ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নিয়ে ওঁত পেতে থাকে। সাড়ে নয়টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে থেকে ছাত্রদলের নেতা কর্মীরা মধুর ক্যান্টিনের দিকে রওয়ানা দেয়। কয়েক শ’ নেতাকর্মী একসঙ্গে মধুর ক্যান্টিনে যাওয়ার পথে শহীদ মিনারের সামনে হামলার শিকার হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছাত্রদল শান্তিপূর্ণভাবে এগিয়ে যাচ্ছিল। অথচ, ছাত্রলীগ তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. রাকিবুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি রাশেদ ইকবাল খান, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আকতার হোসেন ও সদস্যসচিব আমানউল্লাহ আমানসহ পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে টিএসসির দিকে যাচ্ছিল। তিনি বলেন, দুই দিন ধরে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসের মহড়া দিচ্ছিল। তাই ছাত্রদল মিছিলে কোনো স্লোগান পর্যন্ত দেয়নি। তিনি আরো জানান, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাও অবস্থান নিয়েছিল। তারা আক্রমণ করতে আসলে তাঁদের সঙ্গে আমরা কথা বলি। রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ছাত্রলীগের সদস্যদের জানাই আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করছি, আমাদের অপরাধটা কী?’ এসময় তারা বিনা উস্কানিতেই ছাত্রদলের ওপর হামলা করে বলে জানান এই নেতা। হামলায় কেন্দ্রীয় নেতা রাশেদ ইকবাল খান, আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়াসহ অন্তত ৩০ জন নেতা-কর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন বলে দাবী করেন তিনি।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের সরাসরি নির্দেশে ছাত্রদলের ওপর হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন রাকিবুল ইসলাম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অবিলম্বে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিদাবী জানিয়েছে ছাত্রদল ।
ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়া বলেন, পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময় সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ তাদের রুটিন ওয়ার্ক অনুযায়ী আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। আমরা আবারও ক্যাম্পাসে যাব। আমাদের ক্যাম্পাসে আমরাই থাকব। যত সন্ত্রাসী কার্যক্রমই হোক, আমরা আমাদের কাজ করে যাব, সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমরা থাকতে চাই।
হামলাকারীদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ও জগন্নাথ হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ছাড়াও বহিরাগত সন্ত্রাসীরা অংশ নেন বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আকতার হোসেন। তিনি বলেন, ছাত্রলীগের হামলায় আহত অনেক নেতা-কর্মী জীবন-মৃত্যুর শঙ্কায় রয়েছেন। চিকিৎসা শেষে ছাত্রদল অবশ্যই ক্যাম্পাসে যাবে।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব আমানউল্লাহ আমান বলেন, ছাত্রলীগ হকিস্টিক, চাপাতি ও রডসহ দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আমাদের ওপর হামলা করেছে। আমাদের ক্যাম্পাসে আসাকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসের পয়েন্টে পয়েন্টে ছাত্রলীগ অবস্থান নিয়েছিল। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে থেকে আমাদের মিছিল শুরু হয় মিছিলটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে পৌঁছাতেই ছাত্রলীগের তিন শতাধিক নেতা-কর্মীর একটি দল আমাদের বাধা দেয়। তারা প্রায় সকলেই ছিল সশস্ত্র অবস্থায়। তারা বিনা উসকানিতে আমাদের ওপর হামলা চালিয়ে তাণ্ডব শুরু করে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি পদ্মা সেতুকে ঘিরে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে ফ্যাসিবাদি সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি মন্তব্যের প্রতিবাদে দুইদিন আগে টিএসসিতে সমাবেশ করে ছাত্রদল। এর জেরে বিভিন্ন হলে পাল্টা প্রতিবাদ সমাবেশ করে ছাত্রলীগ।
মঙ্গলবার সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে সংবাদ সম্মেলন করার কথা ছিল ছাত্রদলের। সংবাদ সম্মেলনে রওয়ানা দেওয়ার পরই তাদের উপর হামলা চালায়।
Discussion about this post