অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
অবশেষে চাকরি খোয়ালেন সেই সিরিয়াল কিলার খ্যাত পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন। যিনি সর্বশেষ ট্যুরিস্ট পুলিশের সিলেট অঞ্চলে দায়িত্বরত ছিলেন। সাড়ে পাঁচ বছর আগের অপকর্মের দায়ে তাকে অপসারন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ।
মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আলতাফ হোসেন ২০১৬ সালের ২৩ জুলাই থেকে পরের বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার থাকা কালিন ১২০ ভরি সোনাসহ এক সোনা চোরাকারবারিকে আটক করেন। থানায় উদ্ধার করা সোনার জব্দ তালিকা করা হলেও মাদকের মামলা দিয়ে তাকে ফাঁসিয়ে দেন। স্বর্ণ উদ্ধারের ঘটনা মাদক উদ্ধারের ঘটনায় সাজানোর বিষয়টি জানা সত্ত্বেও ধামা চাপা দেন সিরিয়াল কিলার আলতাফ।
পুলিশের পক্ষ থেকে ঘটনাটি তদন্ত করে সত্যতা পাওয়ায় ২০১৯ সালে আলতাফ হোসেনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। এরপর আলতাফ হোসেনের ব্যাখ্যাও নেওয়া হয়। পরে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আতাউল কিবরিয়া এ বিষয়ে অধিকতর তদন্ত করেন। সেখানে আলতাফ হোসেনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে বহিষ্কার করা হয়।
এর আগে ঝিনাইদহের ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে এই আলতাফ। ২০১৩ সালের ৪ ফেব্রুয়ারী থেকে ২০১৬ সালের ২২ জুলাই পর্যন্ত ঝিনাইদহ জেলায় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের হত্যার কাজে নেতৃত্ব দেয় সে। প্রায় দুই ডজন হত্যাকান্ডের সাথে সরাসরি জড়িত থাকার প্রমাণও রয়েছে এই এসপির বিরুদ্ধে। শুধুমাত্র ঝিনাইদহ জেলায় ২০১৩ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত মাত্র তিন বছরে পুলিশ কর্তৃক বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন অন্তত ৩৩ জন। যার অধিকাংশের সাথেই জড়িত ছিলেন আলতাফ হোসেন। সহযোগী হিসেবে ছিল আজবাহার আলী শেখ। দুজন মিলে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে সরকারকে খুশি করে হাতিয়ে নিয়েছেন রাষ্ট্রপতি পদক। ২০১৬ সালের ২২ জুলাই আলতাফ হোসেন সাতক্ষীরায় বদলী হলে এ হত্যা মিশনের দায়িত্ব গ্রহণ করে পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান। অল্প সময়ের ব্যবধানের আজবাহার আলীর সহযোগীতায় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের হত্যার কাজে দক্ষতা দেখাতে সক্ষম হন তিনিও।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অন্যতম শীর্ষ নেতা আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের আদেশে সারাদেশে যে গণআন্দোলন শুরু হয় তা দমন করতে নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি। এতে সারাদেশে প্রায় আড়াই শতাধিক মানুষ নিহত হয়। ঐ সময় ঝিনাইদহ জেলার হরিনাকুন্ডু উপজেলায় আন্দোলনরত তৌহিদী জনতার উপর গুলি ছুড়লে জনরোষের শিকার হয়ে গণপিটুনিতে ওমর ফারুক নামক এক পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। এর কথিত প্রতিশোধ নিতেই মূলত আওয়ামী সরকারের পক্ষ থেকে পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন ও সহকারী পুলিশ সুপার আজাবাহার আলী শেখকে বিশেষভাবে দায়িত্ব দেয়া হয়।
এরপর থেকে কারণে অকারণে জামায়াত ও শিবির নেতা-কর্মীদের খুঁজে খুঁজে হত্যা করার মিশনে নামে তারা। এবং প্রতিটি হত্যাকান্ডের পর তারা এগুলোকে বৈধতা দিতে আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র উদ্ধারের কথা বলে প্রায় একই স্ক্রিপ্টে কথিত বন্দুকযুদ্ধের নাটক মঞ্চস্থ করে।
পরিকল্পিতভাবে জামায়াত শিবিরের নেতা-কর্মীদের গুম ও হত্যাকান্ডের এই কাজে ঘুরে ফিরে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায়ও উঠে এসেছেও ওই তিন সিরিয়াল কিলারের নাম। যাদের মধ্যে পুলিশ সুপার মো: আলতাফ হোসেন, সহকারী পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ এবং পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান।
ঝিনাইদহে রাজনৈতিক নেতা কর্মী হত্যার বিশেষ করে জামায়াত শিবির নেতা-কর্মীদের হত্যার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানের করুণ মৃত্যু হয়েছে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে। অন্যদিকে পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন। যে ক্ষমতাসীনদের খুশি করতে একের পর কুকীর্তি করেছেন তারাই সেই অপকর্মের দায়ে তাকে চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হলো। বাকি আছেন সিরিয়াল কিলার আজবাহার আলী। সম্প্রতি সিলেট কোতোয়ালী থানাধীন জেলরোডে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিবাদ মিছিলে অতর্কিত হামলা ও গুলি চালিয়ে আবার আলোচনায় এসেছেন তিনি।
এদিকে সিরিয়াল কিলার খ্যাত পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেনের চাকরিচ্যুতের ঘটনায় উচ্ছ্বাস ছড়িয়েছে ঝিনাইদহে। সাধারণ মানুষ বলছেন, যে সরকারকে খুশি করতে তারা মারিয়া হয়ে উঠেছিলো সেই সরকারই তাদেরকে চাকরিচ্যুত করেছে। জুলুমবাজদের পরিণতি এমনই হওয়া উচিৎ। যাতে তারা শিক্ষা নিতে পারে। তারা বলছেন, এত মানুষকে হত্যা করেও রক্ষা হয়নি এসপি মিজানের। সেই জনপদের মানুষ আজও বেঁচে আছে, কিন্তু সেই এসপি মিজান নেই। করোনায় প্রাণ হারিয়েছে সে। আরেক জন আলতাফ। যে চাকরি বাঁচাতে এত গুলো নিরাপরাধ মানুষকে গুলি করে হত্যা করলো শেষ পর্যন্ত সেই চাকরিই তাকে হারাতে হলো। এখন সেই সিরিয়াল কিলার আজবাহার আলীর পরিনতি দেখার অপেক্ষা।
আরও পড়ুন: সিলেটে জামায়াতের মিছিলে হামলার নেপথ্যে সেই সিরিয়াল কিলার আজবাহার আলী
Discussion about this post