কপালে টিপ পরায় রাজধানীর তেজগাঁও কলেজের প্রভাষক লতা সমাদ্দারকে পুলিশ সদস্যের কটূক্তি করার যে অভিযোগ উঠেছে তার প্রমাণ পায়নি ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটি।
সেদিন পুলিশ সদস্যের সঙ্গে ওই নারীর বাকবিতণ্ডার সত্যতা পেলেও তা বাইকের ধাক্কা লাগাকে কেন্দ্র করে হয়েছিল বলে প্রমাণ পেয়েছে কমিটি।
তদন্ত কমিটি ও পুলিশের বেশ কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, উল্টো পথে বাইক নিয়ে যাওয়ার সময় লতার সমাদ্দারের পায়ে বাইক লাগলে পুলিশ সদস্য নাজমুল তারেকের সঙ্গে লতার তর্কাতর্কি হয়।
তেজগাঁও কলেজের থিয়েটার অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক লতা সমাদ্দার গত ২ এপ্রিল কলেজের কাছে হয়রানির শিকার হন বলে একটি অভিযোগ করেন। পুলিশের পোশাক পরা এক ব্যক্তি ‘টিপ পরছোস কেন’ বলে গালি দিয়েছেন উল্লেখ করে শেরেবাংলা নগর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন তিনি।
প্রতিবাদ জানালে নাজমুল তারেক তার গায়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন তেজগাঁও কলেজের ওই নারী প্রভাষক। সেজন্য জড়িত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
ঘটনাটি জানাজানি হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। অনেকেই প্রতিবাদ জানিয়ে নিজের টিপ পরা ছবি পোস্ট করেন। এর প্রেক্ষিতে ৪ এপ্রিল নাজমুল তারেককে শনাক্ত করে পুলিশ। তীব্র সমালোচনার মুখে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ঘটনা অনুসন্ধানে গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি।
তদন্ত শেষে গত বৃহস্পতিবার ডিএমপি কমিশনার বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। প্রাথমিক তদন্তে কমিটি তর্কাতর্কির সত্যতা পেলেও তা বাইকের ধাক্কাকে কেন্দ্র করে হয়েছে বলে প্রমাণ পায় কমিটি।
ডিএমপির একটি সূত্র জানিয়েছে, ঘটনার পর তদন্ত কমিটি লতা সমাদ্দার ও কনস্টেবলকে পৃথকভাবে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করে। ওই কনস্টেবলকে পৃথকভাবে পুরো ঘটনা জানতে চায় তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের ওই সদস্য তার স্ত্রী সেদিন মোটরসাইকেলে ছিল বলে মিথ্যা তথ্য দেন, যা পরবর্তীতে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে সত্যতা মেলেনি।
অন্যদিকে লতা সমাদ্দারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি স্বীকার করেছেন, তার সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়েছিল। আর সেই বাকবিতণ্ডার সূত্র হয় মোটরসাইকেলের ধাক্কাকে কেন্দ্র করে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএমপির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘একটা ঘটনা ঘটলে তার সাক্ষ্যপ্রমাণ লাগবে। কিন্তু এই ঘটনায় কোনো সাক্ষ্য নেই, প্রত্যক্ষদর্শীও নেই। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পেশ করেছে সেখানে টিপের বিষয়টি স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়নি। মূলত পায়ে মোটরসাইকেল ধাক্কা লাগার কারণ থেকেই ঝগড়াবিবাদ হয়। এটি প্রমাণিত হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। তবে ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশ কনস্টেবল মিথ্যা তথ্য দেওয়ায় এবং উল্টো পথে গাড়ি চালানোর অপরাধে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
ডিএমপি পুলিশের ওই কর্মকর্তা আরও জানান, টিপকাণ্ডের বিষয়টি তদন্তে প্রমাণিত না হলেও সেই নারীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেবে না পুলিশ। তবে বাকবিতণ্ডার বিষয়টিকে টিপকাণ্ডে পরিণত করে গুজব ছড়ানোয় পুলিশের মানমর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে মনে করেন তারা।
ডিএমপি মিডিয়া বিভাগের ডিসি ফারুক হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘আমরা যতদূর জানতে পেরেছি তদন্ত রিপোর্টের বিষয়টা তা হলো আমাদের কনস্টেবল উল্টো পথে যাওয়ার সময় ওই মহিলার পায়ে মোটরসাইকেল লাগে। এ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে এক ধরনের ঝগড়া বিবাদ হয়। এ ঘটনার পর কনস্টেবল আমাদের কাছে বলেছিলেন যে তার স্ত্রী মোটরসাইকেলে ছিল। এটি সে মিথ্যা বলেছে। সে সময় তার স্ত্রী মোটরসাইকেলে ছিল না। তবে তিনি উল্টোপথে আসার সময় মোটরসাইকেলের ধাক্কা লাগে লতা সমাদ্দারের গায়ে। এ নিয়ে লতা সমাদ্দারের সঙ্গে তার ঝগড়া-বিবাদ হয়েছে। তদন্ত কমিটি সে বিষয়টির প্রমাণ পেয়েছে। তবে টিপের বিষয়টি স্পষ্ট নয়।’
সূত্র: ঢাকা মেইল
Discussion about this post