কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু। অর্ধযুগ আগে গোপন হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তিনি। তনু হত্যার ৬ বছর পূর্ণ হয়েছে রোববার। আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের এখনো কোনো কূল-কিনারা করতে পারেনি আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তনুর পরিবারের সদস্যরা।
দীর্ঘ এই সময়েও তনু হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচিত না হওয়ায় অনেকটা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন তনুর মা-বাবা ও অন্যান্যরা।
গত ৬ বছরে তনুর মৃত্যু নিয়ে একের পর নানা রহস্যের জন্ম দেয়। তবে মামলার সর্বশেষ তদন্ত সংস্থা পিবিআই তদন্তে তনুর পরিবারকে আশার আলো দেখালেও তারাও (পিবিআই) এখন আর তনুর পরিবারের সাথে যোগাযোগ রাখছে না। এমন অভিযোগ তনুর পরিবারের।
তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, করোনার জন্য গত বছরও বাড়ি যাওয়া হয়নি। বাড়ি গেলে কষ্ট আরো বেড়ে যায়। তিনি বলেন, পিবিআইয়ে মামলা যাওয়ার পর আশা করেছিলাম ন্যায়বিচার পাবো। কিন্তু বারবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বদল ছাড়া আর কোনো আশার কথা শুনিনি এখনো। আর কতদিন মেয়ে হত্যার বিচারের জন্য চোখের পানি ফেলতে হবে জানি না।
তনু হত্যার তদন্তে অগ্রগতির বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই ঢাকার পরিদর্শক মো: মজিবুর রহমান জানান, এরই মধ্যে একাধিকার ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ তনুর পরিবার ও স্কুলের শিক্ষকসহ কয়েকজনের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে, মামলার নথি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ঢাকা সিআইডি অফিসে তনুর ডিএনএ রিপোর্ট চেয়ে রিকোয়েস্ট লেটার দেয়া হয়েছে। এখনো ডিএনএ রিপোর্ট হাতে আসেনি, ডিএনএ রিপোর্ট পেলে তদন্তে আরো অগ্রগতি হতে পারে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ২০ মার্চ কুমিল্লা সেনানিবাসের একটি জঙ্গল থেকে তনুর লাশ উদ্ধারের পরদিন তার বাবা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কোতয়ালী মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। থানা পুলিশ, ডিবি ও সিআইডির পর বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গত ৬ বছরেও তনুর মৃত্যুর রহস্যের জট খোলেনি। আজ (২০ মার্চ) তার মৃত্যুবার্ষিকীতে তনুর গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার মির্জাপুরে দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে।
২০১৬ সালের গত ২০ মার্চ তনুর লাশ উদ্ধারের পর আদালতের নির্দেশে একই বছরের ৩০ মার্চ দ্বিতীয় দফায় ময়নাতদন্ত করা হয়। একই বছরের ৪ এপ্রিল তনুর প্রথম ও ১২ জুন দ্বিতীয় দফায় দেয়া ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে তার মৃত্যুর কারণ নির্ণয় করতে পারেনি কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের ডাক্তাররা। এর আগে মামলাটি থানা পুলিশ, ডিবি ও সিআইডডি তদন্ত করে।
সর্বশেষ ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে কুমিল্লা সিআইডি থেকে মামলার ডকেট পিবিআই ঢাকায় হস্তান্তরের পর তিন দফায় ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড অফিসে আসেন তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক মজিবুর রহমান। ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডে তনুর বাবা ইয়ার হোসেন কর্মরত। তখন তদন্ত দল তার সাথে কথা বলার পর সেনানিবাসের ভেতর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
সূত্র: নয়াদিগন্ত
Discussion about this post