অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট দিনটি ছিল শনিবার। ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামীলীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হয় সেদিন বিকেলে। আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ ২২ জন নিহত হয়েছিল। বহু মানুষ আহত হয়েছে। অল্পের জন্য সেদিন রক্ষা পেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমন বর্বরোচিত হত্যাকণ্ডের সাথে জড়িত তারা নিসেন্দে মানুষ নয়, এগুলো মানুষ নামের হিংস্র হায়ে না। রাজনৈতিক বিরোধ-মতভেদ থাকতেই পারে-কিন্তু এমন নির্মম হত্যাকাণ্ডকে সমর্থন করার কোনো সুযোগ নেই।
নির্মম এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনেক পানি ঘোলা হয়েছে। দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ শুরু থেকেই এই হত্যাকান্ডের দায় বিএনপি-জামায়াতের উপর চাপিয়ে আসছে। আওয়ামী লীগের ভাষায়-তখন ক্ষমতায় ছিল বিএনপি-জামায়াত জোট। তারাই গ্রেনেড মেরে শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। তারেক রহমান এই হামলার পরিকল্পনা করেছিল। এরপর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে তারেক রহমান, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মোজাহিদ ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ জামান বাবরকে আসামি করে নতুন করে চার্জশিট দাখিল করে। এমনকি তাদের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায়ও দিয়েছিল।
আওয়ামী লীগের অভিযোগ হল-গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর লোকজন সহ সরকারের উচ্চপর্যায়ের সবাই এই পরিকল্পনার কথা জানতো। সরকারের পরিকল্পনায় হওয়ায় প্রশাসন এই হত্যাকাণ্ড প্রতিরোধে আগাম কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এখন প্রশ্ন হল-গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন জানার পরও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। শেখ হাসিনা আগাম জানার পরও তিনি সেদিন এই সমাবেশে গেলেন কেন? তার দলের লোকজনতো আগেই জানতেন এমন একটা হামলা হতে পারে। এমনকি শেখ হাসিনাকে বিষয়টি অবহিতও করেছিলেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ হানিফের ছেলে সাঈদ খোকন শুক্রবার একটি সমাবেশে প্রকাশ্যে বলেছেন-হামলার কথা তিনি শেখ হাসিনাকে আগেই জানিয়েছিলেন।
সাঈদ খোকন বলেছেন, আমার বাবা মোহাম্মদ হানিফ তথ্য পেয়েছিলেন কিছু একটা হতে পারে। আমাকে সুধাসদনে পাঠিয়েছিলেন নেত্রীকে বার্তা পৌঁছে দিতে। নেত্রী সাংগঠনিক সফর শেষে সুধাসদনে আসেন এবং বিশ্রাম নেন। কারো সঙ্গে দেখা করছিলেন না। রাত তখন ১০টা পেরিয়ে গেছে। আমি সুধাসদনে উপস্থিত হই। প্রয়াত বজলু ভাইয়ের মাধ্যমে নেত্রীর সঙ্গে দেখা করলাম। তাকে জানালাম, আপনাকে জানানোর জন্য আব্বা আমাকে পাঠিয়েছেন। সম্ভাব্য হামলার বিষয়ে একটি আশঙ্কাজনক বার্তা আপনাকে পৌঁছে দিতে হবে।
হানিফপুত্র বলেন, আমি নেত্রীকে (শেখ হাসিনা) বললাম, একটা সম্ভাব্য হামলা চূড়ান্ত হয়েছে। সূত্রমতে, হামলাকারীরা ঢাকার ভেতরে চলে এসেছে। তাদের সম্ভাব্য হামলার স্থান সুধাসদনের এই বাসা, আপনার যাতায়াতের পথ এবং আমাদের অনুষ্ঠানস্থল। আব্বা বলেছেন, যে কোনোভাবেই হোক আপনাকে আমাদের বাসায় (নাজিরাবাজার) চলে যেতে। এখানে আপনি নিরাপদ নন। আমি আরও বললাম, আপনারও (শেখ হাসিনা) অনেক সূত্র থাকতে পারে। আপনি একটু কনফার্ম করে নেন। যে কোনো মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
সাঈদ খোকনের এই বক্তব্য প্রমাণ করে-গ্রেনেড হামলার এই পুরো ঘটনা সম্পর্কেই শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতারা অবগত ছিলেন। প্রশ্ন হল-জানার পর জীবনের ঝুকি নিয়ে শেখ হাসিনা সেদিন বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গেলেন কেন?
রাজনীতিবিদরা বলছেন, ঘটনাটিই ছিল আওয়ামী লীগের পরিকল্পনায়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের উপর দায় চাপাতেই তারা এমনটা করেছিল। তৎকালীন সরকারের পক্ষথেকে শোকবার্তা দেয়া হয়েছিলো এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনাকে বারবার আলোচনায় ডাকলেও তারা যেতে রাজি হননি। কারণ আওয়ামী লীগ জানতো গেলেই তাদের গোমর ফাঁস হয়ে যাবে।
দেখা গেছে, হামলার কয়েকদিন পরেই তৎকালীন সরকারের দিক থেকে বিরোধী দলের সাথে সংলাপে বসার আগ্রহ দেখানো হয়। ২৬ শে আগস্ট ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই-এর নেতাদের সাথে এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বলেন, তিনি সংলাপে আগ্রহী। এজন্য তিনি সকল পক্ষের সহযোগিতা কামনা করেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের তরফ থেকে সেটি নাকচ করে হরতাল দিয়ে দেশে অস্থিরতা তৈরী করে।
এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় ক্ষমতাসীন বিএনপি তরফ থেকে ৩০শে আগস্ট প্রতিবাদ কর্মসূচীর ঘোষণা করেন। বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভুঁইয়া এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিরোধী দলের সাথে সংলাপে বসার আগ্রহ মানে সরকারের দূর্বলতা নয়। বিরোধী দল ইচ্ছাকৃত-ভাবে একের পর এক হরতাল দিয়ে পায়ে পা রেখে ঝগড়া করার চেষ্টা করছে। আমাদের কর্মসূচী চলবে। এতে সংঘাত সৃষ্টি হলে বিরোধী দল দায়ী থাকবে।
এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গ্রেনেড হামলার কয়েকদিন পরেই পাঁচ বাহিনীর প্রধানদের সাথে বৈঠক করেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। দৈনিক ইত্তেফাক-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশব্যাপী অরাজক পরিস্থিতির আশংকায় সেনাবাহিনীকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া পুলিশের দিক থেকে তদন্ত শুরুর পাশাপাশি ইন্টারপোল-এর কাছ থেকে সহায়তার কথা জানিয়েছিল বিএনপি সরকার।
Discussion about this post