অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
আওয়ামী লীগের নতুন বিতর্কের নাম হেলেনা জাহাঙ্গীর। উপকমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে না পারার অযুহাত দেখিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয় হেলেনাকে। একই সঙ্গে, কুমিল্লা জে’লা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্যপদ থেকেও তাকে বাদ দেয়া হয়। শুধু তাই নয় বহিষ্কারের চার দিনের মাথায় তাকে গ্রেফতারও করা হয়।
ক্ষমতাসীন দলের এমন ঘটনা নতুন নয়। সম্রাট, পাপিয়ে থেকে আজ হেলেনা বহু নেতা কর্মীকে এভাবে প্রয়োজনে ব্যবহার করে অপ্রয়োজনে ছুড়ে ফেলেছে আওয়ামী লীগ। আবার কেঁচো খুড়তে সাপ বের হওয়ার ভয়ে প্রয়েজনীয় সব ব্যবস্থাও নিয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠেছে ক্ষমতাসীনদের প্রয়োজন ফুরালেই কি তাকে বহিষ্কার করা হয়? তখনই কি সেই নেতা কর্মী অনুপ্রবেশকারী হয়ে যায় নাকি গোমর ফাঁসের ভয়ে এসব নাটকীয়তা?
বিশ্লেষকরা বলছেন, গতকাল যিনি সম্রাট, আজ তিনি কারাগারে। গতকাল যিনি আদরণীয়–বরণীয় নেত্রী, আজ তিনি আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত। এটাই ক্ষমতাসীনদের চরিত্র। যে পাপিয়া ২০১০ সালে নরসিংদী শহর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক থেকে শুরু করে সর্বশেষ ২০১৮ সালে জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক বনে যায়। শুধু তাই নয় পাপিয়ার এই পদ এলাকায় নয় ঘোষিত হয় ঢাকা থেকে। অতএব পাপিয়া হঠাৎ উঠে আসা নেত্রী নন, ওপরের হাত অনেক দিন ধরেই তাঁকে ধাপের পর ধাপে টেনে তুলেছে। হঠাৎ কী এমন ভুল করে ফেললেন যে তাঁকে রসাতলে পড়তে হলো? তেমনি ঘটেছে হেলেনার ব্যপারেও। হেলেনা জাহাঙ্গীরও আওয়ামী লীগের এক সময় ত্যাগী নেতা ছিলেন। শেখ হাসিনা এক সময় পুরস্কৃতও করেছিলেন তাকে। সেই হেলেনাকে আজ বহিরাগত বলে চালিয়ে দিচ্ছিন। আসলে এসব বলে তারা পার পেতে চায় ক্ষমতাসীনেরা। এসব নেত্রীদের দিয়ে তারা যে অপকর্ম করেছে সেসব ঢেকে রাখতেই তারা এই কৌশল অবলম্বন করে।
দেখা গেছে, গতকাল ফেসবুক লাইভে এসে আওয়ামী লীগের বিরেুদ্ধে অনেক অভিযোগও করেছেন। ফেসবুক লাইভে এসে তিনি আবেগঘন হয়ে শেখ মুজিবের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আওয়ামী নেতা এমপিদের অপকর্মের বিষয়ে তুলে ধরেন। এছাড়া ক্ষমতাসীনদের মন্ত্রী থেকে শুরু করে সকল পর্যায়ে তার রয়েছে সম্পর্ক। তিনি বলেন, আমার একটি টেলিভিশন আছে ভুর্তকি দিয়ে আওয়ামী লীগের জন্য চালিয়ে যাচ্ছি। তার পরেও তাকে কেন পদ থেকে বাতিল করা হলো বলে আবেগী হয়ে জানতে চান ওই নেত্রী।
এছাড়া যে জয়যাত্রা টিভি আওয়ামী লীগের প্রচারের স্বার্থে ভুর্তকি দিয়ে চালিয়ে আসছিলো সেই যয়যাত্রা টেলিভিশনের কাগজপত্রও ভুয়া বলছেন প্রশাসন। শুধু তাই নয় তার বাসায় বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের মন্ত্রী এমপি থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা মদের আড্ডা বসাতেন। টাকার বিনিময়ে বহু নেতার রাতের খোরাকও হয়েছেন এই নেত্রী।
সূত্র বলছে, বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য বাহিষ্কার করা হলে ফেসবুক লাইভে এসে যখন ভেতরের বিভিন্ন কথা জনসম্মুখে নিয়ে আসতে থাকে তখনই নড়েচড়ে বসে আওয়ামী লীগের নেতারা। তাদের শঙ্কা ঘুচাতে তার বাসায় অভিযান চালানোর নাটক সাজিয়ে তাকে গ্রেফতার করে।
রাজনৈতিক মহল বলছেন, ক্যাসিনো-কাণ্ডের আগে যেমন কেউ জানত না যুবলীগের কিছু নেতা–নেত্রীর চরিত্র। তারপর একদিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আচমকা অভিযান, অনেক হইচই অনেক আলোচনা। আবার সব চুপ। তারপর আবার কোথাও ধর্মের কল রহস্যজনক কারণে নড়ে ওঠে, মনে হয় এবার বুঝি দুর্নীতির ঝাড়বংশ সব ওপড়ানো হবে। সরল–সিধা মানুষেরা অনেক আশাবাদী হয়ে ওঠে। ইয়াবাবিরোধী দেশময় অভিযানের সময় এই আশা করা হয়েছে। কয়েকজন ধর্ষককে বিনা বিচারে হত্যার পরেও এমন আশা জেগেছে। পাপিয়ার গ্রেপ্তারের পরও কেউ কেউ বলছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান বন্ধ হয়নি। চলছে চলবে। তেমনি হেলেনাকেও জাতির সামনে নিয়ে আসা আই ওয়াশ মাত্র।
তারা বলেন, সম্রাট যেমন একা অপকর্ম করেননি, পাপিয়া, হেলেনারাও একা ছিলেন না। কোটি কোটি টাকা, গাড়ির ব্যবসা, ফ্ল্যাট-বাড়ি-গাড়ির মালিক এসব কথিত নেত্রীরা। তারা কি এত কিছু করে ফেললেন সবার অজান্তে? পাপিয়ার সময় আমরা দেখেছি, তার বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে ১৯ লাখ টাকা, তিনি কী করে এত কিছু করলেন যদি না এই অবৈধ কাজকর্মে ক্ষমতার পাহারা না থাকত? পাপিয়া, হেলেনা বা সম্রাটেরা হিমবাহের ভাসমান চূড়ামাত্র। তলায় রয়েছে আরও বড় ও গভীর এক জগৎ। এটাই বাংলাদেশের দুর্বৃত্ত রাজনৈতিক অর্থনীতির অন্দরমহল। সম্রাট বা পাপিয়া কিংবা হেলেনারা এই অন্দরমহলের টুকিটাকির নায়েব-গোমস্তামাত্র।
Discussion about this post