অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের অযুহাতে গত এক বছর ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। করোনা নিয়ন্ত্রণে না এলেও দেশের সব কিছু এখন আগের মতোই স্বাভাবিকভাবে থাকলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে সরকার নারাজ। স্বাস্থ্যবিধি মেনে অফিস-আদালত, গার্মেন্ট কারখানা, হাট-বাজার, শপিংমল সব কিছু খোলার অনুমদন দিলেও বাস্তবে নেই স্বাস্থ্যবিধির বালাইও। সব জায়গাতেই মানুষের উপচেপড়া ভিড়।
এছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর সভা-সমাবেশ, মিছিল, মিটিং সবই চলছে। আগের মতো চলছে সামাজিক অনুষ্ঠান এবং ওয়াজ মাহফিলগুলোও। এমত অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা নয় কেন? বিশ্ববিদ্যালয় না খোলার কারনে আন্দোলনেও নেমেছে শিক্ষার্থীরা।
এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশের করা এক অনলাইন জরিপে দেখা গেছে, শতকরা ৬৯ শতাংশ মানুষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পক্ষে মতামত দিয়েছেন। আর স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে ক্লাস নেয়ার পরামর্শও দিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে বারবার নোটিশের বদল ঘটছে।
এছাড়া হলগুলো বন্ধ থাকায় চরম সংকটে পড়েছে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে থাকার জন্য তারা পর্যাপ্ত মেস বা বাসা পাচ্ছে না। আর করোনার মধ্যে সব কিছু বন্ধ থাকায় মেসে থাকার জন্য তাদের কাছে পর্যাপ্ত টাকাও নেই। টিউশনি ও কুচিং বন্ধ থাকায় অনেক শিক্ষার্থীই চরম আর্থিক সংকটে আছে। তারাও এখন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো খুলে দেয়ার জন্য আন্দোলন করছে।
গত এক বছরে দেখা গেছে, শিক্ষামন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একাধিকবার খোলার নোটিশ দিলেও গোপন মিটিং এর মাধ্যমে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আবার নোটিশ তুলে নেয়া হয়। সবশেষে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে আগামী ২৪ই-মে ক্যাম্পাস ও হল খুলে দেয়ার ঘোষনা দিয়েছে। এই নোটিশও যে আদও কার্যকর হবে না তা নিয়ে শঙ্কিত শিক্ষার্থীরা।
অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, বার বার ঘোষনা দিয়ে আবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের পেছনে রহাস্য কি? আসল সমস্যা সরকার কী করোনার নিরাপত্তার কথা ভাবছে নাকি পেছনে অন্য কোনো বিষয় কাজ করছে?
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফেব্রুয়ারির প্রথম থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার জন্য সরকার জানুয়ারি মাসে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু ১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল জাজিরায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সেনাপ্রধানকে নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন নিয়ে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে থাকে। এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষই সরকারের উপর প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা বিচ্ছিন্নভাবে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করছে।
একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে সরকার জানতে পেরেছে, আল জাজিরার প্রতিবেদন প্রকাশের পর সাধারণ মানুষের মতো শিক্ষার্থীরাও ক্ষেপে আছে। প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তারা সংগঠিত হতে পারছে না। হল এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলেই তারা সংগঠিত হয়ে রাস্তায় নেমে আসতে পারে। যার প্রমাণ ইতমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে দেখা গেছে। এছাড়া সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনও চোখেপড়ার মতো।
গোয়েন্দা সংস্থা সরকারকে জানিয়েছে, ছাত্ররা যদি রাস্তায় নেমে আসে তাহলে তাদের সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের লোকজনও যোগ দেবে। রাস্তায় নেমে আসবে সাধারণ মানুষও। তখন পরিস্থিতি সামাল দেয়া সরকারের পক্ষে কঠিন হবে।
জানা গেছে, এসব তথ্য পাওয়ার পরই সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। করোনা কোনো বিষয় না, আসল বিষয় হলো-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে সরকার বিরোধী আন্দোলন ঠেকানো।