অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বিনাভোটে ক্ষমতায় আসার পর থেকে গত ১২ বছরে শেখ হাসিনার সরকার যেমন গুম, খুন, ধর্ষণ, লুটপাটসহ বিভিন্ন নৈরাজ্যে রেকর্ড গড়েছে তেমনি নিশি নির্বাচন থেকে শুরু করে ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় থাকার কৌশলও শিখিয়ে দিয়েছেন। অন্যদিকে তার পরম বন্ধু ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) এক যুগে সবচেয়ে বেশি নিরীহ বাংলাদেশীদের হত্যা করে রেকর্ডও গড়েছেন। এছাড়া এই এক যুগে বিচার বহির্ভূত হত্যায় এগিয়ে গেছে সুচক।
বাংলাদেশে বর্তমানে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ও আতঙ্কের বিষয়ের মধ্যে কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে গ্রেফতারকৃত আসামীকে ক্রসফায়ারে তথা গুলি করে হত্যা। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিরোধীদলের জনপ্রিয় কয়েক হাজার নেতাকর্মীদেরকে বাসাবাড়ি থেকে ধরে নিয়ে কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে। এর সাথে সাধারণ মানুষতো আছেই।
এমনকি চাঁদা না পেয়েও ক্ষমতাসীনদের পুলিশ নামের অমানুষগুলো বিভিন্ন ব্যবসায়ীদেরকে ধরে নিয়ে ক্রসফায়ারে হত্যা করেছে। একটি মানবাধিকার সংস্থার জরিপে দেখা গেছে, সর্বশেষ গত বছর ২০২০ সালে কমপক্ষে ১৮০ জন মানুষকে ক্রসফায়াস তথা বিনাবিচারে হত্যা করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরে এসব বিনাবিচারে হত্যা বন্ধ করতে সরকারের প্রতি আহবান জানালেও সরকার কোনো পাত্তাই দিচ্ছে না। বরং সরকারের পক্ষ থেকে উল্টো বলা হচ্ছে-দেশে বিনাবিচারে কাউকে হত্যা করা হচ্ছে না।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, এদেশে প্রথম ক্রসফায় তথা বিনাবিচারে হত্যার সূচনা করেছিল শেখ হাসিনার বাবা শেখ মুজিব।তার নির্দেশেই ১৯৭৫ সালের ১ জানুয়ারী বাংলাদেশ সর্বহারা পার্টির প্রধান ইঞ্জিনিয়ার সিরাজ সিকদারকে চট্টগ্রাম থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে বিমানে করে ঢাকায় নিয়ে আসে। এরপরের দিন বৃহষ্পতিবার ২ জানুয়ারী বন্দী সিরাজ সিকদারকে হত্যা করে পুলিশ।
সেদিন পুলিশের কাছে সিরাজ সিকদার হত্যার খবর শুনে শেখ মুজিব মহা উল্লাসে ফেটে পড়েন। এরপর শেখ মুজিব পার্লামেন্টে দম্ভভরে উচ্চারণ করলেন- “কোথায় আজ সিরাজ সিকদার?”
প্রকৃতপক্ষে ১৯৭৫ সালে সিরাজ সিকদার হত্যার তিন বছর আগে থেকেই অর্থাৎ শেখ মুজিব দেশে আসার পরে থেকে রাজনৈতিক হত্যাকান্ড চালিয়ে যেতে থাকে মুজিবের বাহিনী। এদের ভিন্ন ভিন্ন নাম ছিল- রক্ষী বাহিনী, লাল বাহিনী, নীল বাহিনী, এমনকি মুজিবের নিজের কন্ঠে শোনা গিয়েছিল, “লাল ঘোড়া দাবড়াইয়া দিমু! এইসব বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছিল ৩০ হাজার ছাত্র যুবক, সাধারণ মানুষ।
তবে সবকিছু ছাপিয়ে উঠছিল শেখ কামালের “সাদা মাইক্রেবাস বাহিনী।” বহু রাজনৈতিক বিরোধীদের ধরে এনে আবাহনী ক্লাবে টর্চার সেলে নির্যাতন শেষে হত্যা করা হয়েছিল। জনশ্রুতি আছে, সিরাজ শিকদারকে হত্যা করার আগে শেখ কামালও নির্যাতন করে শেখ মুজিবের কাছে ক্ষমা চাইতে বলেছিল। কিন্তু সিরাজ সিকদার তা প্রত্যাখ্যান করায় তাকে হত্যা করা হয়!
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তার বাবা শেখ মুজিবের সেই ক্রসফায়ার তথা বিনাবিচারে হত্যাকাণ্ডের ধারাবাহিকতা দেশে অব্যাহত রেখেছেন। প্রতিপক্ষকে নির্মূলে তিনি তার বাহিনী দিয়ে বিনাবিচারে মানুষ হত্যা করে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে তিনি কোনো কিছুকেই তোয়াক্কা করছেন না। এমনকি এসব হত্যাকাণ্ড থেকে তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দায়মুক্তি করে দিয়েছেন। দয়ার পরবর্তীতে কোনো সরকার তাদের বিচার না করতে পারে।
আরো পড়ুন:
গুম-খুন-ধর্ষণের সূচনা করেছিলো শেখ মুজিব!