অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
পরিস্থিতি যেন ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। ওয়াজ মাহফিল বন্ধ ও আলেম সমাজকে অশালীন ভাষায় গালি দেয়ার প্রতিবাদে শুক্রবার বাদ জুমা রাজধানীতে বিক্ষোভ করেছে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা। সেই বিক্ষোভে শেখ হাসিনার পেটুয়া বাহিনী পুলিশলীগের সদস্যরা অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। পুলিশের হামলায় হেফাজতের বেশ কিছু নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
অপরদিকে, শুক্রবার সারাদিনই মামুনুল হককে আটকাতে করতে চট্টগ্রামে অবরোধ করেছে ছাত্রলীগ-যুবলীগ। তবে, মামুনুল হককে তারা আটকাতে পারেনি। তাদেরকে ফাকি দিয়েই শুক্রবার ভোর রাতে চট্টগ্রামে পৌঁছেন মামুনুল হক।
এখন প্রশ্ন হলো-সরকার মামুনুল হকের বিরুদ্ধে এভাবে অ্যাকশনে যাচ্ছে কেন? দেশের সবখানেই তার মাহফিলগুলো বন্ধ করে দিচ্ছে কেন? ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা তার বিরুদ্ধে এত বিষোদগার করছে কেন? ইস্যু কি শুধুই ভাস্কর্য নাকি অন্য কিছুও আছে?
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভাস্কর্য আসল ইস্যু নয়। সরকারের টার্গেট হলো হেফাজতে ইসলাম। মামুনুল হক হলেন হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব। হেফাজতের বর্তমান পুরোটাই সরকারের বিরোধী হিসেবে পরিচিত। হেফাজতে সরকারের দালাল যারা ছিল সবাই এবার বাদ পড়েছে।
জানা গেছে, হেফাজতের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ এবার নতুন কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন। বিগত পাচ বছর ধরেই মুফতি ফয়জুল্লাহ সরকারের দালাল হিসেবে পরিচিত।
দেখা গেছে, সরকারি হালুয়া-রুটি খাওয়ার জন্য মুফতি ফয়জুল্লাহ মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামীকে মিসগাইড করে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন জোট থেকে বরে করে নিয়ে এসেছিল। পরে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী তারা আরেকটি জোট গঠন করেছিল। কিন্তু তাদের সেই জোট আর হালে পানি পায়নি।
তারপর, হেফাজতের আমির আল্লামা আহমদ শফীকে ভুল বুঝিয়ে ফয়জুল্লাহরাই গণভবনে হাসিনার কাছে নিয়েছিল। পরবর্তীতে ফয়জুল্লাহর দালালীর বিষয়টি সকল মহলেই প্রকাশ হয়ে যায়। এরপর থেকেই দেশের ওলামায়ে কেরাম মুফতি ফয়জুল্লাহকে সরকারের দালাল বলেই আখ্যা দিয়ে থাকে।
সর্বশেষ হেফাজতের নতুন কমিটি থেকে বাদ পড়ে মামুনুল হকের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে মুফতি ফয়জুল্লাহ। যদিও সরকারের ছত্র ছায়ায় আগে থেকে গ্রুপ গড়ে তুলেছে তারা। এই গ্রুপটির নেতৃত্বে ছিলেন আল্লামা শফীর ছেলে আনাস মাদানী ও মুফতি ফয়জুল্লাহ।
গত ১৭ সেপ্টেম্বর হেফাজতে ইসলামের আমীর শাহ আহমদ শফী মারা যান। এরপর থেকেই আমীর নির্বাচন নিয়ে সংগঠনটির মধ্যে নানা আলোচনা শুরু হয়। সরকার নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।
অনেক নেতারা বলছেন, সরকার বার বার ফাঁদে ফেলে আমাদের মধ্যে বিভক্ত আনার চেষ্টা করছে। এভাবে তাদের ফাঁদে পা দিয়ে চলতে থাকলে হেফাজতে ইসলাম অনেক উপদলে বিভক্ত হয়ে ক্রমেই অপ্রাসঙ্গিক ও মূল্যহীন হয়ে পড়বে। বাংলাদেশে ইসলামী আন্দোলন এভাবে বারবার ব্যর্থ হয়েছে। যে কারণে দেশটিতে অসংখ্য নাম সর্বস্ব ইসলামী দলের অস্তিত্ব রয়েছে। হেফাজতও সেই ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বের হতে পারল না।