সাঈদ রিমন ইতোমধ্যে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে পরিচিতি পেয়েছেন তার সচেতনতামূলক কার্যক্রমের কারণে। এ জন্য তাকে বলা হয় ‘সচেতনতার ফেরিওয়ালা’। তিনি নিয়মিত সড়ক দুর্ঘটনা, ছিনতাই, মাদক ও পকেটমারসহ বিভিন্ন বিষয়ে সচেতন করে থাকেন।
এসব বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে তিনি রাজধানীর বিভিন্ন গণপরিবহন, স্টেশন বা বাজারকে বেছে নেন। মাঝে মাঝে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়েও শিক্ষার্থীদের সচেতন করেন। কখনো নিজের ফেসবুক ওয়ালে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে সচেতন করেন। কখনো কখনো লিফলেট বা ফেস্টুনের আশ্রয়ও নেন রিমন।
এবারও এগিয়ে এসেছেন তিনি। করোনা রোধেও সচেতনতামূলক প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন রিমন। গত বছরের ডিসেম্বরের শেষদিকে চীনে করোনাভাইরাস বিস্তার লাভ করতে শুরু করলে নড়েচড়ে বসে বিশ্ব। কয়েক দিনের মধ্যেই তা ছড়িয়ে পড়তে থাকে বিশ্বের অন্য সব দেশে। ফলে আশঙ্কা তৈরি হয় বাংলাদেশেও।
সেই আশঙ্কা থেকেই সাঈদ রিমন অফিসে যাওয়া-আসার পথে রাজধানীর বিভিন্ন গণপরিবহনে করোনাভাইরাস সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে শুরু করেন। হ্যান্ডমাইক নিয়ে শার্টে লেখা সচেতনতামূলক বার্তা নিয়ে বাসে উঠতেন। তবে আসনে না বসে দাঁড়িয়ে থাকতেন, যাতে মানুষ বার্তাগুলো পড়তে পারে।
এভাবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে গত ২ মাস ধরে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালান তিনি। সেখানে নিজেকে বিভিন্নভাবে চরিত্রায়িত করে স্থিরচিত্র ধারন করেন এবং মানুষের মাঝে সচেতনতামূলক বার্তাগুলো পৌঁছে দেন। হাঁচি-কাশিতে টিস্যু, কাপড়, কনুই ব্যবহার, টাকা গণনার পর অবশ্যই হাত ধোয়া, সাবান বা স্যানিটাইজার ব্যবহার করে নিয়মিত হাত ধোয়ার জন্য উদ্বুব্ধ করেন, অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক, মুখ যাতে কেউ স্পর্শ না করেন।
কিন্তু করোনাভাইরাস বিস্তার রোধে গণপরিবহন একসময় বন্ধ করে দিলেও থেমে যাননি রিমন। তার প্রচারণা বন্ধ হলেও তিনি নিজ উদ্যোগে বাসায় রান্না করা খাবার রাস্তার অসহায় ও পথশিশুদের মধ্যে দিতে শুরু করেন। সেই খাবারগুলো রান্না করে দিয়েছেন তার সহধর্মিনী সাদিয়া মেমী।
সাঈদ রিমন বলেন, ‘বাংলাদেশের এই দুঃসময়ে অনেক পথশিশু, ভাসমান মানুষ পথে-ঘাটেই দিন-রাত কাটাচ্ছে। যা খুবই মর্মাহত করে। মানুষগুলো সামাজিক দূরত্ব কী, তা বুঝতে পারে না। তাদের নেই কোনো মাস্ক, নেই হাত ধোয়ার ব্যবস্হা। কতটা ঝুঁকি নিয়ে দিন-রাত রাস্তার পাশেই থাকতে হচ্ছে। বাসা থেকে বের হওয়া এ মুহূর্তে ঝুঁকির হলেও অসহায় মানুষের পাশে থাকতে পারছি, এটাই বড় কথা।’
তার এ কাজে অনুপ্রাণিত হয়ে প্রায় ২০০টি পরিবারের ৭ দিনের খাবারের ব্যবস্থা করতে এগিয়ে এসেছেন পরিচিত-অপরিচিত অনেকেই। প্রথমে ইমরান আহমেদ নামে একজন ১৫ জনের ৭ দিনের খাবারের ব্যবস্থা করে দিলেন। ফলে দ্রুত সময়ের মধ্যে রাস্তার অসহায় বা নিম্ন আয়ের মানুষের হাতে চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী তুলে দিচ্ছেন তিনি।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দেশের এমন দুর্যোগে সমাজের বিত্তবানসহ সব মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ অনেক বেশি প্রয়োজন।’ তার এ কাজে সহযোগিতা করেছেন আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বস্ত্র প্রকৌশল বিভাগের ১৫তম ব্যাচের বন্ধুরা, বিশেষ করে মাহফুজুল হক, সবুজ, রাজিব দাস।
এছাড়া আরজু ও বিমানবন্দর রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আকবর হোসেনসহ অনেকেই সাহায্য করছেন। আকবর হোসেন বলেন, ‘তিনি একক প্রচেষ্টায় যা করে যাচ্ছেন; তার পাশে থেকে সহযোগিতা করতে পেরে আমাদেরও ভালো লাগে। এর পাশাপাশি তিনি ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে করোনা সংক্রমণ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করছেন।’