দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে আইনে বলা হয়েছে শিক্ষাজীবনে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর দুটিতে প্রথম শ্রেণি থাকতে হবে। যদি কোনোটিতে দ্বিতীয় শ্রেণি থাকে, তাহলে বিকল্প হিসেবে পিএইচডি ডিগ্রি থাকতে হবে। কিন্তু আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামে (আইআইইউসি) উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে এ আইন মানা হয়নি। চট্টগ্রামের বেসরকারি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসেবে আছেন অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিম আরিফ। শিক্ষাজীবনে তিনি দ্বিতীয় শ্রেণিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন। কিন্তু তার কোনো পিএইচডি ডিগ্রি নেই। জাতীয় সংসদের প্রণীত আইনকে অবজ্ঞা করেই তাকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিম আরিফ ১৯৭৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক পদে যোগ দেন। ওই পদে যোগদানের জন্য তার নিজের হাতে লিখিত আবেদনপত্রের একটি কপি আমাদের হাতে এসেছে। সেখানে শিক্ষাগত যোগ্যতায় উল্লেখ করা হয়- তিনি সাতকানিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৭ সালে এসএসসি পাস করেন।
১৯৬৯ সালে তিনি সরকারি বাণিজ্য কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। একই কলেজ থেকে তিনি দ্বিতীয় শ্রেণিতে বিকম (অনার্স) ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ১৯৭৩ সালে প্রথম শ্রেণিতে এমকম ডিগ্রি অর্জন করেন। জানা যায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন- ২০১০ এর ধারা ৩১ (৩) অনুযায়ী উপাচার্য পদের জন্য যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই ধারায় উল্লেখ করা হয়, ‘ভাইস চ্যান্সেলর পদে নিয়োগের জন্য প্রথম শ্রেণি বা সমমানের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অথবা পিএইচডি ডিগ্রি এবং কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যূন ১০ বছরেই শিক্ষকতার অভিজ্ঞতাসহ গবেষণা বা প্রশাসনিক কাজে মোট ২০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
আইআইইউসি’র একাধিক শিক্ষক জানান, আনোয়ারুল আজিম আরিফ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। তিনি সরকারি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১১-২০১৫ পর্যন্ত উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন। এক্ষেত্রে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগের জন্য তার যথাযথ যোগ্যতা ছিল। কিন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনানুযায়ী তার নির্দিষ্ট যোগ্যতা নেই। কারণ তিনি দ্বিতীয় শ্রেণিতে অনার্স ডিগ্রি পাস করেছেন। এ ছাড়া বিকল্প যোগ্যতা হিসেবে তিনি কোনো পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করতে পারেননি। সেক্ষেত্রে তাকে আইআইইউসি’র উপাচার্য নিয়োগ দেয়ার মাধ্যমে জাতীয় সংসদের প্রণীত আইনের ব্যত্যয় ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির ইতিহাসে উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে আগে কখনো এরকম অনিয়ম হয়নি। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত আনোয়ারুল আজিম আরিফ মানবজমিনকে বলেন, ‘আমি তো আর আমাকে নিয়োগ দেইনি। আমাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিয়েছেন। আপনি উনার সঙ্গে, চ্যান্সেলরের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলেন।’ জানতে চাইলে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, আইআইইউসি’র উপাচার্য যদি নিজের যোগ্যতা গোপন করে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করে, তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Discussion about this post