র্যাগিংয়ের প্রতিবাদ করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স বিভাগের এক সাবেক শিক্ষার্থীকে মারধর করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল সংসদের সহসভাপতি ও হল ছাত্রলীগের নেতা এম এম কামাল উদ্দিনের নেতৃত্বে এই হামলা চালানো হয়েছে। মারধরের শিকার শিক্ষার্থীকে বাচাতে গিয়ে ক্যাম্পাসের শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত প্রক্টোরিয়াল টিমের চার সদস্য গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানা গেছে।
গত শুক্রবার রাত ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলার রোডের ব্রিটিশ কাউন্সিলসংলগ্ন স্থানে এই ঘটনা ঘটেছে। মারধরের শিকার রানা নাসের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স বিভাগের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। একই ঘটনায় মার্কেটিং বিভাগের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের এক নারী শিক্ষার্থীকে লাঞ্ছিত করা হয়।
ভুক্তভোগী রানা নাসের জানান, শুক্রবার রাতে আমার ছোট ভাই বাপ্পিকে চীনে পড়াশোনার বিষয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের এক বড় আপু পরামর্শ দিচ্ছিলেন। আমরা তিনজন ফুলার রোডের ব্রিটিশ কাউন্সিলের সামনে বসে কথা বলছিলাম। এ সময় আমার একটা জরুরি ফোন কল আসলে আমি ফোনে কথা বলতে বলতে একটু দূরে চলে যাই। একপর্যায়ে আমি পেছনে তাকিয়ে দেখি আমার ছোট ভাইকে ১০-১৫ জন ছেলে মারধর করছে। পরে দ্রুত সেখানে এসে চিৎকার করতে থাকি। চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন জড়ো হয়ে ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যায়। পালাতে গিয়ে এক শিক্ষার্থীকে আমরা ধরে ফেলি। পরে ওই শিক্ষার্থীর কাছে পরিচয় জানতে চাইলে সে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী বলে জানায়। এর কিছুক্ষণ পরে সলিমুল্লাহ হল সংসদের ভিপির নেতৃত্বে প্রায় ৬০-৭০ জন ছেলে সেখানে আসে। তারা আসার পর আমাদের পরিচয় দিয়ে কথা বলতে গেলে খারাপ ব্যবহার করে। এ সময় মার্কেটিং বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ওই বড় আপু ভিডিও করেন। এটা টের পেয়ে ভিডিও ডিলিট করতে আপুকে লাঞ্ছিত করে।
একপর্যায়ে আমি তাকে বাঁচাতে গেলে আমাকে বেধড়ক মারধর করে। পরে প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা আমাকে বাঁচাতে গেলে তারাও বেধড়ক মারধরের শিকার হন। মারধরে আমার চোখে মারাত্মক আঘাত পেয়েছি। এ ছাড়াও প্রক্টোরিয়াল টিমের চার সদস্য গুরুতর আহত হয়েছে ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এই ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে আমি লজ্জিত। এই ঘটনায় প্রক্টর অফিসে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি। এ ছাড়াও শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি।
এদিকে, মারধরের ঘটনা ধামাচাপা দিতে পরদিন শনিবার হলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ফুলার রোডের উদয়ন স্কুলের সামনে রাস্তা বন্ধ করে মানববন্ধন করেছে এস এম হল সংসদ। মানববন্ধনে হলের ভিপি এম এম কামাল উদ্দিন, জিএস সিজার তালুকদারসহ শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধন থেকে বহিরাগত মুক্ত ক্যাম্পাসের দাবি জানিয়েছেন তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রক্টরিয়াল টিমের একাধিক সদস্য জানান, প্রায় সময় তারা দেখেন, কামাল উদ্দিন ক্যাম্পাসে বহিরাগত বা সাবেক শিক্ষার্থীদের ধরে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মারধর করে তাদের সঙ্গে থাকা টাকা, মোবাইল ছিনতাই করে। এর আগেও কয়েকটি ঘটনায় আমরা বাধা দিয়েছি। আগের কয়েকটা ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে শুক্রবার আমাদের মারধর করেছেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী কালের কণ্ঠকে বলেন, ঘটনা সম্পর্কে প্রক্টরিয়াল টিমের মাধ্যমে অবহিত হয়েছি। ওই হলের শিক্ষার্থীরা প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যদের দায়িত্ব পালনে বাধা দিয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারা জড়িত প্রাথমিক কিছু তথ্য পেয়েছি। জড়িতদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়েল বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে এই বিষয়ে অভিযুক্ত সলিমুল্লাহ মুসলিম হল সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) কামাল উদ্দিনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও বন্ধ পাওয়া গেছে।
সূত্র: কালের কন্ঠ