বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ২৩, ২০২৫
Analysis BD
No Result
View All Result
No Result
View All Result
Analysis BD
No Result
View All Result
Home slide

কেমন ছিল ২০১৯-এ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস!

জানুয়ারি ২, ২০২০
in slide, Top Post, ব্লগ থেকে
Share on FacebookShare on Twitter

প্রায় তিন দশক পর সচল হল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু), আর এই বছরই ছাত্র আন্দোলনে অস্থির ছিল বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অনিয়ম, দুর্নীতি ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগে তুমুল আন্দোলনের মুখে পদ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক খোন্দকার নাসিরউদ্দিন। ছাত্রলীগ নেতাদের ‘কোটি টাকা চাঁদার ব্যবস্থা’ করে দেওয়ার অভিযোগে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চলছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধেও।

ছাত্র আন্দোলন ও ক্যাম্পাসে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেসরকারি আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও কিছু উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। এদিকে শিবির সন্দেহে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে হত্যার পর বিচার চেয়ে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে এলে সেখানে তৈরি হয় অচলাবস্থা। আন্দোলনের মধ্যে বেরিয়ে আসে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনা। নির্মম ওই হত্যাকাণ্ডের পর ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয় দেশের প্রধান প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়টি।

২৮ বছরের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর গত ১১ মার্চ ডাকসু ও ১৮টি হল সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ভোটের ফলে ডাকসুতে মোট ২৫টি পদের মধ্যে জিএস-এজিএসসহ ২৩টি পদে জিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় সরকার সমর্থক ছাত্রলীগ। তবে ভিপি ও সমাজসেবা সম্পাদকের পদে জিতে যান সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের দুই নেতা।

গত ২৩ মার্চ ডাকসুর নতুন পর্ষদের প্রথম সভা চলার সময় ডাকসু ভবনের বাইরে পুনর্নির্বাচনের দাবিতে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক হলে ভোট শুরুর আগে ভোটের চিহ্নসহ বস্তাভর্তি ব্যালট উদ্ধার এবং আরেক হলে ভোটগ্রহণ কক্ষের পেছনে আরেকটি কক্ষ থেকে ব্যালট পেপার বোঝাই ট্রাংক পাওয়ার ঘটনা ব্যাপক অসন্তোষ তৈরি করে। এরমধ্যে বিভিন্ন হলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সাধারণ ছাত্রদের ভোট দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ আসে।

প্রশ্নবিদ্ধ ওই ভোটেও ভিপি পদে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের পরাজয়ে ফল ঘোষণা কক্ষেই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখা দেয়। পরেও এ নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন ছাত্রলীগের একাংশের নেতারা। অন্যদিকে ডাকসু ভোট বাতিল করে নতুন নির্বাচনের দাবিতে ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচি পালিত হতে থাকে। সুষ্ঠু ভোটের দাবিতে অনশনেও বসেন শিক্ষার্থীরা, অনিয়ম খতিয়ে দেখা ও দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার আশ্বাসে এই কর্মসূচি থেকে সরে আসেন তারা।

বছরের শেষ দিকে ডাকসু ভবনে ঢুকে ভিপি নুরুল হক নূর ও তার সঙ্গীদের উপর হামলা ব্যাপক সমালোচনা তৈরি করে। হামলার জন্য মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামে একটি সংগঠনের পাশাপাশি ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মীকেও দায়ী করা হচ্ছে। ডাকসু ভবনের মধ্যে ভিপির উপর এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতারাও। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, হামলাকারী যেই হোক, কোনো ছাড় পাবে না।

বিদায়ী বছরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে অচলাবস্থার মধ্যে পড়তে হয় বেশ কিছু সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে। আন্দোলনের মুখে উপাচার্যের পদ ছাড়া অধ্যাপক খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। জাহাঙ্গীরনগরের উপাচার্য ফারজানা ইসলামও আছেন আলোচনায়।

এর মধ্যে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে উপাচার্যদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বলেছে, “বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে উপাচার্যরা নিজেদের মেধা, জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দিয়ে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য প্রতিপালন করে যাচ্ছেন। তবুও নানা কারণে কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিয়ম-নীতি অনুসরণে শিথিলতা দেখা যাচ্ছে। এসব কারণে উচ্চশিক্ষা প্রশাসনে সৃষ্টি হচ্ছে বিশৃঙ্খলা, যা কাম্য নয়।”

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান কাজী শহীদুল্লাহ ‍বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সরকারি-বেসরকারি সব বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু সমস্যা উদ্ভূত হয়। সেগুলো আমরা সমাধানের চেষ্টা চালাই। সমাধানের পর দেখা যায়, নতুন জায়গায় নতুন সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এটা এক ধরনের চলমান প্রক্রিয়া।”

উপাচার্যদের বিতর্কের মুখে পড়ার বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “উপাচার্যদের কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয় সব সময়। নিয়োগ নিয়ে দ্বন্দ্ব, স্থানীয় রাজনীতির প্রভাব এবং নিজেদের দলের মধ্যে স্বার্থের সংঘাতের ফলে তারা এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। এসব বিষয় মোকাবেলা করেই তাদের চলতে হবে। কিন্তু অনেক সময় তারা সেটি করতে পারেন না।”

প্রায় তিন দশক পর অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্যানেল বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতা নুরুল হক নূর ভিপি নির্বাচিত হন, সমাজসেবা সম্পাদক পদেও জয়ী হন একই প্যানেলের আখতার হোসেন। শিক্ষার্থীদের পরিবহন, সাংস্কৃতিক আয়োজন, নারী শিক্ষার্থীদের জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিনের ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের জন্য প্রশংসিত ডাকসু বিতর্কে ছিল নেতাদের কিছু কর্মকাণ্ডে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে চাঁদা দাবির খবর চাউর হওয়ার পর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় গোলাম রাব্বানীকে, যিনি ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক। তার সঙ্গে একই অভিযোগে পদ হারান ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, ডাকসুর সহ-সভাপতি পদে নির্বাচন করে যিনি হেরেছিলেন। ডাকসু সচলের আট মাসের মাথায় টেন্ডারবাজির অভিযোগ ওঠে ভিপি নুরুল হক নূরের বিরুদ্ধে। সংবাদ সম্মেলন করে তার পদত্যাগ দাবি করেন চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠার পর পদ হারানো জিএস রাব্বানীও। ডাকসুতে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছাত্রলীগের সঙ্গে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের দুই নেতার সমন্বয়হীনতা বছরজুড়ে দৃশ্যমান হয়।

ডাকসুর এজিএস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ডাকসুর রাজনৈতিক অর্জন হচ্ছে গণতান্ত্রিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা। সেটি আমরা পেরেছি। এতদিন ছাত্রনেতারা ছিল যারা শিক্ষার্থীদের কাছে কেউ জবাবদিহি করেন নাই। ডাকসুর ফলে আমরা জবাবদিহিমূলক ছাত্রনেতা পেয়েছি। এছাড়া আমরা ডাকসুর মাধ্যমের ক্যাম্পাসে ধর্মভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করতে পেরেছি এবং গঠনতান্ত্রিকভাবে নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি।”

ডাকসু ভবনে নতুন পর্ষদের প্রথম সভায় (বাঁ থেকে) এজিএস সাদ্দাম হোসেন, জিএস গোলাম রাব্বানী, সভাপতি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান ও ভিপি নূরুল হক নূর। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভিডাকসু ভবনে নতুন পর্ষদের প্রথম সভায় (বাঁ থেকে) এজিএস সাদ্দাম হোসেন, জিএস গোলাম রাব্বানী, সভাপতি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান ও ভিপি নূরুল হক নূর। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভিডাকসুর অর্জনের বিষয়ে তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীদের অধিকার অর্জনের দিক দিয়ে আমরা ইতোমধ্যেই অনেক কাজ করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৫টির মতো বিভাগের উন্নয়ন ফি প্রত্যাহার কিংবা কমানো, লাইব্রেরির সময়সীমা বৃদ্ধি, বাস ট্রিপের সংখ্যা বৃদ্ধি, সুইমিং পুলের সময় বৃদ্ধি, প্রথমবারের মতো জোবাইক চালু, ডাকসুর তৎপরতায় শিক্ষা কার্যক্রমকে অনলাইন সিস্টেমে নিয়ে যাওয়ার তাগিদ দেওয়া হচ্ছে, মেয়েদের জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন চালু করা হয়েছে, নানা রকম ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন, তরুণ লেখক সাহিত্যিকদের প্ল্যাটফর্মে আনা হয়েছে, ডাকসুর উদ্যোগে বইমেলার আয়োজন করা হয়েছে, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন একাডেমিক ও আবাসিক ভবনগুলোতে প্রবেশপথ তৈরি করা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের আবাসন সংঙ্কট দূর করার জন্য বাঙ্ক বেডের কথা বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাস্থ্যবীমা চালুর জন্য প্রশাসনকে তাগাদা দেওয়া হয়েছে।” বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্য কোর্স বাতিলের জন্য ডাকসুর পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন সাদ্দাম।

তবে কিছু কার্যক্রম চললেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের হাতে শিক্ষার্থী নির্যাতন ও ক্যাম্পাসে ’অলিখিত দাসত্ব’ বন্ধ করা সম্ভব হয়নি বলে জানান ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নূর। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মোটা দাগে যে কাজগুলো করা আমাদের উচিত ছিল সেগুলো হয়ত আমরা করতে পারিনি। বিশেষ করে, ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের দ্বারা শিক্ষার্থীরা যে হলে হলে নির্যাতিত হয় এবং হলগুলোতে শিক্ষার্থীদের যে একটা অলিখিত দাসত্বের বিনিময়ে থাকা অর্থাৎ প্রোগ্রামের বিনিময়ে থাকা- এটার আমরা এই নয় মাসেও পরিবর্তন করতে পারিনি।” এজন্য প্রশাসন ও সংখ্যাগরিষ্ঠ ছাত্রলীগ সমর্থিত ডাকসুর নেতাদের দায়ী করেন নূর।

ডাকসুর কার্যক্রম নিয়ে তিনি বলেন, “সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের নিয়ে ডাকসুর বিভিন্ন সম্পাদকের সমন্বয়ে অনেক কাজ হয়েছে। সেই তুলনায় হল সংসদগুলো ওইভাবে কাজ করতে পারেনি।” কাজের ক্ষেত্রে তার সঙ্গে ছাত্রলীগ সমর্থিত অন্য নেতাদের সমন্বয়হীনতার অভিযোগ করেন ভিপি নূর। তিনি বলেন, “যেহেতু ছাত্রলীগ এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ, তাই তারা চাইলেই আমাকে এবং সমাজসেবা সম্পাদককে বাদ দিয়ে অনেক সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং সেইটাই তারা করে। দেখা যায় যে, অনেক কিছুই আমাকে না জানিয়ে তারা কাজ করে আবার ডাকসুর অনেক প্রোগ্রামে আমাকে ইনভাইট পর্যন্ত করা হয় না। এই সমন্বয়হীনতা দূর করার জন্য আমরা প্রশাসনের বা ডাকসুতে যারা শিক্ষক আছে তাদেরকে আমরা একাধিকবার বলেছিলাম। কিন্তু তারপরও প্রতিকার পাইনি।”

আবরার হত্যার পর উত্তাল বুয়েট
বুয়েটের শেরেবাংলা হলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নির্যাতনে গত ৬ অক্টোবর তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরারের মৃত্যু হলে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অচল হয়ে পড়ে বুয়েট। তাদের দাবি মেনে বুয়েট কর্তৃপক্ষ সাংগঠনিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করে; পাশাপাশি নেওয়া হয় আরও কিছু উদ্যোগ। প্রাথমিকভাবে শিক্ষার্থীদের ১০ দফার কয়েকটি মেনে নেওয়ার পর গত ১৬ অক্টোবর মাঠের আন্দোলন থেকে সরে আসে বুয়েট শিক্ষার্থীরা; তবে মামলার অভিযোগপত্র ও অন্য দাবিগুলো পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ক্লাসে না ফেরার ঘোষণা দেয়।

পাঁচ সপ্তাহের তদন্ত শেষে গত ১৩ নভেম্বর ২৫ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ২১ নভেম্বর আবরার হত্যার অভিযোগপত্রভুক্ত ২৫ জনসহ ২৬ জনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে বুয়েট প্রশাসন। পাশাপাশি বিভিন্ন সময় র‌্যাগিংয়ে জড়িত থাকার অভিযোগে এ পর্যন্ত ৪০ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আন্দোলনে অচল হওয়ার কারণে ১৯ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় বুয়েটের টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়। শিক্ষার্থীরা আন্দোলন সমাপ্তির ঘোষণা দিলে ২৮ ডিসেম্বর থেকে ওই পরীক্ষার সূচি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। এক মাস পর বিশ্ববিদ্যালয়টি খুললেও দুর্নীতির অভিযোগের সুরাহা হয়নি এখনও। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের দাবিতে গত অগাস্টে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি অংশ।

এর মধ্যেই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের কাছে চাঁদা চাওয়ার অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনার পরে ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেতাকে পদ হারাতে হলেও তারা অভিযোগ অস্বীকার করে উল্টো অধ্যাপক ফারজানার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন।

উপাচার্য ফারজানা ইসলামের পদত্যাগ দাবিতে উত্তাল ছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসউপাচার্য ফারজানা ইসলামের পদত্যাগ দাবিতে উত্তাল ছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসউপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাদের অর্থ দিয়েছেন বলে সে সময় অভিযোগ ওঠে, যার একটি অডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা ‘ঈদ সালামী’ হিসেবে ১ কোটি টাকা পাওয়ার কথা স্বীকারও করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তার তদন্তের দাবিতে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে আন্দোলন চালিয়ে আসছিল শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

চাপের মুখে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসলেও তা ফলপ্রসূ না হওয়ায় গত ১৯ সেপ্টেম্বর তার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। ধর্মঘট, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন, প্রশাসনিক ভবন অবরোধের মত বেশ কিছু কর্মসূচি শেষে ৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করেন আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। পরদিন দুপুরে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে চড়াও হয় আন্দোলনকারীদের ওপর। তারা এলোপাতাড়ি মারধর করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। উপাচার্যের বাসভবনের সামনে ওই হামলায় আট শিক্ষক ও সাংবাদিকসহ অন্তত ২৫ জন আহত হন।

এই পরিস্থিতিতে ৫ নভেম্বর দুপুরে সিন্ডিকেটের জরুরি বৈঠক ডেকে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তারপরও শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে প্রতিবাদী চিত্রাঙ্কন ও কনসার্টের মত কর্মসূচি চালিয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তখন পুলিশ ডেকে হল খালি করার ঘোষণা দেয়। পাশাপাশি ক্যাম্পাসে সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে ৮ ডিসেম্বর থেকে ক্যাম্পাস খুলে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

গোপালগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়
সাধারণ শিক্ষার্থীদের টানা ১২ দিনের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক খোন্দকার নাসিরউদ্দিন।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে উপাচার্যের পদ ছাড়তে বাধ্য হন অধ্যাপক খোন্দকার নাসিরউদ্দিনশিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে উপাচার্যের পদ ছাড়তে বাধ্য হন অধ্যাপক খোন্দকার নাসিরউদ্দিন

গত ১১ সেপ্টেম্বর আইন বিভাগের ছাত্রী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক ফাতেমা-তুজ জিনিয়াকে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এক ফেইসবুক পোস্টের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কক্ষে জিনিয়াকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও তাকে বহিষ্কারের ঘটনাটি গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন উপাচার্য নাসিরউদ্দিন।

দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে ১৮ সেপ্টেম্বর প্রশাসন জিনিয়ার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়। এরপরও উপাচার্যের অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, স্বজনপ্রীতি, নারী কেলেঙ্কারিসহ নানা অভিযোগে ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে ভিসি পতনের আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে গত ২১ সেপ্টেম্বর উপাচার্যের লোকজন আন্দোলনকারীদের উপর হামলা চালালে আন্দোলন আরও প্রচণ্ড হয়ে ওঠে। এরপর ওই ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। ২৫ ও ২৬ সেপ্টেম্বর গিয়ে সরেজমিন অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দেয় ওই তদন্ত কমিটি। তাদের প্রতিবেদনে উপাচার্যকে অপসারণের সুপারিশের পর ৩০ সেপ্টেম্বর পদ ছাড়েন উপাচার্য নাসির।

আরও যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন
উপাচার্য ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে নভেম্বরের শুরুতে আন্দোলনে নামেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। একই সময়ে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ করেন। প্রথম বর্ষে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের হলে অবস্থান, সাধারণ শিক্ষার্থীদের হয়রানি না করা এবং বিতর্কিত শিক্ষক-কর্মকর্তাদের পরীক্ষার সঙ্গে জড়িত না রাখার দাবিতে আন্দোলনে নামে তারা।

আন্দোলনের মুখে পদ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন ঢাকার আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যওআন্দোলনের মুখে পদ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন ঢাকার আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যওশিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে অক্টোবরের শেষে পদত্যাগ করেন বেসরকারি আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক কাজী শরিফুল আলম।

দুই দল শিক্ষার্থীর সংঘর্ষের কারণে টানা ১৫ দিন বন্ধ ছিল খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)। গত ১ নভেম্বর বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আন্তঃহল ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে দুই হলের ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষের পর অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছিল কর্তৃপক্ষ। এরপর ১৭ নভেম্বর থেকে পুনরায় ক্লাস পরীক্ষা শুরু হয় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ওই প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে।

সম্পর্কিত সংবাদ

Home Post

রাষ্ট্রের রক্ষাকবচ না হয়ে রাজনীতির হাতিয়ার: গোয়েন্দা সংস্থা ও সেনাবাহিনীর ভূমিকা

সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৫
Home Post

সন্ত্রাসের দুই মুখ: গাইবান্ধার সিজু হত্যা ও বসুন্ধরায় সামরিক ষড়যন্ত্র

আগস্ট ১০, ২০২৫
Home Post

জুলাই বিপ্লব: গণআকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন ও রাষ্ট্ররূপান্তরের যুগসন্ধিক্ষণে রাজনীতিবিদ, রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী এবং ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক দায় ও চূড়ান্ত অগ্নিপরীক্ষা

মে ৩১, ২০২৫

জনপ্রিয় সংবাদ

  • পাহাড়ে পরিকল্পিতভাবে বাঙালি উচ্ছেদ ও ডি ইসলামাইজেশন করা হচ্ছে

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • Trademark Web based poker Crazy Expensive diamonds Gambling enterprise Video slot Genuine Imitation Financial

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • অসুরের মুখে দাঁড়ি-টুপি : মুসলিম বিদ্বেষে সীমা ছাড়াল ভারত

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • ভাষা আন্দোলন ও এর ঘটনা প্রবাহ

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • বিতর্কিত আজিজের সাক্ষাৎকার নিয়ে লে. কর্নেল মুস্তাফিজের বিশ্লেষণ

    0 shares
    Share 0 Tweet 0

সাম্প্রতিক সংবাদ

রাষ্ট্রের রক্ষাকবচ না হয়ে রাজনীতির হাতিয়ার: গোয়েন্দা সংস্থা ও সেনাবাহিনীর ভূমিকা

সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৫

সন্ত্রাসের দুই মুখ: গাইবান্ধার সিজু হত্যা ও বসুন্ধরায় সামরিক ষড়যন্ত্র

আগস্ট ১০, ২০২৫

জুলাই বিপ্লব: গণআকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন ও রাষ্ট্ররূপান্তরের যুগসন্ধিক্ষণে রাজনীতিবিদ, রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী এবং ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক দায় ও চূড়ান্ত অগ্নিপরীক্ষা

মে ৩১, ২০২৫

মধ্যপ্রাচ্যের জন্য ট্রাম্পের নতুন প্রস্তাব

মে ২১, ২০২৫

ইশরাকের মেয়র হতে বাধা কোথায়?

মে ২১, ২০২৫

© Analysis BD

No Result
View All Result

© Analysis BD