অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
চলমান ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান শুরুর পর থেকে দুর্নীতি, লুটপাট, মাদক ব্যবসা, টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজি করে হাজার কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের বেশ কিছু নেতা ধরা খেয়েছে। এসব তালিকায় সংসদের সরকারদলীয় হুইপসহ একাধিক এমপির নামও চলে এসেছে। কয়েকজন এমপিসহ সরকারি দলের ২২ নেতার দেশত্যাগেও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
আর ক্যাসিনো, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ও লুটপাটের দায়ে দল থেকে বহিষ্কার হয়েছেন আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বেশ কিছু নেতা। এছাড়া দায়িত্ব থেকেও অব্যাহতি দেয়া হয়েছে কয়েকজনকে। জানা গেছে, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির নানকও এবার ফেঁসে যাচ্ছেন।
গত সপ্তাহে ক্যাসিনো ব্যবসা, টেন্ডারবাজি, চাদাবাজি, মানুষের বাড়ি ঘর জমি দখল ও সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টির দায়ে গ্রেফতার করা হয়েছে ৩৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মোহাম্মদপুর শাখা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক তারেকুজ্জামান রাজিবকে।
জানা গেছে, এই রাজিব আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানকের কথিত ছেলে হিসেবে পরিচিত। নানকের হাত ধরেই এক সময়ের টং দোকানদার রাজিবের রাজনীতিতে আসা। মূলত নানকের আশির্বাদেই ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হন রাজিব। তার আশ্রয়-প্রশ্রয়েই সন্ত্রাসী রাজিবের উত্থান।
জানা গেছে, রাজধানীর মোহাম্মদপুরে রাজত্ব গড়ে তুলেছেন তিনি। এলাকায় নিয়ন্ত্রণ করেন চাঁদাবাজি। বাসস্ট্যান্ড, সিএনজি স্ট্যান্ড, ফুটপাতই তার চাঁদা তোলার মূল উৎস। যুবলীগের সাইনবোর্ড আর কাউন্সিলরের পদটি ব্যবহার করে এলাকায় সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলেছেন রাজীব। এর মাধ্যমে দখলদারিত্ব ও টেন্ডারবাজি করেন তিনি। মোহাম্মদীয়া হাউজিং সোসাইটির ১ নং রোড এলাকায় পানির পাম্পের জন্য নির্ধারিত জায়গায় বাড়ি বানান। তার ইশারাতেই রহিম ব্যাপারী ঘাটের ৩৩ নং ওয়ার্ড যুবলীগের অফিসটিও দখল করা। এছাড়া এলাকায় কিশোর গ্যাং, মাদক ও ডিশ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন এ সন্ত্রাসী।
২০১৫ সালে কাউন্সিলর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন রাজীব। দলীয় প্রার্থী ও মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি শেখ বজলুর রহমানকে হারিয়ে নির্বাচিত হন তিনি।
একসময় টং দোকানদার ছিলেন রাজীব। এখন তিনিই কোটি কোটি টাকার মালিক। বসবাস করেন আলিশান বাড়িতে। গুলশান ও মোহাম্মদপুরে আটটি ফ্ল্যাট রয়েছে তার। চড়েন বিলাসবহুল গাড়িতে। যার মধ্যে রয়েছে মার্সিডিজ, বিএমডব্লিউ, ক্রাউন প্রাডো, ল্যান্ডক্রুজার ভি-৮, বিএমডব্লিউ স্পোর্টস কারও।
মোহাম্মদপুর এলাকায় যুবলীগের রাজনীতি দিয়ে রাজনৈতিক জীবন শুরু রাজীবের। স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের সান্নিধ্যে অল্পদিনের মধ্যেই মোহাম্মদপুর থানা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক পদে বসেন তিনি। পরে বনে যান ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। মোহাম্মদপুরে যুবলীগ কর্মী তছির উদ্দিন হত্যা মামলার আসামিরা তারই ঘনিষ্ঠ। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধের জেরে তাকে খুন করা হয়।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, জাহাঙ্গীর কবির নানকেই হলেন রাজিবের গডফাদার। এনিয়ে আওয়ামী লীগের অনেক কেন্দ্রীয় নেতাও নানকের ওপর চরমভাবে ক্ষুব্দ। এমনকি জাহাঙ্গীর কবির নানক যে দীর্ঘদিন ধরে রাজিবকে প্রশ্রয় দিয়ে আসছেন সেই তথ্যও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আছে। রাজিব গ্রেফতার হওয়ার এখন নানকের বিষয়টি সামনে চলে আসতে পারে বলেও মনে করছেন অনেকে।
জানা গেছে, রাজিব গ্রেফতার হওয়ার পর খুব অস্বস্তিতে দিন কাটছে নানকের। বাঁচার জন্য তিনি এখন আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতাদের কাছে ধরণা দিচ্ছেন বলেও জানা গেছে। আর নানককে রক্ষায় ওবায়দুল কাদের বিভিন্ন তৎপরতা চালাচ্ছে বলে জানা গেছে।