অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
মিয়ানমার নৌবাহিনীকে সাথে নিয়ে বাংলাদেশকে জলপথ দিয়ে ঘিরে ফেলার চক্রান্ত করছে ভারত। সম্প্রতি ভারতের সাথে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধানমন্ত্রীর সাতটি চুক্তি/সমঝোতা স্মারক সই করেছে। সাতটির মধ্যে তিনটি চুক্তি নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। দেশের মানুষ ক্ষোভও প্রকাশ করেছে। এমনকি কয়েকটি অসম চুক্তির বিরোধীতা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরারকে হত্যা করে ছাত্রলীগ। এরপরেই জনগণের নজরে আসে ভারতকে উপকূল জুড়ে সমারিক গোয়েন্দা রাডার বসাতে আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক অনুমতি দেয়ার গোপন চুক্তি। শুরু হয় বিরোধীতা।
এর মধ্যেই সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন প্রথম আলোতে একটি লেখায় বাংলাদেশ এবং ভারতের এই চুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
“১. আপাতদৃষ্টিতে এই রাডারগুলো একরকম সামরিক স্থাপনা। আমাদের পক্ষ থেকে স্মারকে সই করেছেন স্বরাষ্ট্রসচিব, কিন্তু ভারতের পক্ষে তাদের হাইকমিশনার। তাই ভারতের দিক থেকে এ বিষয়ে কোন প্রতিষ্ঠান জড়িত, সাধারণের কাছে তা স্পষ্ট নয়। প্রশ্ন হচ্ছে, এই স্থাপনাগুলোর মালিকানা কার হবে—বাংলাদেশ, না ভারত।
২. ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সামরিক জোটবদ্ধতা নেই। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ভারতের মালিকানায় কোনো সামরিক স্থাপনা থাকা কীভাবে সম্ভব?
৩. মালিকানা যদি বাংলাদেশের হয়, তাহলেও প্রশ্ন থাকে, এতে ব্যবহৃত সফটওয়্যার এবং প্রাপ্ত তথ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকবে কার?
৪. বঙ্গোপসাগরে চীনা উপস্থিতি যদি নজরদারির আওতাভুক্ত হয়, এবং সেই তথ্য যদি ভারতীয়রা প্রকৃত সময়ে পেতে থাকে, তবে সেটা কি চীনের প্রতি বৈরী কার্যক্রম হিসেবে দেখা হবে না? আর সে ক্ষেত্রে আমাদের বিদেশনীতিতে যে একধরনের ভারত-চীন ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা আছে, তার কী হবে?
বন্ধুত্বের কথা বলে বৈরিতা
এদিকে বাংলাদেশের সাথে বন্ধুত্বের কথা বললেও মিয়ানমারের সাথে শক্ত সামরিক সম্পর্ক গড়ে তুলছে ভারত। যা বর্তমান বিভিন্ন সংকটের কারণে বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ। ভারত মিয়ানমারের সাথে সমারিক সম্পর্ক উন্নয়ন করার অর্থ হলো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সামরিক বিষয়ে তথ্য আদান-প্রদান। সেক্ষেত্রে ধরে নেয়া যায়, যদি বাংলাদেশ ভারতকে উপকূল জুড়ে নজরদারির নামে রাডার স্থাপন করার অনুমতি দেয় তাহলে ভারত বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগরের অংশের তথ্য সংগ্রহ করবে এবং সংকটমুহূর্তে বাংলাদেশকে চাপে ফেলতে সেই তথ্য মিয়ানমারকে প্রদান করবে। এর মাধ্যমে ভারত বাংলাদেশের সম্পূর্ণ সাগরবক্ষকে নজরদারির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করবে। এ ব্যাপারেও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন তার লেখায় আলোকপাত করেছেন।
কিছুদিন আগে বাংলাদেশ যখন তার নৌবাহিনীর জন্য চীন থেকে দুটি পুরোনো সাবমেরিন সংগ্রহ করে, তখন এ বিষয়ে ভারতের অস্বস্তি ছিল বেশ প্রকাশ্য। বাংলাদেশের সামরিক শক্তি ভারতের জন্য কখনোই ন্যূনতম কোনো হুমকি নয়। গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান (৪৫তম) মিয়ানমারেরও (৩৭তম) নিচে। ঘনিষ্ঠ বন্ধুরাষ্ট্রের সামরিক সক্ষমতার সামান্য বৃদ্ধিতে অন্য বন্ধুর বরং স্বস্তিবোধ করার কথা। মার্কিনরা যেমন তাদের ইউরোপীয় মিত্রদের সামরিক ব্যয় আরও বাড়াতে বলছে। এর মধ্যে পত্রিকান্তরে একটা খবর দেখলাম যে ভারত মিয়ানমারকে একটি রাশিয়ার তৈরি কিলো ক্লাস সাবমেরিন প্রদান করছে।
তর্কের খাতিরে ধরা যাক যে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে একটা যুদ্ধাবস্থার সৃষ্টি হলো। আমরা নিশ্চয় চাইব না আমাদের নৌবাহিনীর সব জাহাজের গতিবিধির সব খবর তৎক্ষণাৎ মিয়ানমারের কাছে পৌঁছে যাক।
ভারত-মিয়ানমার নৌ মোহড়ার কিছু চিত্র
বাংলাদেশে যখন ভারতকে সমারিক রাডার স্থাপনের অনুমতি দেয়ার বিরোধীতা তুঙ্গে, এর মধ্যেই বঙ্গোপসাগরে ভারত এবং মিয়ানমার নৌ বাহিনী অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ ব্যবহার করে সামরিক মহড়া শুরু করেছে। ইনমেক্স-১৯ নামে এই মহড়া ভারতের সাথে মিয়ানমারের সামরিক সম্পর্কের উষ্ণতার প্রকাশ। এই মহড়া সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেনের ইঙ্গিত কেই সত্য প্রমাণিত করছে যে, ভারত রাডার স্থাপনের মাধ্যমে আমাদের উপকূলের নিয়ন্ত্রণ নেবে এবং মিয়ানমারকে সাথে নিয়ে বাংলাদেশ বিরোধী জোটবদ্ধ গোপন কার্যক্রম পরিচালনা করবে। যা বাংলাদেশের নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্বের জন্য চরম হুমকি স্বরূপ।