অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ভয়াবহ ভোটডাকাতির নির্বাচন বর্জন করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোট ঘোষণা দিয়েছিল যে তাদের বিজয়ী এমপিরা শপথ নেবেন না। কিন্তু একটা পর্যায়ে এসে জাতির সাথে করা সেই প্রতিশ্রতি প্রথম ভঙ্গ করেন ড. কামাল হোসেন। তিনি তার দলের বিজয়ী দুই সদস্যকে শপথ নিয়ে সংসদে পাঠান। এরপর লোকোচুরি করে শপথ নেন বিএনপি বিজয়ীরা।
বিএনপির তৃণমূল, জোটের নেতাকর্মী ও জনমতকে উপেক্ষা করেই সরকারি সুবিধা গ্রহণের জন্য বিএনপির এমপিরা শপথ নিয়ে সংসদে যান। এর মাধ্যমে তারা অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বৈধতার সার্টিফিকেট দেন। ভয়াবহ ভোটডাকাতির নির্বাচন নিয়ে শেখ হাসিনা চরমভাবে কোনঠাসায় ছিল। কিন্তু, বিএনপি তাকে চরম অস্বস্তি থেকে স্বস্তি দিয়েছে।
বিএনপির এমপিরা খালেদা জিয়ার মুক্তির কথা বললেও অধিকাংশ নেতাকর্মীও মনে করে যে, তারা সরকারি সুবিধা নিতেই সংসদে যোগ দিয়েছে এমপিরা। আর সরকারি এই সুবিধা নিতে গিয়ে এখন চরমভাবে ধরা খেয়েছে বিএনপির নারী এমপি ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা ও আরেক এমপি হারুন উর রশিদ। রুমিন ফারহানা ১০ কাঠার প্লট চেয়ে সরকারের কাছে একটি আবেদন করেছেন। তার এই আবেদনের কপি গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পরই এনিয়ে সারাদেশে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়। ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও। দুই দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এনিয়ে চলছে সমালোচনা।
সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হলো-রুমিন ফারহানা তার আবেদনে উল্লেখ করেছেন যে, ঢাকায় তার কোনো প্লট, ফ্ল্যাট বা জমি নেই। কিন্তু নির্বাচন কমিশনে দেয়া হলফনামায় তিনি লিখেছেন-১৮৫০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট আছে। ওই ফ্ল্যাট মায়ের কাছ থেকে পেয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হলফনামায় উল্লেখিত ফ্ল্যাটটি ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডে অবস্থিত। অথচ, সরকারের কাছে করা আবেদনে তিনি ফ্ল্যাটের তথ্য গোপন রেখেছেন।
এরপর, নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেছেন মায়ের কাছ থেকে পাওয়া তার একটি ফ্ল্যাট আছে। কিন্তু, ঢাকা শহরে তার নামে বাড়ি আছে বলেও বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। ঢাকার লালমাটিয়া এলাকায় তিন কাঠার একটি প্লট তার বাবা অলি আহাদের কাছ থেকে পেয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে। সেখানে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বহুতল ভবন নির্মাণ করেছে ডোমিনো নামের একটি ভবন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান।অলি আহাদের দল ডেমোক্রেটিক লীগের মহাসচিব সাইফুদ্দিন মনি গণমাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘অলি আহাদের লালমাটিয়ায় বি ব্লকে একটি প্লট ছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময়ে ১৯৭৩ সালে তাকে দেয়া দেয়া হয়েছিল। সেটি নিয়ে ঝামেলা হওয়ার পর আমরা কয়েকজন মিলে রুমিন ফারহানার নামে করে দেয়া হয়েছে। যেই প্লটে পরে ছয়তলা বাড়ি করা হয়েছে।
জানা গেছে, ৬ তলা বাড়ির তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশের পরই বেকায়দায় পড়ে যান রুমিন ফারহানা। একজন আইনজীবী হয়েও তিনি কিভাবে তথ্য গোপন করলেন এনিয়ে চলছে সমালোচনা। তার সম্পত্তির অনুসন্ধান করতেও নির্বাচন কমিশনের প্রতি কেউ কেউ দাবি করছেন। এসব কারণে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তড়িগড়ি করে প্লট চেয়ে করা আবেদন প্রত্যাহার করেছেন রুমিন ফারহানা।
বিশিষ্টজনেরাও মনে করছেন, রুমিন ফারহানার সম্পদ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য সঠিক হলে তার এমপি পদ থাকার কথা নয়। এখন নির্বাচন কমিশন এসব তদন্ত করবে কিনা সেটা দেখার বিষয়।
অপরদিকে, চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে নির্বাচিত বিএনপির এমপি হারুন অর রশিদের স্ত্রী পাপিয়াও প্লটের জন্য আবেদন করেছেন। তার এই প্লটের আবেদন নিয়েও চলছে সমালোচনা। বিভিন্ন মাধ্যমে শুনা যাচ্ছে, তৃণমূলের নেতাকর্মীদের চাপের কারণে রুমিনের মতো হারুনও আবেদন প্রত্যাহার করতে পারেন।