দেশের ৬৪টি জেলাতেই ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু। শহর ছেড়ে এখন প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে নারী-পুরুষ ও শিশুরা। সরকারি হিসেবে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ৭১২ জন। সরকারি হিসেবে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৯৫১৩ জন। তবে বেসরকারি হিসেবে এ সংখ্যা আরও কয়েক গুন বেশি হবে। বেসরকারি হিসাবে সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এক লাখের বেশি হবে।
দেখা গেছে, সরকারি হিসাব মতেই দেশে প্রতি ঘণ্টায় ৭১ জন মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। আর বেসরকারি হিসাবে প্রতি ঘণ্টায় সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে কমপক্ষে ৩০০ জন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। আর যদি কম করেও ধরা হয় তাহলে সারাদেশে প্রতি মিনিটে ২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। আর সরকারি হিসাব মতে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১৪ জন। কিন্তু বেসরকারি হিসাবে এখন পর্যন্ত ৫০ জনেরও বেশি লোক ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।
এখন একেবারে সহজভাবে বলা যায়, ডেঙ্গু এখন সারাদেশে মহামারি আকার ধারণ করেছে। এনিয়ে সারাদেশে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। ক্ষমতাসীন জোটের শরিক দলের এমপি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুও বৃহস্পতিবার ঢাকাকে দুর্গত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে, বাংলাদেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া ও চীনসহ বিশ্বের প্রভাবশালী গণমাধ্যমগুলো ডেঙ্গু সবিস্তারে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো ভয়াবহ অবস্থা বলে উল্লেখ করেছে।
অথচ, সরকারের মন্ত্রীরা বলছেন-ডেঙ্গু পরিস্থিতি নাকি তাদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে।
বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দাবি করেছেন-ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে নয়। আর স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেছেন, অন্যান্যদেশের তুলনায় বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক কম। এ ডেঙ্গু আমরা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে এসেছি।
সরকারের মন্ত্রীরা ডেঙ্গুকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে বলে দাবি করলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতেই দেশে প্রতি মিনিটে প্রায় ২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। আর বেসরকরি হিসেবেতো আরও বেশি।
রাজনীতিক বিশ্লেষকসহ বিশিষ্টজনেরা মনে করছেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সরকার সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতেই মন্ত্রীরা এখন নিজেদের ইচ্ছামত ইনিয়ে বিনিয়ে কথা বল যাচ্ছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মারা যাওয়াদের সংখ্যা নিয়েও সরকার এখন লুকোচুরি করছে। সরকার মূলত পুরো বিষয়টিকেই ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে।
সাধারণ মানুষও বলছে, আক্রান্ত হয়ে লোকজন হাসপাতালে ভিড় করার কারণে দেশে ডেঙ্গু নেই বলে ঘোষণা দিতে পারছে না সরকার। লোকজন যদি আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে না আসতো তাহলে সরকার বলতো যে দেশের কোথাও ডেঙ্গু নেই। কিন্তু গণমাধ্যমে প্রতি মুহূর্তে সচিত্র সংবাদ আসার কারণে সরকার বিষয়টিকে আর চাপা দিতে পারছে না।