ঈদের আগে রমজানের মধ্যে বা রমজানের পরপরই মুক্তি পেতে পারেন ১৫ মাস ধরে কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বিএনপির হাইকমান্ড ও সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এরকম আভাস পাওয়া গেছে। তবে তার মুক্তি জামিনে, না বিকল্প কোন পন্থায় হবে তা স্পষ্ট নয়। প্যারোলো মুক্তি নেয়াকে বিএনপির নেতারা অসম্মানজনক মনে করলেও সব কিছু নির্ভর করছে বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থার ওপর। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতার ভাষ্য অনুযায়ী, ‘বেগম জিয়া খুবই অসুস্থ। তিনি শুকিয়ে গেছেন। দেখলে চোখে পানি আসে। এ অবস্থায় তাকে বাঁচাতে সুচিকিৎসা প্রয়োজন। কোন পথে তার মুক্তি হবে সেটা বড় কথা নয়।’
বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৭টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ৩৩টিতে তিনি জামিনে রয়েছেন। বাকি ৪টিতে জামিন পেলে মুক্তি পেতে পারেন তিনি। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দী হওয়ার পর থেকে বেগম জিয়ার মুক্তির জন্য আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে পথ চলা বিএনপি রাজপথেও নানা কর্মসূচি পালন করছে। দলের সিনিয়র নেতারা বলেছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আইন কোনো বাধা নয়, এটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। সরকারই তাকে আটকে রেখেছে।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির একজন প্রভাবশালী নেতা নয়া দিগন্তের সাথে আলাপকালে ’৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, ‘সে সময় জনতার প্রবল চাপে কারাগারের কপাট খুলে গিয়েছিল। কোনো আইন কিংবা জামিনের প্রয়োজন হয়নি। কারাগারের জেলার নিজেই বলেছেন, বের হয়ে যান স্যার।’ তবে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য রাজপথে কি সে ধরনের কোনো আন্দোলন হয়েছে, এমন প্রশ্নের উত্তরে ওই নেতা বলেন, আন্দোলন হয়েছে, এখনো চলছে। আন্দোলন বলতে অনেকে হরতাল-অবরোধ বোঝাতে চান। কিন্তু তারা বুঝতে চান না সময় পাল্টে গেছে। একদলীয় ফরম্যাটে একটি সরকার জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে। সেখানে আন্দোলনের ডাক দিলেই নাশকতা ঢুকিয়ে দেয়া হয়। আর সেই সুযোগে গুম, হত্যা আর মামলার মাধ্যমে শায়েস্তা করা হয় বিরোধী দলকে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা দেশনেত্রীর মুক্তির প্রহর গুনছি। আশা করছি, তিনি শিগগিরই আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্তি পাবেন। গত সপ্তাহে জিয়া চ্যারিটেবল মামলায় খালাস চেয়ে বেগম খালেদা জিয়ার আপিল গ্রহণ ও অর্থ দণ্ড স্থগিত করার বিষয়টিকেও ইতিবাচকভাবে দেখছেন আইনজীবীরা। তারা বলেছেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় শিগগিরই জামিন ফাইল করা হবে।
বেগম খালেদা জিয়া কবে মুক্তি পেতে পারেন, এমন প্রশ্ন করা হলে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা উত্তরে বলেন, ‘ওয়েট, এখনই জানাচ্ছি।’ এই বলে তিনি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ফোন দেন। যদিও ফোন না ধরায় তিনি মুক্তি সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলতে পারেননি।
বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিপ্রক্রিয়া নিয়ে একাধিক প্রভাবশালী দেশের হয়ে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশ মধ্যস্থতা করছে বলে শোনা যাচ্ছে। অসমর্থিত ওইসব সূত্র বলছে, বেগম জিয়া মুক্তি পেলেও সব কিছু স্বাভাবিক থাকবে, এভাবে সরকারকে আশ্বস্ত করেই দূতিয়ালি করা হচ্ছে। কোন কোন মহল থেকে এও শোনা যাচ্ছে, বেগম খালেদা জিয়া শিগগির মুক্তি না পেলেও, তাকে বঙ্গবন্ধু হাসপাতাল থেকে আর কারাগারে পাঠানো হবে না। সে ক্ষেত্রে তার গুলশানের বাসাকে সাব-জেল ঘোষণা করে, সেখানে পাঠিয়ে দেয়া হতে পারে।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করলেও দলীয় কৌশল পাল্টে সংসদে যোগ দিয়েছে বিএনপি। দলটির এই সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিতর্ক চলছে। এই সিদ্ধান্তের পেছনে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির কোনো যোগসূত্র আছে কি-না তা খোঁজার চেষ্টা করছেন কেউ কেউ। বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটেও এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। কাউকে না জানিয়ে বিএনপির এমপিদের সংসদে যোগ দেয়ার অভিযোগ তুলে বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ ইতোমধ্যে জোট ছেড়েছেন। জোটের কোনো কোনো শরিক ‘আরো নীরব ও নিষ্ক্রিয়’ হয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানা গেছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ প্রসঙ্গে বলেছেন, সংসদে যোগদানের সাথে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির কোনো যোগসূত্র নেই। সংসদ ও সংসদের বাইরে গণতন্ত্রের যে ন্যূনতম স্পেসটুকু আছে, সেটুকু কাজে লাগাতেই বিএনপির নির্বাচিতরা শপথ নিয়েছেন।
বিএনপির সিনিয়র এক নেতা গতকাল মঙ্গলবার বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার অবর্তমানে দলীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলে ভিন্নভাবে সুযোগটি কাজে লাগাতে চান। কিন্তু এতে করে মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েন। ওই নেতা বলেন, বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পেলে মুহূর্তের মধ্যেই এসব জটিলতার অবসান হবে।
এ দিকে বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে থাকায় বিএনপির ভেতরে একটি পক্ষ দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে দিনদিন শক্তিশালী হয়ে উঠছে বলে কানাঘুষা রয়েছে। এমপিদের শপথ নেয়ার পেছনে ওই পক্ষটি কোনো না কোনোভাবে জড়িত ছিল বলে কারো কারো ধারণা। এ বিষয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বিষয়টিকে উদ্ভট, হাস্যকর বলে উড়িয়ে দেন।
সূত্র: নয়াদিগন্ত