অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
কিছু কিছু খটকা বা অসংগতি মেনে নেয়া যায়না। রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই- এই কথা বলে কত কিছুকেই তো জায়েজ করা হয়। তারপরও কিছু কথা থেকেও যায়। নীতি আর নৈতিকতা থেকে আমরা কতটা দূরে সরে গেছি ভাবলে নিজের দেশের রাজনীতির প্রতি ঘৃনা আর অনাস্থা শতগুণ বেড়ে যায়। একটা দল তার কোন স্থায়ী আদর্শিক অবস্থান থাকবেনা, এটা কতক্ষন মানা যায়?
আমার দলের বারোটা যে বাজালো, আমার দলের অসংখ্য নেতাকর্মীকে যে হত্যা করলো, দেশকে দুটো বছর অনির্বাচিত সরকারের হাতে যে তুলে দিলো, যে প্রেসিডেন্টকে জিম্মি করে দেশে জরুরী অবস্থা আমদানি করলো, এমনকি আমাকে নির্মমভাবে কারাগারের অন্ধকারে যে নিক্ষেপ করলো কিংবা বিদেশ থেকে দেশে ফেরার সময় যে বা যারা আমাকে নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে আখ্যায়িত করলো, আমার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করে যারা ভোগালো, তাদের সাথে কিভাবে আপোষ হয়? তাহলে ব্যক্তিগতভাবে আমার অবস্থান কোথায় যায় আর দলীয়ভাবেই বা আমি নৈতিকতার কোন তলানীতে গিয়ে ঠেকি।
বলছিলাম, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেনেন্ট জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীকে মহাজোটের ব্যানারে মনোনয়ন দেয়া প্রসঙ্গে। বিগত জরুরী অবস্থায় সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ব্যক্তি ছিলেন মাসুদ। সচিবালয় দাবিয়ে বেড়িয়েছেন। রাজনীতিবিদদের হেনস্তা করেছেন। হাসিনা ও খালেদার ভাগ্যকে নিজের আঙুল দিয়ে নাচানোর চেষ্টা করেছেন। দেশকে রাজনীতিশূন্য করার চেষ্টা করে গেছেন নিরন্তর। বলা হতো, জেনারেল মঈন সেনাপ্রধান থাকলেও অাসল ক্ষমতা আসলে মাসুদের হাতেই।
সেই জেনারেল মাসুদকে শেখ হাসিনা কিভাবে নোমিনেশন দেয়? বিগত ১০ বছর ধরে জেনারেল মঈনের কোন খবর বা সুবিধা প্রাপ্তির খবর না পেলেও আমরা জানি জেনারেল মাসুদকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার হিসেবে। এই আওয়ামী লীগ সরকারই দিয়েছিল। মেয়াদ শেষ হওয়ার পর বার বার তাকে চুক্তিভিত্তিক নবায়নও করেছিল। আজ সেই মাসুদ দেশে ফিরে দম্ভ ভরে সেই শেখ হাসিনার কাছ থেকে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে মনোয়নন নিয়ে যখন হাসি দেয়, তখন তার প্রতি যতটা ঘৃনা জন্মায় তার চেয়ে শতগুণ ঘৃণা জন্মায় আওয়ামী লীগ অার শেখ হাসিনার প্রতি।
শেখ হাসিনা জেনারেল মাসুদকে নিয়ে খুব সস্তা চাল চেলেছেন। তিনি সরাসরি আওয়ামী লীগ বা নৌকায় জেনারেল মাসুদকে নোমিনেশন দেননি। দিয়েছেন বিশ্বস্ত জোট সংগী এরশাদের হাত দিয়ে। তবে পুরো সেটাপটাই যে শেখ হাসিনার পরিকল্পনামাফিকই হয়েছে তা ফাঁস করে দিয়েছেন জেনারেল মাসুদ নিজেই। এই প্রসংগে ১/১১ সরকারের এই খলনায়ক অর্থাৎ লে.জে. (অব.) মাসুদ বলেছেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় না এলে পিঠের চামড়া থাকবেনা। অথচ তিনি দাঁড়িয়েছেন জাতীয় পার্টির ব্যানারে, লাঙ্গল মার্কায়। এ সম্পর্কে তিনি বলেছেন, যা করছি, শেখ হাসিনার নির্দেশেই করছি। (সূত্র: নয়াদিগন্ত, তারিখ ৩ ডিসেম্বর, ২০১৮)
খুব অবাক লাগে, যখন আওয়ামী লীগ এই জরুরী অবস্থার কুশীলবদের নিয়ে কটু কথা বলে আর দালাল মিডিয়া তা প্রচার করে। ড. কামাল হোসেন যখন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করার প্রক্রিয়া শুরু করেন তখন তাকে আমেরিকার দালাল বা সেনা সমর্থক বলে আওয়ামী লীগ পঁচাতে চেষ্টা করেছে। পরবর্তীতে যখন তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যরিস্টার মইনুল হোসেন এই প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হলেন, তখনও তাকে সেনা সমর্থক সরকারের দালাল ও জরুরী অবস্থার নায়ক হিসেবে প্রচার করেছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী বুদ্ধিজীবিরা টকশোতে মইনুলকে সংগে নেয়ায় ঐক্যফ্রন্টের সমালোচনায় মুখর ছিলেন। তারই পরিনতিতে ব্যারিস্টার মইনুল আজ কারাগারে। তার বিরুদ্ধে আজ প্রায় অর্ধ শতাধিক মামলা। অথচ কোন মিডিয়া বা কোন বিবেকবান বুদ্ধিজীবি পেলাম না যে সরকারকে সাহস করে এই প্রশ্নটা করবে যে, আপনারা মইনুলকে জরুরী অবস্থার কুশীলব বলে এত সমালোচনা করলেন তাহলে কেন জেনারেল মাসুদকে নৌকায় মনোনয়ন দিলেন? কেন তাকে বিগত ১০ বছরে তাকে দেশে এনে তার কৃতকর্মের জন্য বিচার না করে উল্টো অস্ট্রোলিয়াতে হাইকমিশনার পদে নিয়োগ দিয়ে পুরস্কারের পর পুরস্কার দিলেন?
আসলে এটাই সত্য, এটাই বাস্তব যে, বিএনপি বা ঐক্যফ্রন্ট নয় বরং জরুরী অবস্থার কুশীলবদের মুল আশ্রয়দাতা আওয়ামী লীগ। তারা মুখে গনতন্ত্র বা অনির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললেও কার্যত আওয়ামী লীগই ফখরুদ্দিন-মইন সরকারের সকল কাজকে বৈধতা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। আর আজও জেনারেল মাসুদকে মনোনয়ন দিয়ে তারা সেই প্রতিশ্রুতিরই বাস্তবায়ন করলো।
আওয়ামী লীগ প্রমান করলো তারা নৈতিকভাবে দেউলিয়া। তাদের কোন আদর্শ নেই। আর তাই দলের সভানেত্রীকে জেলে দেয়ার পেছনের কারিগরকে তারা অাবার দলের পক্ষ থেকেই পুরস্কার দিতে পারে।