বিশেষ অ্যানালাইসিসঃ
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে কুমিল্লা-১১ চৌদ্দগ্রাম আসনে চলছে রেলপথ মন্ত্রী ও পুলিশ প্রশাসনের চরম তান্ডবতা। এই আসনে বিগত দশ বৎসর আওয়ামীলীগ নির্মম হত্যা, সন্ত্রাস, লুটপাট, চাঁদাবাজীর এক মহোউৎসবে পরিনত করেছে। তাদের জুলুম, নির্যাতন নিপীড়ন থেকে রেহাই পায়নি চেয়ারম্যান, মেম্বার, শিক্ষক, সাংবাদিক, কৃষক, শ্রমিক, আলেম-ওলামা ও মহিলা এমনকি ৮ বছরের শিশু থেকে আরম্ভ করে ৮০ বছরে বৃদ্ধ পর্যন্ত তাদের হিংস্রতা থেকে রেহাই পায়নি।
তাদের যুলম অত্যাচারে আলকরা, গুনবতী, জগন্নাথসহ কয়েকটি ইউনিয়নে ২০দলীয় জোটের প্রায় ৫০০ লোক বাড়ী-ঘর ছেড়ে পালিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। তাদের হাতে খুন হয়েছে শিবির নেতা শাহাব উদ্দিন, আব্দুল আজিজ, জামায়াত নেতা আলা উদ্দিন, রুহুল আমীন দুলাল, নিরীহ শ্রমিক ইব্রাহীম, বাচ্চু মেম্বার এবং পঙ্গু হয়েছে জহির, মুরাদ, নুরুল ইসলামসহ ৯ জন। বাড়ী-ঘর, দোকানপাট ভাংচুর ও লুটপাট হয়েছে ১০৩ টি। তাদের দলীয় কোন্দলে হত্যা হয়েছে জামাল উদ্দিন বাক্কা, নূরুল আমীন সহ ৫ জন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১০ বছরের ক্ষমতার মোহে রেলপথ মন্ত্রীর নির্দেশে পুরো উপজেলা এক সন্ত্রাসী ও ভয়ঙ্কর জনপদে পরিনত হয়েছে। বিগত দশ বছরে যত লোক চৌদ্দগ্রামে চাকুরী পেয়েছে সকলকে কম বেশী চাঁদা দিতে হয়েছে। এই চাঁদা উত্তোলনের মূল দায়িত্ব রেলপথ মন্ত্রীর আস্থাবাজন যাকে বিনা ভোটে কাশীনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বানিয়েছেন মোশারফ হোসেন ফোকা। তার চাঁদাবাজির কাছে দলের নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষ চরম অসহায়।
একজন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী মোশারফকে রেলপথ মন্ত্রী নিজের স্বার্থে এবং সকল অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য চেয়ারম্যান বানিয়েছে। তার কাছে পুরো চৌদ্দগ্রাম বিশেষ করে উত্তর চৌদ্দগ্রামের দলীয় নেতা কর্মী এবং সাধারণ মানুষ জিম্মি।
স্থানীয়ভাবে আরোও জানা যায়, নেতারা চৌদ্দগ্রাম আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাতে ব্যাপক পরিমানে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র সংরক্ষিত আছে যা আগামী নির্বাচনে সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও কেন্দ্র দখলে ব্যবহার হতে পারে। বিগত দশ বছরে তাদের হাতের অবৈধ অন্ত্র বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে ব্যবহার করতে দেখা যায়। এই সব সন্ত্রাসী ও ভংঙ্কর হিংস্র কার্যক্রমের নেতৃত্বে যাদের নাম বিভিন্নভাবে প্রকাশিত হয়েছে তারা হচ্ছে, জগন্নাথ ইউনিয়নের মোল্লা কাশেম বিপ্লব, আলকরার ইসমাইল হোসেন বাচ্চু, গুনবতীর সৈয়দুর রহমান খোকন, নুরুল ইসলাম, পৌরসভার মোতাহার হোসেন ঝুমন, ফরাস উদ্দিন রিপন, মুন্সিরহাটের ইমাম হোসেন, কামরুল হোসেন মোল্লা, মাহফুজ আলম, মিজানুর রহমান খোকা, ঘোলপাশার মাসুম বিল্লাহ, কাজী জাফর, কাশিনগরের মোশারফ হোসেন ফোকা, সোলায়মান, আবদুর রশিদ মেম্বার, এমরান হোসেন, আতিক।
রেলপথ মন্ত্রী তার এই চিহ্নিত ক্যাডার বাহিনীকে দিয়ে আগামী নির্বাচনের তরী পার করতে চায়। এই চিহ্নিত ক্যাডার বাহিনীর সাথে যোগ হয়েছে চৌদ্দগ্রামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান, ওসি তদন্ত ত্রিনাথ সাহা এবং এস আই লম্বা মনির। এই পুলিশ টিম বিগত সরকারের পুরো সময়েই ঘুরে ফিরে চৌদ্দগ্রামে দায়িত্ব পালন করছে। সর্বশেষ ওসি মাহফুজুর রহমান ও ত্রিনাথ বাবুকে মন্ত্রী মোটা অঙ্কের লেনদেনের মাধ্যমে আবারও চৌদ্দগ্রাম থানায় নিয়ে এসেছে। এটাকে আগামী নির্বাচনে অবৈধভাবে জয়লাভ করার ষড়যন্ত্র হিসেবে সবাই দেখছে।
স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে থানার ওসি মাহফুজ, ত্রিনাথ সাো এবং মনির আসার পর থেকে প্রতিদিনই তারা বাড়িতে বাড়িতে হানা দিচ্ছে এবং গ্রেফতার বাণিজ্য করছে। তাদের এই নির্যাতন ও হয়রানির কারনে ২০ দলীয় জোট এবং ঐক্য ফ্রন্টের নেতা কর্মীরা বাড়ী ঘরে থাকতে পারছে না।
এদিকে রেলপথ মন্ত্রী সরকারী প্রটোকল ব্যবহার করে বিভিন্ন ইউনিয়নে সভা সমাবেশ মাধ্যমে ২০ দলীয় জোটকে চৌদ্দগ্রামে ঢুকতে দেয়া হবে না মর্মে ঘোষণা দিচ্ছে। বিরোধী নেতা কর্মীকে পাড়ায় পাড়ায় ঘেরাও করার নির্দেশ এবং হামলা করার উসকানি দিচ্ছে । মন্ত্রীর এই জাতীয় বক্তব্যে চৌদ্দগ্রামে আগামী নির্বাচনের পরিবেশ চরম ও ভয়াবহতার দিকে যেতে পারে বলে সাধারণ মানুষ এবং ভোটাররা মনে করছে।
চৌদ্দগ্রামের এই বিভীষিকাময় পরিবেশ ও তান্ডব থেকে নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য সকল সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সকলের সহাবস্থান নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে আগামী নির্বাচনে একটি অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরী হওয়ার প্রয়োজন বলে ভোটাররা মনে করেন। অন্যথায় যে কোন সময়ে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যেতে পারে।