মুসাফির রাফি, অ্যানালাইসিস বিডি
সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করার জন্য অন্যতম প্রধান একটি শর্ত হলো যোগ্য লোককে সঠিক জায়গায় বসানো। অযোগ্য লোককে বড় কোন দায়িত্ব না দেয়া। বাংলাদেশের অবস্থা একটু ভিন্ন। এখানে যোগ্যতা মূল মাপকাঠি নয়। বরং কাকে বসালে আমার কাজ করতে সুবিধা হবে কিংবা ঐ সেক্টরটা আমার হাতে থাকবে- এটা মাথায় নিয়েই আমরা দায়িত্বশীল ব্যক্তিদেরকে কাজ করতে দেখি। এই মানসিকতার একটি উচ্ছিষ্ট হলো শাজাহান খান। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি। একই সঙ্গে সরকারের নৌ পরিবহন মন্ত্রী।
এই একটি মানুষের উপর সারা বাংলাদেশের সকল মানুষ বিরক্ত, ক্রুদ্ধ। আওয়ামী লীগ সরকারের অন্য সব মন্ত্রীদের উপর মানুষের রাগ বা ক্ষোভ যতটা আছে, শাজাহান খানের প্রতি সেই রাগ বা ক্ষোভ তো আছেই, সঙ্গে যোগ হয়েছে ঘৃনা। বিগত ১০ বছরের শাসনামলে জনগন সবচেয়ে বেশী ভুগেছে এই শাজাহান খানের অপকর্মের কারনে।
২০১২, ১৩ ও ১৪ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট যতবার ঢাকায় বড় কোন কর্মসূচী দিয়েছে এই শাজাহান খানের আহবানে শ্রমিকেরা ততবার ধর্মঘট দিয়ে ঢাকাকে কার্যত দেশের অন্য জায়গা থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় টিকে গেছে বার বার। আর তাই শাজাহান খানের ব্যপারে সরকার আগাগোড়াই দুর্বল। বাংলাদেশের কোন সরকারের আমলে যা হয়নি এবার তাই হয়েছে। যখনই বিরোধী দল হরতাল বা অবরোধ দিয়েছে, শাজাহান খান ঘোষনা দিয়ে শ্রমিকদেরকে বাস নিয়ে সড়কে নামতে বাধ্য করেছে। ফলে হরতালের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে পড়েছে এবং সরকার দিব্যি ক্ষমতায় টিকে গেছে। তাই শাজাহান খানের প্রতি বর্তমান সরকারের অনেক ঋন।
সর্বশেষ নিরাপদ সড়কের দাবীতে ছাত্রছাত্রীরা যে আন্দোলন করলো, তার মূল একটি দাবী ছিল শাজাহান খানের পদত্যাগ। কেননা তাদের দুই সহপাঠী ছাত্রছাত্রী বাস চাপায় নিহত হওয়ার পর সাংবাদিকরা শাজাহান খানকে সেই বিষয়ে প্রশ্ন করার পর তিনি সেই মৃত্যু নিয়ে অট্টহাসি হেসেছিলেন। ছাত্রছাত্রীরা প্রায় সপ্তাহ খানেক ঢাকার রাজপথ দখলে রেখেছিল। আমি আশাবাদী হয়েছিলাম যে এবার হয়তো শাজাহান খান বিদায় নেবেন, কিন্তু না এবারও টিকে গেলেন তিনি। বুঝতে পারলাম, লক্ষ লক্ষ কোমলমতি ছাত্রছাত্রীর চোখের জলের চেয়ে শাজাহান খানের প্রতি সরকারের ঋন শোধের দায় অনেক বেশী।
গতকাল থেকে পরিবহন শ্রমিকেরা আবার ধর্মঘট শুরু করেছে। সরকার একটি বিতর্কিত সড়ক পরিবহন আইন পাশ করেছে সম্প্রতি। তাতে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটলেও ড্রাইভারদের লঘু শাস্তি দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে। জনগনের দাবী ছিল মৃত্যুদণ্ড, কিন্তু সরকার সেই পথে আগায়নি। তথাপি এই দুর্বল আইনটিও মানতে পারছেনা পরিবহন শ্রমিকেরা। তারা চায় এক্সিডেন্ট করার পর যদি তারা ধরাও পড়ে তাহলে যেন মুহুর্তেই তারা জামিন নিয়ে বেরিয়ে আসতে পারে। এই দাবী পূরনেই তারা আন্দোলন করছে। ভেবে দেখুন, কত বড় নাটক সিনেমা আমরা দেখছি। তাদেরই কার্যকরী সভাপতি সরকারের ক্যাবিনেটে। অথচ তারা সরকারের কাছে দাবী জানাচ্ছে। এই নাটকটি এত জঘন্য বলেই শ্রমিকেরা রাস্তায় তাণ্ডব চালাচ্ছে, বেহায়া আচরণ করছে অথচ কেউ তাদেরকে থামাতে যাচ্ছেনা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও তাদেরকে দমন করছেনা কারন তারা জানে এদের খুটির জোড় সরকারের ভেতরেই।
গতকাল ধর্মঘটে মানুষ অপরিসীম ভোগান্তির শিকার হয়েছে। স্কুল কলেজ গামী ছাত্রীরা লাঞ্ছিত হয়েছে। তাদের গায়ে রং মাখিয়ে দেয়া হয়েছে। আর যে কয়জন শ্রমিক পেটের তাগিদে বাস নিয়ে বের হয়েছিলেন তাদের মাথায় ও মুখেও আলকাতরা ঢেলে দেয়া হয়েছে। এই ধর্মঘটের কারনেই মৌলভিবাজারে একটি এ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখা হয়েছে ফলে একটি শিশু বিনা চিকিৎসায় মারা গেছে। দিনজুড়েই এমন নৈরাজ্য দেখা গেছে সড়কে।
আমি জানিনা, মানুষের ভোগান্তি, নাগরিকদের শারীরিক অপমান বা বাচ্চার মৃত্যুতে সরকারের টনক নড়বে কিনা। তবে আমি এতটুকু জানি যতদিন শাজাহান খান থাকবে, ততদিন আমাদের মত সাধারন জনগণের ভোগান্তি কমবেনা। খান সেনাদের নৈরাজ্য থেকেও রেহাই পাবেনা।