অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
রোববার সকাল ৬টা থেকে কথিত ধর্মঘটের নামে সারাদেশে পরিবহন শ্রমিকদের নৈরাজ্য চলছে। তাদের ঘোষণা অনুযায়ী মঙ্গলবার সকাল ৬ টা পর্যন্ত এই নৈরাজ্য চলবে। পরিবহন শ্রমিকরা শুধু নিজেরাই বাস-ট্রাক বন্ধ রাখেনি, ব্যক্তিগত গাড়ি, সিএনজি, অটোরিকশা, মোটরসাইকেল এমনকি রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সও চলতে দিচ্ছে না।
কেউ তার ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হলে গাড়ি আটকে চালককে মারধর ও মুখে পোড়া মবিল লাগিয়ে দিচ্ছে। নারায়ণগঞ্জে বাসে ঢুকে এক কলেজছাত্রীর শরীর ও মুখে পর্যন্ত পোড়া মবিল লাগিয়ে দিয়েছে পরিবহন শ্রমিক নামের সন্ত্রাসীরা।
সবচেয়ে অমানবিক ও বর্বরোচিত দুইটি ঘটনা তারা ঘটিয়েছে মৌলভীবাজারে। এই পরিবহন সন্ত্রাসীদের বাধায় আটকে পড়া একটি অ্যাম্বুলেন্সে ৭ দিনের একটি নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। তারা অ্যাম্বুলেন্সের চালককে নামিয়ে মারধরও করেছে। এরপর বড়লেখায় বরযাত্রীবাহী একটি গাড়িতেও তারা হামলা করেছে। তাদের মারধরে ৮ জন বরযাত্রী আহত হয়েছেন। এছাড়া সারাদেশেতো হামলা-ভাঙচুর চলছেই।
পরিবহন শ্রমিকরা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে রাস্তায় নেমে নৈরাজ্য চালাচ্ছে। অথচ পরিবহন শ্রমিকদের নেতা ও নৌমন্ত্রী শাহজাহান খান বললেন, পরিবহন ধর্মঘটের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তার পক্ষে এবিষয়ে কিছু বলা সম্ভব না। আর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত সাংবাদিকদের কাছে জানতে চেয়েছেন-ধর্মঘট কারা করছে। এছাড়া পরিবহন শ্রমিকদের এসব হামলা-ভাঙচুর ও নৈরাজ্য নিয়ে সরকারের কোনো মন্ত্রী-এমপি এখন পর্যন্ত মুখ খুলছেন না। এসব বন্ধেরও কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না সরকার।
শ্রমিকদের এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও সরকারের নীরবতা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। রাজনীতিক বিশ্লেষকসহ সচেতন মানুষ মনে করছেন- পরিবহন আইন সংশোধনের জন্য আসলে এই ধর্মঘট নয়। এটা সরকারের পূর্বপরিকল্পিত।
কেউ কেউ বলছেন, এই ধর্মঘটের পেছনে সরকারের দুইটি উদ্দেশ্য থাকতে পারে। প্রথমত: সোমবার বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা জিয়া চ্যারিটেবল দুর্নীতি মামলার রায় হওয়ার কথা রয়েছে। রায়ে খালেদা জিয়ার সাজা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। রায়কে কেন্দ্র করে বিএনপি যাতে কোথাও জমায়েত না হতে পারে সেজন্য সরকার পরিকল্পিতভাবে আগের দিন থেকেই পরিবহন ধর্মঘটের মাধ্যমে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে।
দ্বিতীয়ত: সোমবার বর্তমান সরকারের মেয়াদের শেষ দিন। এদিকে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টও আন্দোলনে চিন্তা করতেছে। সরকারের ধারণা মেয়াদের শেষ দিন বিএনপি-জামায়াত বাইরে থেকে লোক এনে ঢাকায় কিছু ঘটাতেও পারে। সেই চিন্তা থেকেই সরকার পরিবহন ধর্মঘটের মাধ্যমে যান চলাচল বন্ধ রেখেছে।
আবার কেউ কেউ মনে করছেন, পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে সরকার নিজ থেকেই এসব করাচ্ছে। এর মাধ্যমে সরকার পরিস্থিতিকে ভিন্ন দিকেও নিয়ে যেতে পারে।