অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের টানা দশ বছরের দুঃশাসনের শেষপ্রান্তে বাংলাদেশ। শাসন কতটা স্বেচ্চাচারি হতে পারে তার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে দলটি। ‘উন্নয়ন আগে গণতন্ত্র পরে’ স্লোগানের মাধ্যমে দলটি দেশ থেকে গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠিয়েছে। দলীয় ব্যক্তিদের নিয়োগ দিয়ে প্রশাসনকে বানানো হয়েছে নিজেদের সেবাদাসে। ক্ষমতার শেষপ্রান্তে এসে দলীয় স্বার্থসিদ্ধিতে তাদের তৎপরতা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিচার বিভাগ ও প্রশাসনকে শতভাগ দলীয়করণ করে সব কিছুকে নিজের খেয়াল খুশীমত চালাচ্ছে সরকার। বছর দুয়েক আগে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে যে সেলিম ওসমান শিক্ষককে কান ধরে উঠা বসা করিয়ে গোটা দেশ থেকে সমালোচনা আর নিন্দার শিকার হলেন, সেই সেলিম ওসমানকে গতকাল সেই অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে আদালত। তার মানে প্রশাসনের সাথে সেই ভিকটিমের সমঝোতা হয়ে গেছে কিংবা আরো গোপন কোন কথা চলছে।
আবার একই পত্রিকায় এটাও পড়লাম যে কিভাবে সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে কেরানীগঞ্জে আর দশটা সাধারন কয়েদীর সাথে আমদানি সেলে রাত কাটাতে হয়েছে। একজন মন্ত্রী মর্যাদার উপদেষ্টা হওয়া স্বত্বেও কারা কর্তৃপক্ষ তাকে ডিভিশন দেয়নি। আবার অনেক সময় মনে হবে, দেশটির কোথাও কারও উপর কারও যেন নিয়ন্ত্রণ নেই। আবার এমনও দেখা গেলো, প্রধানমন্ত্রী বিকেলে বললেন যে আপনারা মামলা দিতে থাকেন আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যা করার করবে। আর সেই রাতেই গ্রেফতার হলেন ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। আর প্রধানমন্ত্রীর হুকুম তামিল করে জেলায় জেলায় মামলা দায়ের তো চলছেই।
বড় পুকুরিয়ার হাজার হাজার টন কয়লা গায়েবের খবরটাই যেন গায়েব হয়ে গেছে। মানুষজন তা ভুলেও গেছে। একটা তদন্ত কমিটি হয়েছিল, সেই তদন্ত কমিটি তাদের তদন্তে কি পেলো তাও জানা হলোনা। দুদক কিছুদিন প্রকল্পের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরকে ডাকাডাকি করলো এরপর তারাও চুপ।
আবার প্রধানমন্ত্রী একদিন বললেন আমি ইভিএম এর পক্ষে। আর সংগে সংগে নির্বাচন কমিশনও বলতে শুরু করলো আমরা আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করবো। তারা ইভিএম কেনার অন্যায্য প্রস্তাব দিলেন আর সরকারও তাতে সায় দিলো। ভারতের তুলনায় ২১ গুন বেশী দাম দিয়ে ইভিএম কেনার নামে দুর্নীতির এক নতুন মহোৎসবের আয়োজন করা হলো। এভাবেই চলছে দেশ।
পদ্মা সেতুতে নতুন কোন স্প্যান বসেনা, কবে বসবে তাও কেউ জানেনা। পুরো ডিজাইনেই নাকি গলদ আছে। অথচ ৩০ হাজার কোটি টাকা খসানোর সব প্রস্তুতি সম্পন্ন এরই মধ্যে। প্রধানমন্ত্রী সেতু সংলগ্ন এলাকায় গিয়ে সম্প্রতি যেই মুড নিয়ে ভাষন দিলেন তাতে মনে হলো অলরেডি পদ্মা সেতু উদ্বোধনও করে ফেলেছেন তিনি। একই অবস্থা ঢাকার মেট্রোরেল বা এলিভেটেড এক্সপ্রেস প্রকল্পেও। কতগুলো পিলার ছাড়া আর কিছুই দৃশ্যমান নেই অনেক দিন ধরে।
সরকারের সব মনোযোগ হলো প্রতিপক্ষ দমন করার ব্যপারে। আর নীতিহীন দালাল দলকানা প্রশাসন সেই মোতাবেক শুধু সরকারের এজেন্ডাই বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। সবাই সরকারের বিরুদ্ধে বলে, কিন্তু আমার মতে এই নীতিহীন প্রশাসন আর দালাল মিডিয়াকেও সরকারের সাথে একই কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। না হলে সর্বগ্রাসী এই ক্যান্সার থেকে আমাদের মুক্তি পাওয়া সহজ হবেনা।