অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
শীর্ষ ব্রিটিশ আইনজীবী লর্ড এলেক্স কার্লাইল কিউসি দাবী করেছেন যে, বাংলাদেশ সরকারের প্রচন্ড চাপের মুখেই ভারতীয় প্রশাসন তাকে ভারতে প্রবেশ করতে দেয়নি। বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী হওয়ায় তিনি ভারত ও বাংলাদেশ- উভয় দেশের সরকারের রোষানলে পড়েছেন বলেও তিনি অভিযোগ করেন। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি ভাষান্তর করেছে অ্যানালাইসিস বিডি।
‘UK lawyer alleges India deported him under Bangladesh pressure’ শীর্ষক এই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ফেব্রুয়ারী থেকেই জিয়া চ্যারিটেবেল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৫ বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত হয়ে বেগম খালেদা জিয়া জেলে বন্দি আছেন। কার্লাইল অভিযোগ করেন, বাংলাদেশ সরকারের চাপে ভারত যেভাবে সাড়া দিয়েছে এবং অন্যায়ভাবে তাকে বের করে দিয়েছে তাতে তিনি দু:খ পেয়েছেন। উল্লেখ্য গত বৃহস্পতিবার সকালে ভারতে পৌঁছে দেশটিতে ঢুকতে চাইলে সেখান থেকে কার্লাইলকে পুনরায় ব্রিটেনে ফেরত পাঠানো হয়।
কার্লাইল অভিযোগ করে বলেন যে আইন শৃঙ্খলার দিক থেকে বাংলাদেশ এখন অত্যন্ত নীচের দিকে অবস্থান করছে। আর বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে নির্লজ্জভাবে সমর্থন করে ভারতও নিজেদেরকে ছোট করেছে।
সপ্তাহ খানেক আগে বাংলাদেশের বেশ কিছু পত্রিকায় এ মর্মে খবর প্রকাশিত হয়েছে যে, কিছু দিন আগে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় থেকে ঢাকায় কর্মরত ভারতের ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনার ড. আদর্শ সোয়াইকাকে ডেকে পাঠায়। এই সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা ভারতীয় কুটনীতিকের সাথে কার্লাইলের এই সফর নিয়ে আলোচনা করেন এবং তাকে ভিসা না দিতে অনুরোধ করেন।
এই ব্যপারে আল জাজিরা বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি কোন মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। অন্যদিকে আল জাজিরা ভারতীয় দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাতে সফল হয়নি।
অন্যদিকে কার্লাইলকে ভারতে প্রবেশ করতে না দেয়ার ব্যাপারে ভারতের বিদেশ মন্ত্রনালয়ের মুখপাত্র রাভিশ কুমার এক বিবৃতিতে জানান, ভারতের কোন কুটনীতিককে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ডেকে পাঠিয়েছিল বা এ ধরনের কোন বৈঠক হয়েছে বলেও তার জানা নেই। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, কার্লাইলকে ভারতে ঢুকতে দেয়া হয়নি কেননা তার কাছে ভারতে প্রবেশ করার মত যথাযথ ভিসাই ছিলনা।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ভারতে কার্লাইল কি কাজে আসছেন বা তার সফরসূচী সম্পর্কে তাদের কাছে কোন তথ্য ছিলনা। আর তিনি কেন ভারতে প্রবেশ করতে চাইছিলেন সেটাও তার ভিসা আবেদনপত্রে উল্লেখ করা হয়নি। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের এক সংবাদ সম্মেলনে আরো অভিযোগ করা হয় যে কার্লাইলের গতিবিধি ও মন্তব্যগুলো খুবই অসংগতিপূর্ন ও সন্দেহজনক বলেই মনে হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে রাভিশ কুমার আরো জানান, তাদের কাছে কার্লাইলের এই সফরটা উদ্দেশ্যমুলক মনে হয়েছে এবং তারা ধারনা করেছেন কার্লাইল আসলে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার বিদ্যমান সুসম্পর্ককে নষ্ট করার প্রয়াস নিতে পারেন। সেই সাথে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের সাথে ভারতীয় প্রশাসনের ভুল বোঝাবোঝি সৃষ্টি হতে পারে এই সফরের কারনে।
কিন্তু আল জাজিরাকে দেয়া সাক্ষাতকারে লর্ড কার্লাইল বলেন, তিনি ভারতে ই-ভিসার আবেদন করেছিলেন এবং আবেদনপত্রে তিনি সঠিক তথ্য দিয়েছিলেন এবং সব প্রশ্নের যথাযথ উত্তরও দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তারা তার সফরের ব্যপারে যেসব মন্তব্য করেছেন তা সঠিক নয় এবং এগুলো সবই মিথ্যা। খুব শীঘ্রই এই ব্যপারে ভারতীয় সরকারের বিস্তারিত ব্যাখ্যা ও ক্ষতিপূরন চেয়ে তিনি চিঠি দিবেন বলেও কার্লাইল আল জাজিরাকে জানিয়েছেন।
কার্লাইল জানান তিনি ভারতে আসতে চেয়েছিলেন কেননা সেখানে খালেদা জিয়ার মামলা নিয়ে তার একটি ব্রিফিং এ অংশ নেয়ার কথা ছিল। দিল্লীতে দক্ষিন এশিয়ার রাজনৈতিক ইস্যুগুলোকে কভার করার মত অনেক সাংবাদিক কর্মরত থাকায় তিনি তাদের কাছেই এই মামলার বিষয়ে তার পর্যবেক্ষনগুলো প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন।
কার্লাইল আল জাজিরাকে বলেন, “আমার সমস্যা একটাই আর তা হলো আমি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের মত রাজনৈতিক একটি মামলায় সম্পৃক্ত হয়েছি। এই মামলাটায় কাজ করতে গিয়ে আমি দেখেছি, এটা পুরোটাই রাজনৈতিক মামলা। এতে এখানে দুর্নীতির কোন প্রমান পাওয়া যায়নি। তাকে সম্পুর্ন আইনের বিপরীতে গিয়ে দন্ডিত করা হয়েছে। এবং কেসটির প্রতিটি পর্যায়ে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের বিষয়টি পরিলক্ষিত হয়েছে। বাংলাদেশের বিচার বিভাগ যে স্বাধীন নয় এটা এই মামলায় প্রমানিত হয়েছে।”