অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের একতরফাভাবে সমালোচনা করে ফের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি কোটা আন্দোলনকারীদের সমালোচনা করে একটি কলাম লিখেন, যা প্রায় সবগুলো পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সেখানে তিনি আন্দোলনকারীদের ‘আমি রাজাকার’ স্লোগানের তীব্র সমালোচনা করেন। আন্দোলনকারীদের সমালোচনা করে তিনি বলেছেন, একটি সরকারি চাকরি পাওয়ার জন্য বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া তরুণরা রাজাকার নামক আবর্জনায় পরিণত হয়ে গেছে।
কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী কোটা আন্দোলনকারীদেরকে ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে গালি দিলে আন্দোলনকারীরা ‘আমি রাজাকার’ স্লোগান দিয়ে তার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানায়। জাফর ইকবাল তার লেখায় মতিয়া চৌধুরীর ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বক্তব্যটি এড়িয়ে গিয়ে সম্পূর্ণ একপেশেভাবে কেবল আন্দোলনকারীদের ‘আমি রাজাকার’ স্লোগানের সমালোচনা করেছেন। যে কারণে আন্দোলনকারীরা জাফর ইকবালের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
আন্দোলনকারীদের অনলাইন প্লাটফর্ম ফেসবুক গ্রুপগুলোতে এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। কেউ কেউ তার সকল বই বর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন। অনেকে তার বই ছিঁড়ে বা পুড়িয়েও ফেসবুকে পোষ্ট করছেন। অনেকে তাকে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবাঞ্ছিত ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। অনেকে আবার তার একপেশে মন্তব্যের জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
জাফর ইকবাল শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কোটা বিরোধী আন্দোলন বলায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা নুরুল হক নুর ফেসবুকে লিখেছেন, “জ্ঞানপাপী দালাল,অতিউৎসাহী, চাটুকার সব যুগেই ছিল। যৌক্তিককে অযৌক্তিক আর অযৌক্তিককে যৌক্তিক এবং সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্য বলে প্রচার করাই ওদের কাজ। যে কারনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের “কোটা সংস্কার” এর যৌক্তিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে ওরা “কোটা বিরোধী” আন্দোলন এবং আন্দোলন নিয়ে বিভিন্ন মিথ্যা প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। জ্ঞানপাপী দালাল , অতিউৎসাহী, চাটুকারদের কথায় কান না দিয়ে, অটুট মনোবল ও সাহস নিয়ে নিজেদের তথা সারা বাংলার ছাত্রসমাজের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রস্তুত হন।”
সৌরভ জামান নামে এক আন্দোলনকারী ফেসবুকে লিখেছেন-
“বুঝতে পারতেছেন আজকে কথা বলব জাফর ইকবাল স্যারকে নিয়ে। উনাকে স্যার বলতে ও আমার কষ্ট হয়। কালকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের রাজাকার ট্যাগ নিয়ে তিনি একটা কলাম দেন। নিচে তার চুম্বক অংশ তুলে দেওয়া হল:
‘তাড়া খাওয়া পশুর মতো দেশের নানা জায়গা ঘুরে শেষ পর্যন্ত ঢাকা এসে আশ্রয় নিয়েছি। তখন দেশের অন্য যে কোনো জায়গায় যে কোনো সময় পাকিস্তান মিলিটারি যে কোনো মানুষকে অবলীলায় মেরে ফেলতে পারত। সেই হিসেবে ঢাকা শহর খানিকটা নিরাপদ।’
জাফর ইকবাল স্যারের জন্ম ১৯৫২ সালে। ১৯৭১ সালে তিনি ১৯ বছরের টগবগে যুবক। যুবক অবস্থায় থাকা সত্ত্বেও তিনি যুদ্ধে যাননি। তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। অথচ সর্বকনিষ্ঠ খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল ইসলাম মাত্র ১৩ বছর বয়সে যুদ্ধে যান ও সাহসিকতার সাথে বিভিন্ন অভিযানে অংশ নেন।
সেদিনের যুদ্ধবিমুখ জাফর ইকবাল নামক ছেলেটি আজ আমাদের যুদ্ধের গল্প শোনায়। আমাদের রাজাকারের ডেফিনেশন শেখায়। কত বড় হিপোক্রেসির দেশে বাস করি রে বাবা। আসলে জাফর ইকবালরা শুধু গল্প লিখতে এক্সপার্ট, আর যুদ্ধ নিয়ে কলাম, প্রবন্ধ, টকশো এসব করে বেড়ায়। মুক্তিযুদ্ধকে পুঁজি করে নিজের আখের গোছাতে এরা ব্যস্ত থাকে। জাফর ইকবালরা আর যাই হোক নতুন প্রজন্মদের স্বপ্ন দেখাতে পারে না।
প্রিয় জাফর ইকবাল স্যার আশা করি ফালতু কথাবার্তা বলে নিজেকে ছোট করবেন না। আর দালালি, চামচামি, মুক্তিযুদ্ধকে পুঁজি করে ব্যবসা ছেড়ে আশা করি ভালো পথে আসবেন।”
কে এম শাফায়েত মৃধা নামে একজন আন্দোলনকারী বয়কট জাফর ইকবাল হ্যাশট্যাগ দিয়ে ফেসবুকে লিখেছেন, “জাফর ইকবাল কোটা আন্দোলন নিয়ে যে বিষাদগ্রস্ত মন্তব্য করেছেন তা প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য বিরোধী। অবিলম্বে জাতির কাছে তাকে ক্ষমা চাইতে হবে।”
ইয়াসির আরাফাত নামে একজন লিখেছেন- “জাফর ইকবাল স্যার একজন অজ্ঞ ব্যক্তি। কারণ দুনিয়ার কোন বিষয়ে সে যানে না। দুটো পত্রিকা ছাড়া সে কিছুই পড়ে না। কোন ইমেইল দেখে না। বিটিভির ভক্ত। সেটা আজ জাতির কাছে খোলা খুলি বলেছে।তাই তাকে “বিশেষ ধরনের অজ্ঞ” হিসেবে পরিচিতি প্রদান করা হউক!”
সাদ্দাম সুমন নামে এক আন্দোলনকারী তার দীর্ঘ পোষ্টে লিখেছেন-
“জনাব জাফর ইকবাল! আমি ভেবে পাচ্ছিনা আপনাকে কি বলে সম্বোধন করবো! আপনার লেখা কলামে আপনি কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রতি চরম বিষেদগার করেছেন। আপনার চুলকানি এই ছবিটা নিয়ে! আপনি বিশাল একটা জ্ঞান প্রদান করেছেন রাজাকার কতো খারাপ তা নিয়ে!!
আপনার হয়তো জানা নেই, এই তরুণ প্রজন্ম এখন ইতিহাস চর্চা করে। তারা সত্যের সন্ধানে উন্মুখ! আপনি যদি চান তো এই তরুণ প্রজন্মের কাছে সত্য ইতিহাস জানার জন্য চলে আসতে পারেন! সবাই আপনার মতো একচোখা আর জ্ঞানপাপী হবে এই আশা করেন কিভাবে??
এই প্রজন্মকে যখন মতিয়া চৌধুরী সংসদে বসে “রাজাকারের বাচ্চা” বলে গালি দিয়েছিলো তখন কোথায় ছিলো আপনার চেতনা?? তখন কিছু লিখলেন না কেনো?? কলমের কালি কি শুকিয়ে গিয়েছিলো?? যখন এই প্রজন্ম এই অপ্রত্যাশিত গালি শুনলো, তখনই তো তারা ফেটে পড়েছিলো ক্ষোভে!!
যারা আসলেই দেশকে ভালোবাসে তাদের বানিয়ে দিলেন রাজাকার!! তখন এই প্রজন্মের কীইবা করার ছিলো? তাই তো তারা আপনাদের দেওয়া গালিটা গোলার মতো নিক্ষেপ করলো আপনাদেরই মুখে!! নিজেদের পরিচয় দিলো রাজাকার হিসেবে। যদি দেশকে ভালোবাসার জন্য, অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য “রাজাকার” হতে হয় তবে তো এটাই ভালো!
দেশ বিরোধী কর্মকান্ড দেখে চুপ করে থেকে, অন্যায়ের প্রতিবাদ না করে “দেশপ্রেমিক” উপাধি এই আপনারা চাইতে পারেন! কিন্তু জেনে রাখুন, এই প্রজন্ম চায় না!
আপনি তো সাহিত্যের মানুষ! সাহিত্যের মানুষ হয়ে এই সাধারণ ক্ষোভের ব্যাপারটা ধরতে পারলেন না!! “নেগেটিভ এপ্রোচ” ব্যাপারটা আপনি জানেন কিনা এই ব্যাপারে সন্দেহে পড়েই গেলাম।”
ইব্রাহিম খলিল নামে একজন লিখেছেন- “আমার কাছে জাফর ইকবাল স্যারের যত বই আছে, বইগুলো দেখলে আমার কেন যেন বমি এসে পড়ে, গলার ভিতর হাত দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। স্যার আপনি ছিলেন গোটা বাংলাদেশের ছাত্র সমাজের অহংকার ও অবিভাবক। আজ আপনি হিন্দি ছবিকে বাংলা ছবিতে কনভার্ট করে আমাদের ভিলেন বানালেন। ছাত্রসমাজকে এত বোকা মনে করবেন না। আপনি যাই বলেন আমাদেরকে আপনি পিছু হটাতে পারবেন না, আমরা আছি, আমরা থাকবো দাবি না মানা পর্যন্ত। আপনাকে শুধু একটা কথাই বলবো নিজেকে বেশি পন্ডিত মনে করবেন না। আমরা ধিক্কার জানাই আপনাকে।”
মীর মাজহারুল ইসলাম নামে একজন হুমায়ুন আহমেদের বইয়ের কয়েকলাইন উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছেন-
“হুমায়ুন আহমেদ লিখেছিলেন, “১৬ ডিসেম্বর, ভোর। ১৯৭১। আমার বুক ধক ধক করছে। বাজিছে বুকে সুখের মতো ব্যথা। বিশ্বাসই হচ্ছে না, আমরা স্বাধীন। এখন আর মাথা উঁচু করে হাঁটতে সমস্যা নেই।… ‘নিজের দেশের মাটি/দবদবাইয়া হাঁটি।’ আমি দবদবিয়ে হাঁটার জন্যে বের হলাম। প্রথমে খুঁজে বের করতে হবে আমার ছোট ভাইকে (জাফর ইকবাল)। শুনেছি, সে যাত্রাবাড়ীতে আছে। গর্তে বাস করে। যাত্রাবাড়ীতে আমার দূরসম্পর্কের এক মামা বাড়ির পেছনে গর্ত করেছেন। তিনি তাঁর স্ত্রী এবং দুই ছেলে নিয়ে গর্তে বাস করেন। জাফর ইকবাল যুক্ত হয়েছে তাদের সঙ্গে।” –কত না অশ্রুজল।
আপনি সায়েন্স ফিকশন(কল্পকাহিনী) ভালো লিখেন। আপনার এই বায়াসড(কল্পকাহিনী) লিখার জন্য, বই পড়ে আপনার জন্য যা সম্মান ছিলো তা গলায় আংগুল ঢুকিয়ে বমি করে বের করার চেষ্টা করছি। আল্লাহ যদি কোনদিন সুযোগ দেয় ক্যাডার হবার , আর আপনি যদি আসেন। নিশ্চিত থাকুন আপনার ক্লাস টাইমটা টয়লেটে বসে কাটিয়ে দিয়ে আসবো , আর আপনার সাথে ছবি তোলা? নাহ এত হা হা রিয়েক্ট নিতে পারবো না।”
জনপ্রিয় অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট রাশেদ খান তার ফেসবুকে লিখেছেন-
“জাফর ইকবাল আজকে দৈনিক যুগান্তরে একটি কলাম লিখছেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন, ‘— ঢাকা শহরের মানুষকে জিম্মি করে আন্দোলন করার জন্য আমি যথেষ্ট বিরক্ত হয়ে সাপ্তাহ দুয়েক আগে একটি লেখা লিখেছিলাম। (সে সময়ে আমার মেয়ে হাসপাতালে ছিল, তাই ঢাকা শহরকে জিম্মি করে ফেললে হাসপাতালের রোগীদের কী ধরনের কষ্ট হয় আমি নিজে সেটি জানতে পেরেছি)’
একজন মানুষ কতখানি হিপোক্রেট হতে পারে, তাঁর জ্বলন্ত উদাহরণ হচ্ছেন এই জাফর ইকবাল। আজকে উনার নিজের মেয়ে হাসপাতালে ছিল বলে উনি ফিল করতে পারছেন রাস্তা জিম্মি হলে কতখানি কষ্ট হয়। কিন্তু, উনি কলাম লিখে, বক্তব্য দিয়ে এক সময় এই তরুণ প্রজন্মকে “ফাঁসি চাই” স্লোগান দেয়ার জন্য রাস্তায় নামতে উস্কে দিয়েছিলেন। সেদিন জাফর ইকবালের মনে ছিল না, এই শাহবাগে দেশের বড় দুইটি হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার জন্য দেশের দূর দুরান্ত থেকে প্রতিদিন অনেক বাবা তাঁর মেয়েকে নিয়ে আসেন।
কোটা আন্দোলনের ছাত্ররা ন্যায্য দাবীর জন্য রাস্তায় নেমে আন্দোলন করলে জাফর ইকবালের মানুষের দুর্দশার কথা মাথায় আসে। কিন্তু মাত্র চার মাস আগেও উনার কাছে এই বিষয় গুলো কষ্টের ছিল না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা দেয়ার অনুষ্ঠানে জাফর ইকবাল যখন সহরোওয়ার্দী উদ্যানে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে “জয় বাংলা” স্লোগান দিছিলেন, ঠিক সেই সময়ে বাংলামোটরে প্রচণ্ড জ্যামের মধ্যে ছটপট করছিলো একজন প্রসূতি মা। এমন ন্যাক্কার জনক ঘটনার প্রতিবাদ দেশের বিবেকবান সকল মানুষ করলেও, জাফর ইকবাল সেদিন ব্যাস্ত ছিলেন “বঙ্গবন্ধু উপর থেকে আমাদের সব অর্জন দেখছে” কলাম লিখায়।
জাফর ইকবাল তাঁর বিবেক বন্ধক রেখে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নামের এক কালী দিয়ে কলাম লিখেন একটি স্বীকৃতি প্রাপ্ত স্বৈরাচার সরকারের জন্য। তাই উনার লিখায় কেবল স্বৈরাচারের স্বার্থ উঠে আসে, উঠে আসে নিজের স্বার্থের কথা। যেখানে উনি উল্লেখ করেন না, মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে এখন ভিক্ষা করা বীর আব্দুর রাজ্জাক শেখের কথা। সেখানে উনি কোনদিন উল্লেখ করে না স-মিলের ভ্যান চালিয়ে সংসার চালানো বীর শ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের ছেলের কথা।
আমি অন্তর থেকে ধন্যবাদ জানাই কোটা আন্দোলন গ্রুপের সকল মেম্বারকে। আজকে সকাল থেকে সেখানে লক্ষ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রী জাফর ইকবালের প্রতি তাদের চরম ঘৃণা জানিয়ে যাচ্ছেন। এই প্রজন্ম এখন জানে, বুঝে ছোট বেলায় পড়া প্রিয় কিশোর উপন্যাস লেখক জাফর ইকবাল একজন হিপোক্রেট। যারা এখনো জাফর ইকবাল কে চিনতে পারে নাই। ইনশা’আল্লাহ তারাও একদিন চিনে যাবে। অমানুষ চিনতে না পারলে লজ্জা পাওয়ার কিছু নাই। কারন অমানুষ গুলো দেখতে অবিকল মানুষ রুপী জাফর ইকবালের মতই হয়।”