অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান ৫৬ শতাংশ কোটা সংস্কার করে একটি যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করে আসছে শিক্ষার্থীরা। তারা কখনো বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থার বিলুপ্তি চায়নি। তাদের দাবি হলো কোটা কমিয়ে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিতে হবে। মেধাবীরা যাতে সরকারি চাকরি থেকে বঞ্চিত না হয়।
কিন্তু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে কোটা ব্যবস্থাটাকেই একেবারে তুলে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী কি আসলেই কোটা বাতিল চান নাকি চলমান আন্দোলন দমনের নতুন কৌশল হিসেবে এমন ঘোষণা দিয়েছেন এনিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক, রাজনীতিক বিশ্লেষসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে সন্দেহ সংশয় দেখা দিয়েছে।
এছাড়া মানুষের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হওয়ার যৌক্তিক কিছু কারণও রয়েছে।
দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে উঠা আন্দোলনকে দমনের জন্য সরকার নানান কৌশল অবলম্বন করেছে। আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের দিয়ে নিষ্ঠুর নির্যাতন চালিয়েছে। রাতের আধারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে হলে গিয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদেরকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করেছে। ছাত্রীদের ওপরও চালিয়েছে নিপীড়ন। সর্বশেষ মঙ্গলবার রাতে এক ছাত্রীর পায়ের রগ পর্যন্ত কেটে দিয়েছে তারা। আন্দোলনকারীদেরকে ফাসানোর জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাস ভবনে বর্বর কায়দায় হামলা-ভাঙচুর চালিয়েছে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা।
এসব করেও যখন আন্দোলন দমাতে পারেনি তখন কোটা সংস্কারে আন্দোলনকারীদের কাছ থেকে ১ মাসের সময় চায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। কয়েকজন শিক্ষার্থী প্রথম দিকে এ প্রস্তাবে রাজি হলেও অপর পক্ষের কঠোর বিরোধীতার কারণে তারা সরে আসে। ওবায়দুল কাদেরের এ প্রস্তাব যে চলমান আন্দোলন নস্যাতের সরকারের চাল এটা তারা বুঝতে পেরে আন্দোলন অব্যাহত রাখে। ব্যর্থ হয় সরকারের চক্রান্ত।
শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনের মুখে বুধবার জাতীয় সংসদে কোটা পদ্ধতিই বাতিলের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তবে, বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণা একটি কৌশল মাত্র। এটা বাস্তবায়ন হবে না। জটিলতা আরও বাড়বে। কারণ, কোটা বাতিল সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এটা নিয়ে পরবর্তীতে হাইকোর্টে রিট হতে পারে। কোটা সম্পূর্ণ বাতিল করলে তা সংবিধানের ২৮(৪), ২৯(৩)(ক) অনুচ্ছেদের সাথে সাংঘর্ষিক হবে। ফলে কোনো পক্ষ যদি এনিয়ে সুপ্রিমকোর্টে একটি রিট করে তাহলে বর্তমান কোটা ব্যবস্থা আবার ফিরে আসবে। দেখা যাবে, কোটা বাতিলের পরদিনই হাইকোর্টে রিট হবে। হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দেবেন। এরপর আর আন্দোলন করার কিছু থাকবে না। আদালতের ওপর তো কথা বলা যায় না।
প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে ব্যাপক সমালোচনা। অনেকেই বলছেন প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাটা রাগের মাথায় বউ তালাকের মতো হয়ে গেছে। ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণা কখনো বাস্তবায়ন হবে না। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্য হলো কৌশলে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনকে নস্যাৎ করা।