মুসাফির রাফি
কথায় আছে, কুকুরের লেজ কোনদিন সোজা হয়না। ছাত্রলীগও কুকুরের লেজ টাইপ হয়ে যাচ্ছে। যে যাই বলুক, লিখুক, ওদের কিছু আসে যায়না, ওরা যেন ওদের মত করেই অপকর্ম করে যাবে।
ছাত্রলীগের নৈরাজ্যের কারনে গত ৩ মাসে কতগুলো বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ বন্ধ করে দিতে হয়েছে কিংবা কতজন নিরীহ মানুষ হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে, সেটা নিয়ে চলতি সপ্তাহেই অনেকগুলো লেখা বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে, টকশোতে ছাত্রলীগের নগ্ন সমালোচনা করা হয়েছে। কিন্তু কিছুতেই যেন কিছু হওয়ার নয়।
ছাত্রলীগ এখন বেপরোয়া, ভাড়াটে গুন্ডাবাহিনীর মত করে সাধারন মানুষ বিশেষ করে সাধারন ছাত্রছাত্রীদের ঘাড়ে চড়াও হয়ে আছে। চলমান সমালোচনার ঝড়ের মুখেও বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা না করে ছাত্রলীগ আবারও তার বর্বরতার বহি:প্রকাশ ঘটালো গত ২৩ তারিখ মঙ্গলবার। স্থান এবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আর ভিকটিম সেও একই, আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীরা। জাস্ট চিন্তা করে দেখুন কত বড় বেহায়া হলে একটি সংগঠনের নেতাকর্মীরা বার বার একই আন্দোলনরত গ্রুপকে এভাবে মারতে পারে।
আগের সপ্তাহে আবার নারায়নগঞ্জে আওয়ামী লীগের এমপি শামীম ওসমানের সাথে নারায়নগঞ্জ শহরের আওয়ামী সমর্থিত মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীর মারামারিও দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের যেন আর সহ্য হচ্ছেনা। ক্ষমতার স্বাদকে লেহন করেও ওদের স্বাদ মিটছেনা। ক্ষমতা আর আধিপত্য প্রতিষ্ঠার নিমিত্তে এখন তারা যেন পশুরও অধম হয়ে গেছে।
মঙ্গলবারের ঘটনার বিবরনে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীদের উপর ব্যাপক হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইনের নেতৃত্বে সংগঠনের ২০-২৫ জনের একটি দল উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে যান। তাঁরা উপাচার্যকে কক্ষে পাঠিয়ে আন্দোলনকারীদের করিডর থেকে সরিয়ে দেন। এরই মধ্যে ছাত্রলীগের কয়েক শ কর্মী এসে জড়ো হন। এরপর তাঁরা আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালান। শিক্ষার্থীরা বের হওয়ার সময় বিভিন্ন ফটকের সামনে থাকা ছাত্রলীগের কর্মীরা দফায় দফায় রড, লাঠি, ইটপাটকেল, লাথি, কিল, ঘুষি মেরে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেন। দুপুর ৩ টার দিকে হঠাৎ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের নেতৃত্বে এই হামলা চালোনো হয়। এ সময় বিভিন্ন হল থেকে আসা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের টহল দিতে দেখা যায়। তাদের হামলায় আহত হয়েছে বহু শিক্ষার্থী।
একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত ফুটেজে দেখা যায়, রড, লাঠিসহ বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র নিয়ে উপাচার্য ভবনে অবস্থান নেওয়া নিপীড়নবিরোধী শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালাচ্ছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় কারো কারো শরীর থেকে রক্ত পড়তেও দেখা গেছে। অনেকে যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে হামলা থেকে বাঁচতে সাহায্য চাইতে দেখা যায়।
এবারের হামলার একটি বড় বৈশিষ্ট হলো ছাত্রীদের উপর ছাত্রলীগের নারী ক্যাডারদের আক্রমন। কিল, ঘুষি, লাথি তো আছেই, পোশাকও ছিড়ে ফেলা হয় অনেকের। একটা মেয়ের কাছে তার ইজ্জত, আব্রুর চেয়ে বড় কিছু নেই। আমি বুঝিনা, ছাত্রলীগের যেই নেত্রীরা প্রতিবাদরত ছাত্রীদের জামা ছিড়লেন, তিনি নারী হয়েও নারীর সম্মান বুঝতে পারেন না? কয়েকটা ছাত্রীর গলায় জুতো পড়িয়েও ক্যাম্পাসে হাটানো হয়। মঙ্গলবারের ঘটনার মধ্য দিয়ে নারীদের অপমান ও অপদস্থ করার নতুন ইতিহাস রচনা করলো এবার ছাত্রলীগ।
আরেকটি বিষয় আছে যাকে ন্যাচারাল রিভেঞ্জও বলা যায়। ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় আহতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একজন হলেন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক লিটন নন্দী। যিনি এই ছাত্রলীগের পৃষ্ঠপোষকতায় শাহবাগের গন জাগরন মঞ্চে ব্যপক ভুমিকা পালন করেছিলেন। শুধু লিটন নয়, ছাত্র ইউনিয়নের অনেকেই সেই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, মাত্র ৫ বছরের মাথায় সেই ছাত্রলীগের হাতেই মঙ্গলবার ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা নাস্তানাবুদ হলো, মার খেল, অপমানিত আর লাঞ্ছিত হলো।
বাংলা প্রবাদে হয়তো তাই বলা হয় যে ‘চোরের দশদিন আর গেরস্থের এক দিন’।