বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে। রাজপথে আন্দোলনের জন্য ফের উজ্জীবিত হয়েছেন দলটির তৃণমূল নেতাকর্মীরা। এরই মধ্যে খালেদা জিয়ার নামে ৯ অক্টোবর কুমিল্লায় ও ১২ অক্টোবর ঢাকার দুটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানার খবরে নেতাকর্মীদের ভেতর ক্ষোভের সাথে রাজপথে নামার উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে। ঢাকা, বরিশাল, কুমিল্লা, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিশাল বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়। এর মধ্যে বেশিরভাগ স্থানে বিএনপিসহ ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিলে পুলিশ বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ মিলেছে। কিন্তু বরিশালসহ বেশ কয়েকটি স্থানে পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে বিক্ষোভ করেছে দলটির নেতাকর্মীরা। এ জন্য অনেকে অবশ্য পুলিশি লাঠিপেটার শিকার ও আটকও হয়েছেন।
তবে প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, পুলিশি বাধা-নির্যাতন উপেক্ষা করে নতুন করে আন্দোলন সংগ্রামের জন্য বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে উদ্দীপনা দেখা গেছে। খালেদা জিয়া দেশে ফিরে রাজনৈতিক কর্মসূচি দিলে তা বাস্তবয়নেও এখন প্রস্তুত তৃণমূল বিএনপি।
এদিকে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আগামী বুধবার বিকেলে দেশে ফিরছেন। চেয়ারপরসনের দেশে ফেরার দিনক্ষণ ঠিক হয় গত শনিবার। এ খবর কেন্দ্র থেকে গণমাধ্যমের সুবাদে মুহূর্তেই পৌঁছে যায় সারাদেশে। খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার খবরে নতুন করে উজ্জীবিত হয়ে উঠেন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। দলের চেয়ারপারসনকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানাতে এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন পৌরসভা, উপজেলা, জেলা ও মহানগর থেকে ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। কেন্দ্রের কোনও নির্দেশনা না থাকলেও তৃণমূল বিএনপি নেতাকর্মীরা নেত্রীকে সংবর্ধিত করতে ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন বলে জানা গেছে। তৃণমূলের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
বিএনপির দলীয় সূত্র বলছে, গত ১৫ জুলাই চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান বিএনপি চেয়ারপারসন। ফিরছেন ১৮ অক্টোবর। মাঝখানে দীর্ঘ তিন মাসের এ লন্ডন সফরে খালেদা জিয়া চোখ ও পায়ের চিকিৎসা করান। পাশাপাশি দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও তার বড় ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটি পুনঃগঠনসহ খুটিনাটি আলোচনা এবং আগামী দিনে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ ও বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের কর্মপন্থা নিয়ে পরামর্শ সেরেছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র বলছে, দেশে ফিরে বেগম জিয়া বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলাদলসহ সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটি গঠনের ঘোষণা দিতে পারেন। সেই সাথে দেশে প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে চলমান বিতর্ক ও রোহিঙ্গা ইস্যুতে রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারেন বেগম জিয়া। যে ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচিই খালেদা জিয়া ঘোষণা দিবেন, তা বাস্তবায়নে এখন পুরোপুরি প্রস্তুত তৃণমূল বিএনপি। বরং তারা এখন কর্মসূচির জন্য অপেক্ষা করছেন বলেও তৃণমূল বিএনপি ও দলটির অঙ্গসংগঠনের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
খালেদা জিয়াকে সংবর্ধনার প্রস্তুতি
কুমিল্লা ও ঢাকার তিনটি মামলায় গ্রেফতারি পারোয়ানা মাথায় নিয়ে খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার খবরে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। উজ্জীবিত দলীয় নেতাকর্মীরা চেয়ারপারসনকে বিশাল সংবর্ধনার সঙ্গে বরণ করতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
একাধিক দলীয় সূত্র জানায়, এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ১৭ অক্টোবর লন্ডন থেকে রাতে দেশের উদ্দেশ্যে রওনা করবেন ২০ দলীয় জোট প্রধান খালেদা জিয়া। পরদিন বুধবার বিকেল ৫টায় হজরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে তার। এদিন বিমানবন্দর থেকেই তাকে সংবর্ধনা দেয়ার জন্যে বড় ধরনের শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপিসহ এর অঙ্গ, সহযোগী সংগঠনগুলো। সেই সাথে শোডাউন ও সংবর্ধনায় অংশ নিবেন ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরাও। বুধবার ঢাকার রাজপথে থাকবেন তারা।
বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চেয়ারপারসনের দেশে ফেরা নিয়ে বিশাল শোডাউন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপিসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো। ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও মহিলাদলসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের উদ্যোগে এই শোডাউনের প্রস্তুতি চলছে। ওইদিন বিমানবন্দরে দলীয় চেয়ারপারসনকে বিশাল গণসংবর্ধনা দেয়া হবে। সেই সাথে রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত এবং কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘিরে হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতির প্রস্তুতি চলছে।
সূত্র বলছে, দীর্ঘদিন পর রাজধানীতে এটি বিএনপির বড় ধরনের শোডাউন হতে যাচ্ছে। এতে ঢাকাসহ আশ-পাশের জেলার নেতাকর্মীরা অংশ নিবেন। এছাড়াও দেশের সব জেলা ও মহানগর থেকে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতারা সংবর্ধনায় উপস্থিত থাকবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
খালেদা জিয়ার প্রেস উইং কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার শীর্ষনিউজকে বলেন, চেয়ারপারসন দেশে ফেরায় বিশাল সংবর্ধনা দিতে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে।
তিনি বলেন, বুধবার হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গুলশানে নেত্রীর কার্যালয় ও বাসভবন পর্যন্ত নেতাকর্মীরা রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে চেয়ারপারসনকে সংবর্ধনা জানাবেন। এ জন্য ঢাকা মহানগরী ও রাজধানীর পাশের জেলাগুলো থেকে ওইদিন নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসবেন। ইতিমধ্যে দলের উচ্চপর্যায়ে এ নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ প্রশাসনের সহযোগিতা চায় বিএনপি।
এদিকে, বিএনপি প্রধানের দেশে ফেরার সময় জানার পর গত শনিবার সন্ধ্যায় দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল করির রিজভী ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও মানিকগঞ্জসহ রাজধানীর পাশের জেলার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
রিজভী জানান, খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে দলের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামবে বিমানবন্দরে। রাজধানীসহ আশপাশের জেলাগুলো থেকেও নেত্রীকে সংবর্ধনা জানাতে আসবেন নেতাকর্মীরা।
অপরদিকে, শনিবার দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নেতাকর্মীরা নেত্রীর ফেরার অপেক্ষায় প্রহর গুণছেন।
গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে খালেদা জিয়া দেশে ফিরছেন। এ প্রসঙ্গে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের আশঙ্কা করছি না। তারপরও যদি সরকার সেই ধরনের পদক্ষেপ নেয়, তখন সেটা দেখা যাবে। গ্রেফতার করলে করুক। আমরা তো এ পর্যন্ত মিথ্যা মামলায় কতবার জেল খেটেছি। আমার মনে হয় না সরকার তা করবে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া লন্ডনে গেছেন চিকিৎসার জন্য। কিন্তু এই সরকারের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বারবার সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তিনি দেশে ফিরবেন কি না? ছোট মনেরও একটা সীমা থাকে, এই সরকারের সেটাও নাই। তারা জনবিচ্ছিন্ন গণবিরোধী লুটেরা সরকার।
দুদু বলেন, স্পষ্ট কথা- আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আগামী বুধবার দেশে আসবেন। তাকে সংবর্ধনা দেয়ার জন্য নেতাকর্মীরা প্রস্তুত। দেশে এসে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য বিরোধী দলের রাজনীতিতে যা যা করা দরকার তিনি তা-ই করবেন। তাকে সংবর্ধনা ও গণ-অভ্যর্থনা দেয়ার জন্য প্রস্তুতি বিএনপির আছে। দেশে এলে তাকে ব্যাপক সংবর্ধনা দেয়া হবে।
সূত্র: শীর্ষনিউজ
Discussion about this post