বছর গড়িয়ে গেলেও হদিস মিলছে না আব্দুল্লাহিল আমান আযমী এবং ব্যারিস্টার আহমেদ বিন কাসেম আরমানের। তারা কোথায় আছেন সে সম্পর্কে কারো কাছেই কোনো তথ্য নেই। পরিবারের সদস্যরা জানেন না; আদৌ তারা বেঁচে আছেন কি না। সবাই পথ চেয়ে আছেন হয়তো তারা ফিরে আসবেন। পরপর তিনজনকে তুলে নেয়া র পর তাদের মধ্যে বিএনপি নেতা হুমাম কাদের ফিরে এলেও বাকি দুইজনের কোনোই খবর নেই।
গত বছরের ৯ আগস্ট রাতে জামায়াতের সাবেক নেতা মীর কাসেম আলীর ছোট ছেলে ব্যারিস্টার মীর আহমেদ বিন কাসেম আরমানকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে তার বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। সাদা পোশাকধারীরা রাজধানীর মিরপুরের ডিওএইচএসের বাসা থেকে তাকে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে।
পরিবারের অভিযোগ, ওইরাত সোয়া ৯টায় ছয়-সাতজনের সাদা পোশাকের একদল লোক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে ব্যারিস্টার আরমানের মিরপুরের ডিওএইচএসের বাসায় যায়। এ সময় আরমান দরজা খুললে তাকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় ওই অজ্ঞাত লোকজন। পরিবারের সদস্যরা কোনো গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে কি না জানতে চাইলে তারা কোনো জবাব দেননি। এরপর থেকেই আরমান নিখোঁজ।
আরমান বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী। তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একজন ডিফেন্স ল’ ইয়ার ছিলেন। সেই থেকেই পরিবারের সদস্যরা অপেক্ষা করছেন, হয়তো আরমান ফিরে আসবেন। কিন্তু বছর গড়িয়ে গেলেও তার কোনো হদিস নেই।
গত বছরের ২২ আগস্ট রাজধানীর মগবাজারের বাসা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেয়া হয় সেনাবাহিনীর সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আযমীকে (৫৭)। তার মা আফিফা আযম ওই সময় অভিযোগ করেছিলেন, ২২ আগস্ট রাত অনুমান ৯ ঘটিকার সময় রমনা থানার বড় মগবাজারস্থ ১১৯/২ কাজী অফিস লেনের বাসা থেকে ২০-৩০ জন তার ছেলেকে তুলে নিয়ে যায়।
তিনি জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযমের ছেলে। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে ওই সময় এক বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, ‘সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আল আযমী একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তি। তিনি অবসর জীবনযাপন করছেন। তিনি দেশের একজন সুনাগরিক। তিনি দেশের আইন ও সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তার নামে কোনো মামলা নেই। ফলে তাকে গ্রেফতার করা অযৌক্তিক ও বেআইনি।’
সেই থেকেই তিনি নিখোঁজ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন দফতরে ধরনা দিয়েও কোনো লাভ হয়নি পরিবারের। গতকাল পর্যন্ত তার কোনো তথ্য নেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে।
গত বছরের আগস্ট মাসে আরো তুলে নেয়া হয়েছিল বিএনপি নেতা এবং সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুমাম কাদের চৌধুরীকে। পরে তিনি অবশ্য ফিরে এসেছেন। গত বছরের ৪ আগস্ট বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য হুমাম কাদের চৌধুরীকে ঢাকার সিএমএম আদালত প্রাঙ্গণ থেকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নেয়া হয়েছিল। দীর্ঘ সাত মাস পরে গত ২ মার্চ ভোর রাতে ধানমন্ডি এলাকায় কে বা কারা তাকে ফেলে রেখে যায়। তবে কে বা কারা তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল সে সম্পর্কে কিছুই জানা যায়নি। তাকে কে বা কারা ধানমন্ডিতে ফেলে রেখে গেছে সে সম্পর্কেও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, যেসব নিখোঁজের ব্যাপারে অভিযোগ পাওয়া গেছে সেগুলোর খোঁজখবর নেয়া অব্যাহত রয়েছে।
সূত্র: নয়াদিগন্ত
Discussion about this post