তথ্যপ্রযুক্তি আইনের আলোচিত ৫৭ ধারা বহাল রাখার পক্ষে মন্ত্রীরা। গতকাল মন্ত্রিসভা বৈঠকে ৫৭ ধারা নিয়ে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর উপস্থাপনার পর মন্ত্রিসভার সাত জন সদস্য ৫৭ ধারা বহাল রাখার বিষয়ে মত দেন।
মুখ্য সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী ও এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান নিজেদের জড়িয়ে সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর সম্পর্কে মন্ত্রিসভাকে জানান। মন্ত্রিসভার সদস্য ও সিনিয়র আমলাদের বক্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ৫৭ ধারা নিয়ে যেহেতু বিতর্ক উঠেছে তাই এটাকে সুনির্দিষ্ট করা প্রয়োজন। এজন্য স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে বসে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সবকিছু ঠিক করতে হবে।
একাধিক সিনিয়র মন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু তার উপস্থাপনায় বলেন, রাষ্ট্রের রক্ষাকবচ থাকতে হবে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, মৌলিক অধিকার ও বাক-স্বাধীনতা ছাড়া একটি রাষ্ট্র আগাতে পারে না। সংবিধান অনুযায়ী এখন সব কিছুই বিদ্যমান রয়েছে। ৫৭ ধারার কারণে কত সংখ্যক সাংবাদিক নিগৃহীত হয়েছে তার তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। সাইবার ক্রাইম রোধ করতে গেলে ৫৭ ধারা বহাল রাখার বিকল্প নেই। কারও সম্মান ক্ষুণ্ন করা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হতে পারে না। কারণ ইচ্ছাকৃতভাবে কারও সুনাম ক্ষুণ্ন করা সংবাদপত্র বা সাংবাদিকদের কাজ নয়।
তথ্যমন্ত্রীর উপস্থাপনার পর শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, একটি পত্রিকার মালিক এখন সংসদ সদস্য। তিনি আমার কাছে টেকনিক্যাল কলেজ স্থাপনের তদবিরে এসেছিলেন। টেকনিক্যাল কলেজ স্থাপনের জায়গাটির নকশা প্রধানমন্ত্রীকে দেখিয়ে তিনি বলেন, এ স্থানে টেকনিক্যাল কলেজ স্থাপনের অনুমতি দেয়া যায় না। এরপর নানা চাপ দিতে থাকে ওই মিডিয়া হাউজের বিভিন্ন ব্যক্তি। তাদের তদবির না শোনার কারণে আমার বিরুদ্ধে সিরিজ রিপোর্ট হচ্ছে। রিপোর্টে যেসব তথ্য আসছে আদতে এগুলো সত্য নয়। আমার পরিবারের কোনো ব্যক্তি শিক্ষা সেক্টরে ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত নন।
শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যের পর মুখ্য সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী বলেন, একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা তাদের কয়েকটি সংখ্যায় আমাকে ও আমার পরিবারকে জড়িয়ে বিষোদ্গার করেছে। তারা অমানবিকভাবে আমাদের সম্পর্কে মনগড়া কথা লিখে চলেছে। শুধু তাই নয়, কাল্পনিক কিছু বিষয় প্রকাশ করেছে। ওই পত্রিকাটির সম্পাদক এর আগে ভুয়া সংবাদ প্রকাশের দায়ে জেল খেটেছেন। এখনো বিভিন্ন ব্যক্তির নামে বিদোদ্গার করে সাপ্তাহিকটি সংবাদ প্রকাশ করে চলেছে। তথ্য অধিদপ্তর কর্তৃক তার অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিল করা হয়েছে। এরপরও দিব্যি তিনি সচিবালয়ে ঘুরছেন।
এনবিআরের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান একটি পত্রিকার নাম উল্লেখ করে তার সম্পর্কে প্রকাশিত সংবাদের বর্ণনা দিয়ে বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই একটি পত্রিকা আমার পেছনে লেগে যায়। ওই পত্রিকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট ও ট্যাক্সে তদবির না শোনায় যাচ্ছেতাই ভাষায় আমার চাকরি জীবনের সুনাম ক্ষুণ্নের চেষ্টা করে। নানা সংবাদ প্রকাশ করে।
এছাড়া মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এবং তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক। আলোচনায় মন্ত্রিসভার এসব সদস্যরা ৫৭ ধারার পক্ষে মত দিয়ে বলেন, ৫৭ ধারা বাতিল করা হলে সরকারের হাতে কি থাকলো। কারণ সাইবার ক্রাইম রোধ করতে ৫৭ ধারা রাখা জরুরি। তবে ধারাটি সুনির্দিষ্ট করা যেতে পারে।
সূত্র: মানবজমিন
Discussion about this post