অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
অবশেষে একদলীয় সংসদে পাস হওয়া বিচারপতিদের অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা দিয়ে বাতিল করে দিয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। এ রায়ের মাধ্যমে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা আর সংসদের হাতে থাকছে না।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেই একদলীয় সংসদে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস করে বর্তমান সরকার। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের টার্গেট ছিল এ সংশোধনীর মাধ্যমে তারা আবার ৭২ সালের সংবিধানে ফিরে যাবে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান যে আইনটি করেছিলেন। ৭৫‘র ১৫ আগস্টের পর দেশের রাজনীতিতে পট পরিবর্তন হলে পরবর্তী সরকার এই আইনটি বাতিল করে দেয়।
২০১৪ সালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার সংসদে আবার সেই আইনটি পাস করার পরই এনিয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন বিশিষ্টজন, আইনজ্ঞ, বিরোধী রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। সরকার দেশের সর্বেচ্চ আদালতকে সম্পূর্ণ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার লক্ষ্যেই সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস করেছে বলে তখন মনে করেছিলেন তারা। রাজনীতিক বিশ্লেষকদের মতে, সারা দুনিয়া সামনে এগিয়ে গেলেও বাংলাদেশকে সব সময় পেছনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে আওয়ামী লীগ। দলটি যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই শেখ মুজিবের আমলের ৭২’র সংবিধানে ফিরে যাওয়ার নামে দেশকে পেছনে ঠেলে দিয়েছে।
তখন প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন দেশের আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞরাও। এই সংশোধনী সংবিধানের মৌলিক কাঠামোতে পরিবর্তন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুন্ন করবে- এমন যুক্তিতে সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৪ সালের ৫ নভেম্বর হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করা হয়। পরে রিটের ওপর প্রাথমিক শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০১৪ সালের ৯ নভেম্বর রুল জারি করেন। গত বছরের ৫ মে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও বিচারপতি আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ বলে রায় ঘোষণা করেন।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে শুনানির জন্য ১০ জন এ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ দেয়া হয়। এদের মধ্যে ৯ জনই ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পক্ষে মত দেন। অ্যামিকাস কিউরিরাও যুক্তির মাধ্যমে সরকারের অসৎ উদ্দেশ্যকে তুলে ধরেন। সর্বশেষ গত সোমবার সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ সরকারের করা রিট খারিজ করে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন।
এ রায়কে গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও জনগণের বিজয় বলে আখ্যায়িত করেছেন আইনজীবীরা। আর এ রায়ের মাধ্যমে সরকারের অসৎ উদ্দেশ্য ধুলিস্যাৎ হয়েছে বলে মনে করছে বিএনপি।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আদালতের এ রায়ে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। ওই দিন মন্ত্রিপরিষদের সভায় রায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলেও জানা গেছে। রায়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক।
সম্প্রতি প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার বিভিন্ন বক্তব্যে সরকার বিব্রতবোধ করছে। এখন ষোড়শ সংশোধনী বাতিল হয়ে যাওয়ায় বিচার বিভাগ নিয়ে সরকার বিব্রত অবস্থায় আছে বলেও জানা গেছে।
Discussion about this post