বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর কেবলই দেয়ার এবং কোনো কিছুই না পাবার এক চরম ব্যর্থ সফর। এ সফরে জাতীয় স্বার্থবিরোধী একগাদা চুক্তি ও সমঝোতা করে খর্ব করা হয়েছে রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব। বাংলাদেশকে করা হয়েছে ভারতের সামরিক পরিকল্পনার অংশ। বিএনপি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় গেলে দেশবিরোধী সব চুক্তি রিভিউ করবে।
আজ বুধবার বিকেলে গুলশান কার্যালয়ে জনাকীর্ণ এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর সম্প্রতি ভারত সফর নিয়ে দলীয় অবস্থান তুলে ধরতেই এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সফর শেষে গত মঙ্গলবার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী ভারতের সাথে চুক্তি ও সমঝোতা নিয়ে যেসব কথা বলেছেন, তারও বিস্তারিত জবাব দেন বিএনপি প্রধান।
খালেদা জিয়া বলেন, ভারত সফর শেষে সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা নিজেই স্বীকার করেছেন, তিনি দিল্লিতে কিছু চাইতে যাননি। কেবল বন্ধুত্বের জন্য গিয়েছিলেন এবং সেটা তিনি পেয়েছেন। কিসের এই বায়বীয় বন্ধুত্ব তা দেশবাসীই বিচার করে দেখবেন। তবে এই কথার মাধ্যমে শেখ হাসিনা প্রকারান্তরে মেনে নিয়েছেন, ভারত থেকে তিনি দেশের জন্য কিছুই নিয়ে আসতে পারেননি। বরং ভারতের চাহিদা মোতাবেক সবকিছুই দিয়ে এসেছেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা গত ৭ থেকে ১০ এপ্রিল ভারত সফর করেছেন। সফরকালে বাংলাদেশের জনগণকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে দু’দেশের মধ্যে অনেকগুলো চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। প্রস্তাবিত চুক্তি ও সমঝোতা নিয়ে সফরের আগে রাজনৈতিক দলগুলো ও নাগরিক সমাজের সাথে কোনো আলোচনা করা হয়নি। তাদের একতরফা কথিত পার্লামেন্টেও কোনো আলোচনা হয়নি। এই গোপনীয়তার কারণে সবার মধ্যে যে উদ্বেগ ও আতঙ্ক ছিলো সফরের পর তা যথার্থ প্রমাণিত হয়েছে।
খালেদা জিয়া বলেন, তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা, গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্প, সীমান্ত হত্যা বন্ধ এবং বাংলাদেশী রফতানি-পণ্যের ওপর থেকে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূর করার মতো বাংলাদেশের অগ্রাধিকারের বিষয়গুলোতে এই সফরে কোনোই অগ্রগতি হয়নি। জনগণের দাবি সত্বেও সুন্দরবন-বিনাশী এবং পরিবেশ বিধ্বংসী রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের স্থান পরিবর্তনের জন্য তিনি একটি কথাও বলেননি। বরং প্রধানমন্ত্রীকে কতগুলো আশ্বাস নিয়ে খালি হাতে ফিরে আসতে হয়েছে। শুধু তাই নয়, অতীতের ধারাবাহিকতায় ভারতের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ও প্রস্তাবিত বিষয়গুলোতেই কেবল অনেকগুলো চুক্তি ও সমঝোতা সই করা হয়েছে।
সরকার জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার বাংলাদেশের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দেশে নির্বাচনের নামে একটি প্রহসন করেছিল। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরাও এই প্রহসনে শামিল হননি। শতকরা ৫ ভাগ ভোটারও ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হননি। ফলে দেশে বলবৎ রয়েছে জবাবদিহিতাহীন একতরফা স্বৈরশাসন। এতবড় প্রহসন ও জালিয়াতির মাধ্যমে গঠিত সরকারের নৈতিক কোনো ভিত্তি ও গ্রহণযোগ্যতা থাকে না। জনগণের সম্মতি ও প্রতিনিধিত্বহীন এ ধরণের সরকারের জাতীয়, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখতিয়ার ও অধিকারও থাকে না।
খালেদা জিয়া বলেন, ৫ জানুয়ারির কলঙ্কিত ও প্রহসনের নির্বাচনের আগে ভারতের তৎকালীন সরকার বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়ে খুবই ন্যক্কারজনকভাবে হস্তক্ষেপ করেছিল। তদানীন্তন বিদেশ সচিব বাংলাদেশ সফরে এসে ক্ষমতাসীনদের প্রহসনের নির্বাচনের নীল-নকশা বাস্তবায়নে প্রকাশ্যে যে ভূমিকা পালন করেছিলেন তা কারো অজানা নয়। সে কারণে বাংলাদেশের অধিকাংশ নাগরিক মনে প্রাণে বিশ্বাস করে যে, নির্বাচনী প্রহসনের মাধ্যমে ভারতের বিগত সরকারই আওয়ামী বলয়ের শাসন ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করার ক্ষেত্রে সরাসরি সহায়তা করেছে এবং তাদের প্রত্যক্ষ সমর্থনেই এদেশের জনবিচ্ছিন্ন সরকার ক্ষমতায় টিকে রয়েছে।
খালেদা জিয়া বলেন, জনগণ মনে করে, ক্ষমতাসীন সরকার ভারতের সাথে কোনো চুক্তি বা সমঝোতার ক্ষেত্রেই জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণ করতে পারেনি বা করেনি। তারা কেবল কৃতজ্ঞতার ঋণই ক্রমাগত শোধ করে চলেছে। শেখ হাসিনা বলেছেন, এই সফরে তিনি তৃপ্ত। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ এই সফরের ফলাফলে তৃপ্ত তো নয়ই বরং আতঙ্কিত। তারা জাতীয় স্বার্থবিরোধী একগাদা চুক্তি ও সমঝোতা চায়নি। হিসাবের পাওনা চেয়েছে।
তিনি বলেন, এই সফরে প্রতিরক্ষা বিষয়ক কোনো চুক্তি ও সমঝোতা সই না করার ব্যাপারে সফরের আগেই বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে একটি জাতীয় ঐক্যমত গড়ে উঠেছিলো। আমরাও এ ধরনের কোনো চুক্তি স্বাক্ষর না করার দাবি জানিয়েছিলাম। তা সত্ত্বেও জনসাধারণের মতামতকে উপেক্ষা করে এ ধরনের স্পর্শকাতর বিষয়ে বেশ কয়েকটি সমঝোতা স্মারক সই করা হয়েছে। এর সুদূরপ্রসারী বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে বলে বাংলাদেশের জনগণের সাথে আমরাও শংকিত।
তিনি বলেন, অনেক বিষয়েই ক্ষমতাসীনদের সাথে আমাদের মতবিরোধ ও দ্বন্দ্ব রয়েছে। তা সত্বেও জাতীয় স্বার্থ, মর্যাদা ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে এবং জাতীয় নিরাপত্তার সাথে সম্পর্কিত প্রথা ও প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাতন্ত্র বজায় রাখার বিষয়ে আমরা সবাই মিলে একটি অভিন্ন অবস্থান গ্রহণের পক্ষে। ভারত সফরকালে শেখ হাসিনা এসব বিষয় সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে দৃঢ় ভূমিকা পালন করলে আমরা অকুণ্ঠ চিত্তে তার সেই ভূমিকার প্রতি সমর্থন জানাতাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তিনি তা করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। বরং তিনি বাংলাদেশকে ভারতের সামরিক পরিকল্পনার অংশ করে এসেছেন।
ভারতের সাথে কোনো বৈরিতা নেই
খালেদা জিয়া বলেন, ভারতের সাথে আমাদের কোনো বৈরিতা নেই। অগণিত প্রাণদান ও ত্যাগের বিনিময়ে আমাদের জাতীয় স্বাধীনতা অর্জনের ক্ষেত্রে ভারতের সহযোগিতার কথা আমরা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করি। সেই স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলতে বৃহৎ প্রতিবেশী ভারতের সাথে অর্থনীতি, বাণিজ্য, পানিসম্পদ, জ্বালানিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা এবং আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাবলীর নিরসনের নীতিতে আমরা বিশ্বাসী। ভারতের জনগণের সাথে শান্তি ও সহযোগিতার আবহে আমরা পাশাপাশি বাস করতে চাই। কিন্তু একটি গণতান্ত্রিক দেশ হওয়া সত্বেও প্রতিবেশী বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ব্যাহত করতে ভারতের বিগত শাসকদের একতরফা ভূমিকায় বাংলাদেশের মানুষ ক্ষুব্ধ। আমরা আশা করি ভারতের বর্তমান সরকার অতীতের সেই ভুল থেকে বেরিয়ে এসে বাংলাদেশের গণতন্ত্রপ্রিয় জনগণের মনোভাবের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবেন।
তিনি বলেন, গণবিচ্ছিন্ন কোনো পক্ষের সাথে কোনো চুক্তি করা বা চাপিয়ে দেয়াই বড় কথা নয়। মানুষের সমর্থন ছাড়া কোনো সমঝোতা বা চুক্তিই যে কেবল গায়ের জোরে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়, তার প্রমাণ নিকট ইতিহাসেই রয়েছে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ‘শান্তিচুক্তি’ নামে স্বাক্ষরিত ২৫ বছর মেয়াদি চুক্তি সরকার পরিবর্তনের পর দীর্ঘকাল যে একটি কাগুজে দলিলে পর্যবসিত হয়েছিল তা আমরা দেখেছি।
তিনি বলেন, জাতিকে অন্ধকারে রেখে, জনগণের মতামত যাচাই না করে দু’দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে চুক্তি বা সমঝোতা করে অবিশ্বাস আরো ঘণীভূত করা হয়েছে।
তিস্তার ফায়সালা ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকেই করতে হবে
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, তিস্তার পানি বণ্টনের বিষয়টি দুই সার্বভৌম দেশের মধ্যকার বিষয়। এজন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকেই বিষয়টি ফয়সালা করতে হবে। তৃতীয় পক্ষ হিসেবে ভারতের একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে দুই দেশের মধ্যেকার আলোচনায় সংশ্লিষ্ট করায় বাংলাদেশের সার্বভৌম মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রতিরক্ষা খাতে দেয়া ৫০ কোটি ডলারের সহায়তার আওতায় ভারত কোনো ধরনের সমরাস্ত্র সরবরাহ করবে জানতে চাওয়া হলে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সাংবাদিকদের বলেছেন যে, এখনও এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা হয়নি, তবে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পছন্দকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। এ থেকেই বোঝা যায় যে, শেখ হাসিনা যাই বলুন না কেন একমাত্র ভারতই হবে ওই ঋণের আওতায় একমাত্র অস্ত্র সরবরাহকারী।
তিনি বলেন, এই সফরে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা প্রশিক্ষণ বিষয়ক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে যেভাবে ভারতের সম্পর্ক প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করা হয়েছে, তার ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের সিলেবাস, কারিকুলাম ও অন্যান্য স্পর্শকাতর বিষয়াদি অযাচিত হস্তক্ষেপের মুখে পড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন।
তিনি বলেন, এ সফরে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস করার জন্য যে শুল্ক ও অশুল্ক বাধাগুলো দূর করা প্রয়োজন, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো পদক্ষেপই গ্রহন করা হয়নি।
পাট রফতানির ক্ষেত্রে ভারত যে এন্টি-ডাম্পিং ক্লজ প্রয়োগ করে থাকে তা তুলে নেয়ার ব্যাপারেও প্রধানমন্ত্রী কিছুই করতে পারেননি। সফর শেষে প্রকাশিত দু’দেশের যৌথ ইশতেহারে সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার কথা বলা হলেও এই প্রতিশ্রুতি অতীতের মতোই অন্ত:সারশূন্য হয়ে থাকবে বলে আমাদের আশঙ্কা। বাংলাদেশের প্রস্তাবিত গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্পের ব্যাপারে ভারতের সম্মতি আদায়ে ব্যর্থ হয়ে শেখ হাসিনা এখন এই প্রকল্পের উপযোগিতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন। এখন আরো পিছিয়ে গিয়ে প্রকল্পটির স্থান পরিবর্তন এবং নতুন করে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ভারতীয় প্রস্তাব তিনি মেনে নিয়েছেন।
খালেদা জিয়া বলেন, দেশে জনসমর্থিত ও গণতান্ত্রিক কোনো সরকার না থাকলে তাদের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়ে কোনো রাষ্ট্রের কাছ থেকে জাতীয় স্বার্থ আদায় করে আনা সম্ভব নয়। সে কারণেই বর্তমান প্রশ্নবিদ্ধ সরকার যতই বন্ধুত্বের বুলি আওড়াক না কেন, প্রতিবেশী ভারতের কাছ থেকেও সমমর্যাদার ভিত্তিতে জাতীয় স্বার্থ আদায় করতে তারা পারেনি, পারবেও না।
তিনি বলেন, চুক্তি ও সমঝোতাগুলো প্রকাশ করার বদলে প্রধানমন্ত্রী তার নিজের উপর আস্থা রাখতে বলেছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, তার উপর আস্থা রেখে দেশবাসী আজ পর্যন্ত কোনো কিছুই অর্জন করতে পারেনি। বরং ভোট দেয়ার অধিকারসহ বিভিন্ন অধিকার হারিয়েছে। তার ওপর আস্থা রেখে অতীতে জনগণ দেখেছে তিনি একের পর এক জাতীয় স্বার্থবিরোধী অসংখ্য চুক্তি করেছেন। ভারতকে একতরফাভাবে কেবল দিয়েই এসেছেন। বিনিময়ে কিছুই আনতে পারেননি।
এবারেও জনগণ চরম হতাশা ও বেদনার সাথে লক্ষ্য করেছে, নিরাপত্তা সহযোগিতা, অস্ত্র ক্রয়, লাইন অব ক্রেডিট ঋণ, পারমাণবিক প্রকল্পে সহযোগিতা, ডিজেল ও বিদ্যুৎ আমদানি, কানেকটিভিটি বৃদ্ধি, মহাকাশ সহযোগিতা ও সাইবার নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিনি যে সব চুক্তি ও সমঝোতায় সই করেছেন তাতে বাংলাদেশের ওপর ভারতের সামরিক, রাজনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক আধিপত্যই কেবল বাড়বে।
সরকারের সাফল্য দাবি অসত্য ও একতরফা
খালেদা জিয়া বলেন, শেখ হাসিনা তার সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন বিষয়ে তার এবং তাদের সরকারের যেসব সাফল্য দাবি করেছেন সেগুলোর বেশির ভাগই অসত্য ও একতরফা।
তিনি বলেন, সরকার একটি ধারাবাহিকতা। আমাদের সরকারের কিছু উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে তিনি সেগুলো বাস্তবায়নের একতরফা সাফল্য দাবি করেছেন।
এসময় তিনি প্রতিরক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নে শহীদ জিয়াউর রহমান এবং বিএনপি সরকারের অবদানের বথা উল্লেখ করেন।
আমদানিকারক দেশ থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করলে মানে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে
খালেদা জিয়া বলেন, আমাদের সশস্ত্রবাহিনী এখন বিভিন্ন দিক দিয়ে আন্তর্জাতিক উচ্চমান অর্জন করেছে। কোনো অস্ত্র আমদানিকারক দেশ থেকে এই বাহিনীর জন্য অস্ত্র সংগ্রহ করলে সেই মানের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে রাশিয়ার সাথে বাংলাদেশের চুক্তি রয়েছে। এক্ষেত্রে তৃতীয় কোনো দেশের সম্পৃক্ততার ফলে বাংলাদেশের জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। বিচার বিভাগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জিত মান ও স্বাতন্ত্র্য সমঝোতার নামে ব্যাহত হতে পারে বলেও সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন।
প্রধানমন্ত্রী ধর্ম নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছেন
খালেদা জিয়া বলেন, দেশের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের অনুভূতিকে এক্সপ্লয়েট করার জন্য শেখ হাসিনা ভারত সফরের আগে আলেম সম্মেলন করেন। ফিরে এসে আবার হেফাজতে ইসলাম প্রভাবিত কওমী মাদরাসার ওলামায়ে কেরামদের সাথে বৈঠক করেছেন। আলেমদের সাথে তার অতীত আচরণ এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের ওপর ক্রমাগত আঘাতের কথা দেশবাসী নিশ্চয়ই ভুলে যায়নি। এখন তিনি নিজেই ধর্ম নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছেন। অতীতেও ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করার লক্ষ্যে দেশে ইসলামী শরিয়তী আইন চালুর জন্য একই ধর্মভিত্তিক দলের সাথে চুক্তি করেছিলেন। এখন কওমি মাদরাসা সনদকে স্বীকৃতি দেয়ার কথা বলে ধোঁকা দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, বিএনপি সরকার দায়িত্বে থাকার সময় মাদরাসা শিক্ষার আধুনিকায়ন করা হয়েছিলো। ২০০৬ সালে কওমি মাদরাসা সনদের স্বীকৃতি আমাদের সরকার দিয়েছিল। সেটা গেজেট নোটিফিকেশনও হয়েছিল। পরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তা কার্যকর হয়। গত ১১ বছরে মাদরাসা-বিরোধী সরকারগুলোর নেতিবাচক মনোভাবের কারণে বিষয়টি আর এগুতে পারেনি।
বিদেশীদের ক্ষমতায় বসানোর অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা
খালেদা জিয়া বলেন, শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে বিদেশীরা এদেশে বিএনপিকে ক্ষমতায় বসাতে চক্রান্ত করেছিল বলে আবারো সম্পূর্ণ অসত্য অভিযোগ করেছেন। এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তিনি বলেন, বিদেশে আমাদের বন্ধু আছে কিন্তু কোনো প্রভু নেই। বিদেশী চক্রান্তে নয়, জনগণের ভোটেই বিএনপি সবসময় রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে। বরং আওয়ামী লীগই ভোট ছাড়া বিদেশী মদত নিয়ে ক্ষমতায় আসার খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
সশস্ত্রবাহিনীকে রাজনৈতিক স্বার্থে বিএনপি ব্যবহার করেনি
খালেদা জিয়া বলেন, শেখ হাসিনার অভিযোগের জবাবে আমি বলতে চাই, সশস্ত্রবাহিনীকে রাজনৈতিক স্বার্থে বিএনপি কখনো ব্যবহার করেনি। তারাই করেছেন। তারা সশস্ত্র বাহিনী সদস্যদের বাধ্যতামূলকভাবে একমাত্র রাজনৈতিক দল বাকশাল-এর অন্তর্ভূক্ত করেছিলেন। জেনারেল এরশাদ ও মঈনের ক্ষমতা দখল এবং জেনারেল নাসিমের সামরিক অভ্যূত্থান প্রচেষ্টায় তারাই প্রকাশ্য সমর্থন দিয়েছিলেন। কাজেই নিজেদের অপরাধ অন্যের কাঁধে চাপিয়ে তারা পার পাবেন না।
আপ্যায়নের চাইতে ন্যায্য পাওনা জানতে চায় মানুষ
বিএনপি প্রধান লিখিত বক্তব্যের শেষ দিকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভারত সফরকালে শেখ হাসিনাকে কে স্বাগত জানালো, কোথায় রাখা হলো, কেমন সংবর্ধনা দেয়া হলো, তার এবং তার পিতার কী কী প্রশংসা করা হলো তাতেই বাংলাদেশের জনগণ খুশি নয়। বাংলাদেশের মানুষ আপ্যায়নের চাইতে তাদের ন্যায্য পাওনা কী এসেছে সেটা জানতে চায়। সেটা চুক্তি বা সমঝোতা স্মারকের সংখ্যা ও বন্ধুত্বের কথামালার উপর নির্ভর করে না। দুর্ভাগ্যের বিষয় এইসব জমকালো আনুষ্ঠানিকতার আড়ালে বাংলাদেশ যে বঞ্চিত ছিলো সেই বঞ্চিতই থেকে গেলো। বাংলাদেশ আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলো।
তিনি বলেন, দু’দেশের যৌথ ইশতেহারে যে গণতন্ত্রের কথা বলা হয়েছে বাংলাদেশে এখন সেই গণতন্ত্র নেই। জনগণের কোনো অধিকার নেই। আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার নেই। জনগণ তাদের অধিকার ও গণতন্ত্র ফিরে পাবার জন্য সংগ্রাম করছে। গণতান্ত্রিক ভারতের অবস্থান সেই গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার পক্ষে থাকবে সেটাই সবার প্রত্যাশা। তাহলেই দু’দেশের জনগণের মধ্যে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা আরো দৃঢ় ও ফলপ্রসূ হবে।
দেশ বিরোধী চুক্তির প্রতিবাদে কোনো কর্মসূচি দেবেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, তারা কর্মসূচির মধ্যেই আছেন। এই সংবাদ সম্মেলনও এ কর্মসূচিরই অংশ।
২০০১ সালের নির্বাচনে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ বিএনপিকে ক্ষমতায় বসিয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আর্কষণ করা হলে তিনি বলেন, জনগণের ভোটেই বিএনপি ক্ষমতায় ছিলো, কারো হস্তক্ষেপে নয়। আগামীতেও বিএনপি কারো হস্তক্ষেপ চায় না।
ক্ষমতায় থাকতে বিএনপি চীনের সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছিল, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের সামরিক বাহিনী চীনের অস্ত্র ব্যবহার করতেই অভ্যস্থ। তাদের অস্ত্র আধুনিক। আমরা পুরনো অস্ত্র কিনিনি। আর আমরা যখন চুক্তি করেছি, তখন সশস্ত্রবাহিনীর সাথে আলোচনা করেই করেছি। এখন যারা অস্ত্র আমদানী করে, তারা কিভাবে অস্ত্র রফতানী করবে।
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বিএনপি আন্দোলন করছে, আগামীতেও আন্দোলন হবে বলে জানান বিএনপি প্রধান।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ও ২০ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র: নয়াদিগন্ত
Discussion about this post